বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এক সময়ের প্রভাবশালী পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন মনোয়ার। তিনি চাকরিতে থাকাকালে তার ছেলে ইশতিয়াকও পাইলট হিসেবে যোগদান করেন। বাবা অবসরে যাবার পর ইশতিয়াক এখন বিমানের সিনিয়র ক্যাপ্টেন। এখন আবার তার ছেলে মো. সাদিফ হোসেনও বিমানের পাইলট হবার জন্য আবেদন করেছেন এবং এটা নিশ্চিত যে, সাদিফের নিয়োগও কেউ ঠেকাতে পারবেন না। এ নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। তবে এবারও অতীতের অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষার মতোই বিতর্ক দেখা দিয়েছে। জনকণ্ঠের করা প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
শুরুতেই বৈষম্যের অভিযোগ এনে কয়েকজন প্রার্থী আদালতের শরণাপন্ন হন। বিমানের সিনিয়র বেশ কয়েকজন পাইলট অভিযোগ করেন, এবারের নিয়োগে ক্যাপ্টেন ইশতিয়াকের ছেলের নিয়োগ ঠেকানোর শক্তি কারোরই নেই। অতীতের মতো সব পাইলটের আত্মীয়-স্বজনদের মতোই এবারও তার চাকরি হবে। এভাবে বিগত পাঁচ দশক ধরে বিমানের ক্যাপ্টেন নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে পরিবারতন্ত্র কায়েম হয়েছে।
জানা গেছে, বিমানে বর্তমানে পাইলট ১৭০ জন। তাদের মধ্যে ৬০ জনই একে অপরের আত্মীয়। তাও আবার পাতানো আত্মীয় নয়, একেবারে রক্তের সম্পর্ক। যেমন-পাইলটের ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি, ভাই-ভাতিজি, শ্যালক দুলাভাই, মামা-ভাগ্নে ও খালা-খালু।
পৃথিবীতে এমন আরেকটা এয়ারলাইন্স খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে পাইলটদের আত্মীয়-স্বজনদের এতবড় বন্ধন থাকে! বিমানের মতো আন্তর্জাতিক মানের একটি এয়ারলাইন্সের পাইলট পদে কীভাবে এত আত্মীয়-স্বজন চাকরিরত! কারা এজন্য দায়ী?
জনকণ্ঠের দীর্ঘ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিমানের পাইলট নিয়োগ, পদোন্নতি, বেতন-ভাতাদি নিয়ে চলছে তুঘলকি কা-। পাইলটরা একটা ম্যানুয়েল তৈরি করে নিয়েছে, যাতে তাদের আত্মীয়-স্বজনকে নিরাপদে, নির্বিঘেœ পাইলট বানিয়ে নিয়োগের সুযোগ থাকে। বাবা বিমানের পাইলট হয়ে থাকলে, ছেলের পক্ষে পাইলট হওয়াটা মামুলি ব্যাপার। মামা পাইলট, তাই ভাগ্নেও হয়ে যায়। বাপ-চাচা যদি পাইলট হয়, তাহলে ভাতিজার চাকরি ঠেকায় কে? এমন উদাহরণও কম নয়।
এমনই একজন বিমানের প্রভাবশালী ক্যাপ্টেন মাকসুদ। তার ছেলের বড় শখ ছিল পাইলট হবার। ছেলে শুধু ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তাতেই হয়ে গেল। বাবা পাইলট, চাচা ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ বিমানের এমডি। আর কী লাগে! হঠাৎ একদিন এই ছেলে বিমানে ঢুকে গেল ক্যাডেট পাইলট হিসেবে। আর স্বামী যদি পাইলট হন, তাহলে স্ত্রীর ন্যূনতম যোগ্যতা না থাকলেও পাইলট হয়ে যেতে পারেন। তার জ্বলন্ত উদাহরণ- ফার্স্ট অফিসার সাদিয়া। শুধু বিমান কেন, বিশে^র যে কোনো এয়ারলাইন্সেই পাইলট হতে গেলে বিজ্ঞানে উচ্চমাধ্যমিক (ম্যাথমেটিক্স ও ফিজিক্সসহ) পাস হতে হয়।
কিন্তু সাদিয়া এসবের কোনো তোয়াক্কাই করেননি। তিনি মানবিক শাখায় উচ্চ মাধ্যমিক পাসের সনদ দিয়ে ঢুকে যান বোয়িং ৭৭৭- এর ফার্স্ট অফিসার হিসেবে। ২০২১ সালের ওই ঘটনা সিভিল এভিয়েশানের তদন্তে ফাঁস হওয়ার পর দেশে-বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়। পরে বিমান থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়। ওই কেলেঙ্কারির তদন্তে দেখা যায়, সাদিয়ার স্বামী ক্যাপ্টেন সাজিদ তখন বিমানের গুরুত্বপূর্ণ (পাইলট প্রশিক্ষণ) শাখার দায়িত্বে ছিলেন।
স্ত্রী পরীক্ষা দেবে, সেটার প্রশ্ন যদি স্বামী নাই করে দিতে পারেন, তাহলে এ জীবন রেখে লাভ কী! এমন চেতনা থেকেই তিনি সব করে দেন। প্রশ্ন তৈরি করেন, পরীক্ষার তদারকি করেন, আরও কত কী! তারপর রুট ট্রেনিংয়ে সাদিয়া বারবার খারাপ করেন, তখন সাজিদ নিজেই তার ফ্লাইটে রুট ট্রেনিংয়ে গিয়ে ইনস্ট্রাক্টরের দায়িত্ব নিয়ে তাকে পাস করানোর গুরুদায়িত্ব পালন করেন। ফলে স্ত্রীকে বের করে দেওয়া হয় আর স্বামীকে গ্রাউন্ডেড করা হয়।
বিমানের পাইলট নিয়োগের এমন কেলেঙ্কারির নজির থাকার পরও কীভাবে আবার চলমান নিয়োগের দায়িত্বও তাদের দিয়ে করা হচ্ছে- এমন প্রশ্ন রেখেছেন কয়েকজন পরীক্ষার্থী। চলমান পাইলট নিয়োগের একজন প্রার্থী বলেন, এবারও পাইলটরাই প্রশ্ন করবেন, খাতাও দেখবেন। এটা কেন? বিমানবাহিনী দিয়ে অন্তত এই পরীক্ষাটা নিয়ে একটা সততার নজির গড়তে তো পারে বিমান!
পাইলট নিয়োগের আরেক বড় নজির গড়েছেন সাবেক এমডি ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক। তিনি যে কায়দায় তার ভাতিজাকে পাইলট বানিয়েছেন, সেটা ছিল চরম অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতি ও অনৈতিক কা-ের স্বাক্ষর। বিমানের ইতিহাসে এতবড় নিয়োগ কেলেঙ্কারি আর ঘটেনি। পরিস্থিতি এতটাই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে যে, দুদক এ ঘটনায় তদন্ত করে সত্যতা পেয়ে চার্জশিট দেয়। তাতে তার চাকরি চলে যায়, সেই মামলায় মোসাদ্দেক জেলও খাটেন। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন।
বিমানের যত পাইলট নিয়োগ হয়েছে, দুই-একটা বাদ দিয়ে সবই এ কায়দায়ই হয়েছে। পাইলট নিয়োগে কীভাবে জালিয়াতি ও অনিয়ম করা হয় জানতে চাইলে বিমানের একজন পাইলট বলেছেন, এ নিয়োগটা হয় কয়েক বছর পর পর, যখন পাইলটদের ছেলে-মেয়েরা ন্যূনতম যোগ্যতা অর্জন করেন। যতদিন পর্যন্ত তাদের ছেলে-মেয়েরা অপ্রাপ্তবয়স্ক কিংবা ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করে সিপিএল না পাবে, ততদিন কোনো ধরনের নিয়োগ পরীক্ষা হয় না।
এজন্যই দেখা গেছে, বিমানের প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো পাইলট নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলোতেই বেশ ক’জন পাইলটের ছেলে-মেয়ে বা নিকটাত্মীয় অংশ নিয়ে চাকরি পেয়েছেন। ঠিক এই পদ্ধতিতে চাকরি পেয়েছেন ক্যাপ্টেন মনোয়ারের ছেলে ইশতিয়াক, ক্যাপ্টেন রফিকের ছেলে ফার্স্ট অফিসার জুনায়েদ রফিক, ক্যাপ্টেন নাছিমের ছেলে ফার্স্ট অফিসার ইসমাম, ক্যাপ্টেন বেলালের ছেলে ফার্স্ট অফিসার মুনিম, ক্যাপ্টেন মাকসুদের ছেলে ফার্স্ট অফিসার মুকতাদির, ক্যাপ্টেন কামাল মাহবুবের ছেলে ফার্স্ট অফিসার তাজিন মাহমুদ, ক্যাপ্টেন মফিদের ছেলে ফাস্ট অফিসার মাসফিক, ক্যাপ্টেন মাজেদের ছেলে এএইচ মেহেদী, ক্যাপ্টেন শোয়েব আলীর ছেলে জাহিদ, ক্যাপ্টেন শাহাবের ছেলে তাপস, ক্যাপ্টেন মফিদের ছেলে মাইনুল, ক্যাপ্টেন কামাল সাহিদের ছেলে ওয়াজিদ, ক্যাপ্টেন মারুফের ছেলে ওয়াজ, ক্যাপ্টেন রাফির ছেলে রাশেদ রাফি, ক্যাপ্টেন দোজার মেয়ে সাফা, ক্যাপ্টেন আশরাফের ছেলে আব্বাস, ক্যাপ্টেন নাজমুল হকের ছেলে সাজ্জাদ।
অন্যান্য আত্মীয় হলেন ক্যাপ্টেন তেকাপের ভাই ফার্স্ট অফিসার ইরফান, ক্যাপ্টেন মুনতাসিরের ভাগ্নে ফার্স্ট অফিসার ইমতিয়াজ রেজা, ক্যাপ্টেন তানিয়ার দুই খালাত ভাই ফার্স্ট অফিসার আরমান ও ফার্স্ট অফিসার আবরার, ক্যাপ্টেন নোমানের ভাই ক্যাপ্টেন ফারিয়াল, ক্যাপ্টেন মুনতাসিরের ভাগ্নে ফার্স্ট অফিসার তাজিন মাহমুদ, ক্যাপ্টেন এনাম তালুকদারের ভাগ্নে ফার্স্ট অফিসার সারা, আরেক ভাগ্নে ফার্স্ট অফিসার নাদিম, ক্যাপ্টেন রফিকের ভাতিজা ক্যাপ্টেন আতিয়াব। রয়েছেন কয়েক দম্পতিও। তারা হলেন ক্যাপ্টেন সাদাতের স্ত্রী ক্যাপ্টেন সুমাইলা, ক্যাপ্টেন ইমরানের স্ত্রী ক্যাপ্টেন আলেয়া, ক্যাপ্টেন জাহিদের স্ত্রী ক্যাপ্টেন ফারিয়াল, ক্যাপ্টেন ইশতিয়াকের স্ত্রী ক্যাপ্টেন সাহানা।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, বিমানের চলমান নিয়োগের জন্য আবেদন চাওয়া হয় গত ২৯ এপ্রিল। তাতেও লেখা হয়, ক্যাডেট পাইলট। অথচ এখানে চাওয়া হয়েছে কমার্শিয়াল লাইসেন্স অর্থাৎ রেটেড পাইলট, যা বিজ্ঞাপনের সঙ্গে পদের কোনো সঙ্গতি নেই।
জানা গেছে, চলমান নিয়োগেও বিমানের ক্যাপ্টেনদের ছয়জন ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন ও স্ত্রীর মতো আত্মীয়-স্বজনরাও আবেদন করেছেন। তারা হলেন ক্যাপ্টেন ইশতিয়াকের ছেলে সাদিফ হোসেন, ক্যাপ্টেন কাদেরের স্ত্রী বুশরা সিদ্দিকা, ক্যাপ্টেন বেলালের ছেলে মোহাম্মদ শায়েখ, ক্যাপ্টেন হাসনাইনের মেয়ে শারমীন চৌধুরি, অপর এক ক্যাপ্টেনের মেয়ে তাসফিয়া ইকবাল।
এ সম্পর্কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের এক পাইলট বলেন, এবারও পাইলটদের আত্মীয়-স্বজন যারাই আবেদন করেছেন, তাদের সবারই চাকরি হয়ে যাবে নিশ্চিত। কেউ তাদের নিয়োগ ঠেকাতে পারবেন না।
বিমানের মানবসম্পদ শাখা সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত যত নিয়োগ হয়েছে, পাইলটদের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি হয়েছে সাবেক এমডি ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদের ছোট ভাই ক্যাপ্টেন মাকসুদের ছেলে মুকতাদিরের নিয়োগে। ২০১৮ সালের ওই পরীক্ষায় প্রথমে (লিখিত) পাস মার্ক ধরা হয়, তাতে তার ভাতিজা উত্তীর্ণ হয়নি। পরে সেটা কমিয়ে তার ভাতিজার পাসের পয়েন্টে নিয়ে আসা হয়। তারপর মৌখিক ডাকা হয়, সেখানে নিজে উপস্থিত থেকে তাকে সর্বোচ্চ নম্বর দিয়ে পাস করানো হয়।
এ নিয়ে তখন বিমানে হুলস্থূল পড়ে যায়। তোলপাড় দেখা দেয় গণমাধ্যমে এ কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ায়। তারপর দুদক তদন্তে নেমে কেলেঙ্কারির সত্যতা পায় এবং তদন্ত শেষে চার্জশিট দেয়। এতে ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদের চাকরি চলে যায়। কারাগারেও যেতে হয় তাকে। ঢাকার একটি আদালতে এখন বিচারাধীন সেই মামলা।
জানা গেছে, ওই নিয়োগ পরীক্ষাতেও বিমানের ক’জন পাইলটের আত্মীয়-স্বজন অংশ নেন। বিমানের বাইরের একটি সরকারি সংস্থার মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষাটা নেওয়া হলেও প্রশ্ন তৈরি করে দিয়েছিল বিমানের ক’জন পাইলট। তিন সেট প্রশ্নপত্র বাইরের সংস্থার কাছে পাঠিয়ে, সেগুলো নিজেদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে ফাঁস করে দেয়। তাতে সবাই উতরে যান। আরও অভিযোগ ছিল, তিন সেট প্রশ্ন তৈরি করা হলেও সেগুলোর পার্থক্য ছিল উনিশ-বিশ। ফলে একটি সেট ফাঁস করলেও তাতে পাসের যথেষ্ট সুযোগ ছিল।
এভাবেই বিমান গত ১৫ বছর ধরে পাইলট নিয়োগ করে আসছে। এর আগে ছিল আরও সহজ। বিমানের লোকই প্রশ্ন করত, বিমানেই পরীক্ষা হতো। তাতে তাদের স্বজনদের নিয়োগ নিশ্চিত করেই বাকিদের নেওয়া হতো কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে। এমনকি ক্যাপ্টেন কামাল মাহবুবের ছেলে লিখিত পরীক্ষায় পাস করার পর তৎকালীন বিমানমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে নগদ এক কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে পাইলট হওয়ার সুযোগ পান। এ ঘটনা বিমানের সবার মুখে মুখে উচ্চারিত হয়।
জানা গেছে, এবারও তুচ্ছ অজুহাতে মেধাবী কয়েকজন আবেদনকারীকে কৌশলে নিয়োগে কল করা হয়নি। পরে তারা উকিল নোটিস দিলেও বিমান সাড়া দেয়নি। পরে তারা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। তাদের একজন জানালেন, এবারও বিমানের পাইলট নিয়োগে মূল ভূমিকা পালন করছেন পাইলটরা। এটা বিমানের মানবসম্পদ শাখার দায়িত্ব হলেও অতীতের মতোই পাইলটরাই আবেদন যাচাই-বাছাই করে যাকে ইচ্ছা বাদ দিয়েছে, যাকে ইচ্ছা তালিকাভুক্ত করেছে। তারাই প্রশ্ন তৈরি করে, তারাই সব পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন। এখানে বিমান ব্যবস্থাপনা বিভাগ কিছু করতে পারছে না।
জানতে চাইলে বিমানের নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. সাফিকুর রহমান বলেন, অতীতে কী হয়েছে না হয়েছে, সেটা নিয়ে আমি বলতে পারব না, বলবও না। তবে এবারের পরীক্ষা হবে খুবই কঠোর শৃঙ্খলায়। যত ধরনের প্রটেকশন নেওয়া দরকার, সেটাই নেওয়া হবে।
বিমানে পাইলটদের পরিবারতন্ত্র গড়ে ওঠার বিষয়টি কি আপনার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয় নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিমানের নিয়োগ প্রথানুযায়ী লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হয়। পরীক্ষার সময় পরীক্ষক কিংবা সংশ্লিষ্টরা তো বুঝতে পারেন না কোন প্রার্থী কোন ক্যাপ্টেনের ছেলেÑমেয়ে। পরীক্ষার খাতায় তো বাবা-মায়ের নাম লেখা থাকে না যেটা দেখে চিহ্নিত করা যাবে। এখন কোনো পাইলটের আত্মীয়-স্বজন যদি মেধার জোরে পাস করে চাকরি পেয়ে যায়, সেটাতে কেউ বাধা দিতে পারে না।
বিমানে এভাবে পাইলটদের ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে পরিবারতন্ত্র তৈরি করার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দেশের এভিয়েশান বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, একটি উড়োজাহাজের সেফটি সিকিউরিটির ৮০ ভাগ নির্ভর করে ককপিট ক্রু অর্থাৎ পাইলটদের ওপর। এজন্য বিশ্বব্যাপী পাইলট নিয়োগ করা হয় কঠোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে। কিন্তু বিমানে যেটা হচ্ছে, সেটা তো ওপেন সিক্রেট। এখানে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই পাইলট হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন মানবিক শাখায় উচ্চমাধ্যমিক পাস করা নারী বৈমানিক সাদিয়া।
এটা যখন ধরা পড়ল, তখন দেশ-বিদেশে তোলপাড় হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তাকে চাকরিচ্যুত করে বিমান মুখরক্ষা করতে সক্ষম হলেও তার ব্যবস্থাপনার দক্ষতা, সততা, পেশাদারিত্ব ও নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ১৭০ জন পাইলটের মধ্যে যদি ৬০ জনই আত্মীয়স্বজন হয়ে থাকে, তাহলে তো এটা ভয়ংকর সংবাদ। এভাবে তো একটা রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সকে কিছুতেই স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
কাজেই আমি মনে করি, চলমান পাইলট নিয়োগ পরীক্ষা বিমানবাহিনীর মাধ্যমে হওয়া উচিত। বিমান বাহিনী প্রশ্ন করবে, লিখিত ও মৌখিক নিয়ে চূড়ান্ত তালিকা বিমানে পাঠিয়ে দেবে। তাহলেই প্রকৃত যোগ্য ও মেধাবীরাই আসবে। তখন আর কেউ সাদিয়ার মতো মানবিকে উচ্চমাধ্যমিকে পাস করে পাইলট হওয়ার সুযোগ পাবে না।