পূর্ব এশিয়ার দেশ তাইওয়ান। বিশ্বজুড়ে যেখানে শিক্ষাব্যবস্থা বেশ ব্যয়বহুল সেখানে স্বল্প মূল্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা প্রদান করে দেশটি। তাইওয়ানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন , উচ্চ পরীক্ষার ফলাফল এবং উচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের হার প্রচারে ভূমিকার কারণে তাইওয়ানের শিক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত।
কেন পড়বেন তাইওয়ানে
বিশ্বের ৪৩তম শান্তিপূর্ণ দেশ তাইওয়ান। এছাড়া পৃথিবীর শীর্ষ অপরাধমুক্ত দেশগুলোর তালিকার তাইওয়ান চতুর্থ।তাইওয়ানে রয়েছে সেরা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ। তাইওয়ানের শিক্ষা ব্যবস্থার কার্যকর পাঠ্যক্রম ও গবেষণাধর্মী কার্যক্রম নিয়ে তাইওয়ানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় সারিতে।
তাইওয়ানের সেরা ১০ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ
* ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটি ।
* ন্যাশনাল সিং হুয়া ইউনিভার্সিটি।
* ন্যাশনাল চেং কুং ইউনিভার্সিটি।
* ন্যাশনাল ইয়াং মিং চিয়াও তুং ইউনিভার্সিটি।
* ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড-টেকনোলজি।
* ন্যাশনাল তাইপেই ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি।
* ন্যাশনাল তাইওয়ান নরমাল ইউনিভার্সিটি।
* ন্যাশনাল সান ইয়াত-সেন ইউনিভার্সিটি।
* তাইপেই মেডিকেল ইউনিভার্সিটি।
* চাং গুং ইউনিভার্সিটি।
জনপ্রিয় কিছু কোর্সসমূহ
ইঞ্জিনিয়ারিং, টেকনোলজি, সোশ্যাল সায়েন্স, ম্যানেজমেন্ট, ন্যাচারাল সায়েন্স, লাইফ সায়েন্স, মেডিসিন, আর্টস, হিম্যানিটিস, মান্ডারিন চায়নিজ।
যোগ্যতাসমূহ
* স্নাতকের জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বা সমমানের ডিপ্লোমা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
* স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের জন্য স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে।
* ডক্টরাল ডিগ্রির জন্য আবেদনের জন্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হতে হবে।
উচ্চশিক্ষার মাধ্যম
তাইওয়ানের প্রধান ভাষা তাইওয়ানিজ মান্ডারিন ও স্ট্যান্ডার্ড চায়নিজ হলেও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এই ভাষা শেখার প্রয়োজন হয় না। কারণ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত ইংরেজি ভাষার কোর্স। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হতে হয়। আইইএলটিএস স্কোর ৫.৫ থেকে ৬ কিংবা টোয়েফল আইবিটি স্কোর ৭১ থেকে ৮০ থাকতে হয়।
তবে তুলনামূলক আরও কম খরচে পড়াশোনা ও স্কলারশিপের জন্য মান্ডারিন শেখাটা জরুরি। এ ছাড়া মান্ডারিন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে চলাফেরা ও স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার জন্যও তাইওয়ানিজ ভাষার প্রতি আগ্রহী হয় বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা।
আবেদনের সময়কাল
সাধারণত সেপ্টেম্বর (ফল) ও ফেব্রুয়ারি (স্প্রিং) এই দুই মাস তাইওয়ানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তির জন্য আবেদন গ্রহণ করে থাকে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে (ফল) সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কোর্স বাছাইয়ের সুযোগ থাকে।
আবেদন প্রক্রিয়া
তাইওয়ানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির আবেদন অনলাইনে হয়ে থাকে। এর জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই রয়েছে নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্ম। আবেদনের শেষ সময়সহ ভর্তি সুনির্দিষ্ট শর্তগুলো জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট পরিদর্শন করতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
* উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বা সমমানের ডিপ্লোমার সনদ।
* একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট (মার্কশিট)।
*অনলাইনে পূরণকৃত আবেদনপত্র।
* পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
* জাতীয় পরিচয়পত্র।
* পাসপোর্ট।
* ভাষা দক্ষতার প্রমাণ (আইইএলটিএস বা টোয়েফল স্কোর)।
* আবেদন ফি। (বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। আবার কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যেই আবেদন করা যায়)।
* রিকমেন্ডেশন লেটার।
* আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণপত্র।
* স্টাডি প্ল্যান।
* স্টেটমেন্ট অব পারপাস।
* গবেষণার প্রস্তাব (পিএইচডির জন্য)।
স্কলারশিপের সুবিধা
* আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন ও জীবনযাত্রার খরচ মেটানোর জন্য দেশটিতে রয়েছে পর্যাপ্ত স্কলারশিপের সুযোগ। এর মধ্যে তাইওয়ান স্কলারশিপ প্রোগ্রামে রয়েছে ২৫ হাজার এনটিডির (৯৩ হাজার ৫৮২ টাকা) মাসিক উপবৃত্তি।
* তাইওয়ান আইসিডিএফ স্কলারশিপ স্নাতকদের জন্য প্রতি মাসে দিয়ে থাকে ১২ হাজার এনটিডি (৪৪ হাজার ৯২০ টাকা)। আর মাস্টার্সের জন্য বরাদ্দকৃত এ পরিমাণ প্রায় ১৮ হাজার এনটিডি (৬৭ হাজার ৩৭৯ টাকা)। সেই সঙ্গে মাসিক ২০ হাজার এনটিডি (৭৪ হাজার ৮৬৬ টাকা) রাখা হয় পিএইচডির জন্য।
* হুয়াইউ এনরিচমেন্ট স্কলারশিপের মাসিক উপবৃত্তির পরিমাণ ২৫ হাজার এনটিডি (৯৩ হাজার ৫৮২ টাকা)।
খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ
তাইওয়ানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার চলাকালে কাজের সুযোগ রয়েছে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত। তবে এই পার্টটাইম কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। প্রথমটি হলো এলিয়েন রেসিডেন্স সার্টিফিকেট বা এআরসি কার্ড নেওয়া। এটি তাইওয়ানে বসবাসের সময় বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের পরিচয়পত্র, যা দেশটিতে আইনি বসবাসের প্রমাণপত্র। তাইওয়ানে বিমান থেকে নেমেই শিক্ষার্থীদের প্রথম কাজ থাকে এই কার্ডের জন্য আবেদন করা।
দ্বিতীয় প্রয়োজনীয় বিষয়টি হলো ওয়ার্ক পারমিট। এই পারমিটের জন্য শিক্ষার্থীকে ওয়ার্ক ফোর্স ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি বরাবর আবেদন করতে হয়। প্রতিটি পারমিট সাধারণত শুধু এক সেমিস্টার বা ছয় মাসের জন্য বৈধ থাকে। ওয়ার্ক পারমিট বৈধ থাকা অবস্থাতেই সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার আগেই আবার আবেদন করা আবশ্যক।
স্থায়ী হওয়ার সুযোগ
তাইওয়ানে একটানা কমপক্ষে পাঁচ বছর অবস্থান করলে স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করা যায়। এ সময়ের মধ্যে কোনোরূপ অপরাধের রেকর্ড থাকা যাবে না, নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা থাকতে হবে এবং দেশের জাতীয় সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে হবে।