বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে থাকে ইউরোপ, কারণ এখানে নানা ধরনের স্কলারশিপের সুযোগ রয়েছে, যা সরকার ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের তহবিল দ্বারা পরিচালিত হয়। ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এসব স্কলারশিপে আবেদন করতে পারেন এবং তাদের স্বপ্ন পূরণের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে পারেন।
বিশ্বের বিভিন্ন বৃত্তির মধ্যে ইরাসমাস মুন্ডাস অনেক জনপ্রিয় একটি স্কলারশিপ। বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা যে কয়টি মর্যাদাপূর্ণ স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে অধ্যয়ন করতে যান তার মধ্যে ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ অন্যতম। ইরাসমাস মুন্ডাস মাস্টার্স প্রোগ্রামের আওতায় শতাধিক মাস্টার্স প্রোগ্রাম রয়েছে। এই স্কলারশিপ শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতকোত্তর ও জয়েন্ট স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে অধ্যয়নের সুযোগ দেয়। এই স্কলারশিপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর তিন শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৮৫টি প্রোগ্রামে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পান। ২০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী এবং ১ হাজার ৫০০ জনের মতো পিএইচডি শিক্ষার্থী প্রতিবছর এ বৃত্তির মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পান।
গত বছর ১৪৩ দেশের ২ হাজার ৮৩৫ শিক্ষার্থী এ বৃত্তি পেয়েছেন। বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের একটি তালিকা এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে ঢাকার ইউরোপীয় ইউনিয়ন দূতাবাস। টুইটে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি বৃত্তি পাওয়া ২০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে তৃতীয় স্থানে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ১৪০ শিক্ষার্থী এ বৃত্তি পেয়েছেন।
গত বছর সবচেয়ে বেশি ১৯২টি বৃত্তি পেয়েছেন পাকিস্তানের শিক্ষার্থীরা। বৃত্তির সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত। দেশটির শিক্ষার্থীরা ১৭৪টি বৃত্তি পেয়েছেন। তৃতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ। আমাদের দেশের ১৪০ শিক্ষার্থী এ বৃত্তি পেয়েছেন। এরপরই মেক্সিকো ১১৮টি, নাইজেরিয়া ১০৯, ব্রাজিল ৯৬, স্পেন ৭৩, কলম্বিয়া ও ফিলিপাইন ৭২টি করে, মিসর ৭০, ইতালি ৬৯, ইন্দোনেশিয়া ৬৮, চীন ৬৫, যুক্তরাষ্ট্র ৬০, জার্মানি ও ইথিওপিয়া ৫৩টি করে, তুরস্ক ৫২ এবং কাজাখস্তান ৫১টি বৃত্তি পেয়েছে।
এই স্কলারশিপের আওতায় যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে
*মাসে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ ইউরো উপবৃত্তি দেবে (২ বছর);
*শতভাগ টিউশন ফি ওয়েভার দেবে;
*যাতায়াত ভাতা প্রদান করবে;
*সেমিস্টার শেষে এক দেশ থেকে অন্যত্র যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক বিমানের টিকেট দেবে;
এটি অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক স্কলারশিপ প্রোগ্রাম বলে আবেদনকারীদের একাডেমিক ভালো রেকর্ড, ভাষাদক্ষতা ও প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
যেভাবে নেবেন প্রস্তুতি—
স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে হলে অবশ্যই স্নাতক ডিগ্রি (প্রথম ডিগ্রি) অর্জন করতে হবে বা স্নাতক ডিগ্রির শেষ বছরে থাকতে হবে এবং স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার আগেই গ্র্যাজুয়েট হতে হবে। স্নাতক ডিগ্রি না পেলেও স্নাতক সমতুল্য ডিগ্রির সার্টিফিকেট অর্জন করেও ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যাবে। তবে সেই প্রোগ্রামটি অধ্যয়নরত দেশের জাতীয় আইনে স্বীকৃত হতে হবে।
প্রথমেই আইইএলটিএস পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে হবে। সেই সঙ্গে পছন্দের প্রোগ্রামে গবেষণাভিত্তিক কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে প্রার্থীর আবেদন গ্রহণযোগ্যতা পায়, তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়। এ ছাড়া নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কাজের অভিজ্ঞতা সিভিতে যোগ করার জন্য স্নাতক পাসের পূর্বে স্বল্প পরিসরে কাজ করতে পারলে সুবিধা হবে।
যেসব বিষয়ে জানা প্রয়োজন
*স্নাতকের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল না পেলেও আবেদন করা যাবে;
*জিআরই টেস্ট স্কোর জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই;
*কোনো অধ্যাপকের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও চলবে;
*কোনো কাজের অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক নয়;
*১৬ বছর বয়সের পর থেকে আবেদনের জন্য গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে এবং এর পরে বয়সের কোনো বাধানিষেধ নেই;
*কম সিজিপিএ থাকলেও আবেদন করা যাবে (প্রোগ্রামভেদে পূর্বে ২.৫০ থেকে ৩.০০ পর্যন্ত আবেদন গ্রহণযোগ্য হয়েছে);
দরকারি নথিপত্র
*অফিসিয়াল একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট (উচ্চ মাধ্যমিক ও ব্যাচেলর ডিগ্রি বা সমতুল্য);
*লেটার অব মোটিভেশন;
*দুটি রেকমেন্ডেশন লেটার;
*পূরণকৃত আবেদনপত্র;
*পূর্ণাঙ্গ সিভি;
*প্রুফ অব রেসিডেন্স;
*পাসপোর্ট বা আইডি কার্ডের স্ক্যান কপি;
*ইংরেজি ভাষাদক্ষতার সনদ;
ওপরে বর্ণিত সব নথি সংগ্রহ করে রাখতে হবে এবং প্রোগ্রাম বা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো পরামর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারলে সুবিধা হবে। এ ছাড়াও আইইএলটিএস পরীক্ষায় ন্যূনতম ৬.৫ ব্যান্ড স্কোর অর্জন করতে হবে। বিকল্প হিসেবে একটি ইংরেজি ভাষাদক্ষতার সার্টিফিকেট বা ডুয়োলিংগো পরীক্ষার ফলাফলও জমা দেয়া যাবে।
আবেদন যেভাবে—
ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপে আবেদন করতে প্রথমে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে ইরাসমাস মুন্ডাস ক্যাটালগে যেতে হবে। সেখানে প্রত্যেক প্রোগ্রামের নাম ও লোকেশন পাওয়া যাবে। তারপর কোর্স, আবেদন প্রক্রিয়া ও স্কলারশিপ সম্পর্কে আরও তথ্য জানার থাকলে সরাসরি কন্টাক্ট প্রজেক্ট পারসন বাটন প্রেস করে যোগাযোগ করা যাবে।
আবেদনের সময়
ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপের ৩টিতে আবেদনের সময় তিন রকম। যেমন:
১. ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট মোবিলিটি (আইসিএম) অ্যাকশনে আবেদনের শেষ সময় আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি;
২. ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ফর হায়ার এডুকেশন (সিবিএইচই) অ্যাকশনে আবেদনের শেষ সময় ৮ ফেব্রুয়ারি;
৩. ইরাসমাস মুন্ডাস জয়েন্ট মাস্টার্স (ইএমজেএম) অ্যাকশনে আবেদনের শেষ সময় ১৫ ফেব্রুয়ারি;
সম্ভাব্য খরচ
স্কলারশিপ পেলে পরবর্তীতে পড়াশোনাসহ আনুষঙ্গিক খরচের জন্য উপবৃত্তি পাওয়া যায় ঠিকই। তবে স্কলারশিপে আবেদনের জন্য আইইএলটিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, ক্ষেত্রবিশেষে পছন্দকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে ডকুমেন্ট প্রেরণ, পাসপোর্ট-ভিসার জন্য আবেদন, বিমানের টিকেট ইত্যাদির জন্য ন্যূনতম ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ হতে পারে।
এ ক্ষেত্রে বিমানের টিকেট খরচ পরবর্তীতে স্কলারশিপ থেকে রিফান্ড করা হয়। আর পছন্দকৃত দেশের দূতাবাস নিজ দেশে না থাকলে পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়ে ভিসার আবেদন করতে হতে পারে। স্কলারশিপের মেয়াদ শেষে বিদেশে স্থায়ী বা দেশে ফেরত আসার কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায়, কেউ চাইলে চাকরির ব্যবস্থা ও ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে বিদেশে অবস্থান করতে পারবেন।
যেহেতু ইরাসমাস মুন্ডাস মাস্টার্স স্কলারশিপ খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, তাই এর জন্য দীর্ঘ সময় নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রোগ্রামের ওয়েবসাইটে আবেদনকারীদের কোন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হবে সেটা পরিষ্কার বলা থাকে। ‘স্টেটমেন্ট অব পারপাস’-এর ওপর প্রায় সব প্রোগ্রামই জোর দিয়ে থাকে। সব কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রামের চাহিদা মোতাবেক সাজাতে হবে।
চমৎকার লেখালেখি আপনাকে অন্য প্রতিযোগীদের থেকে একধাপ এগিয়ে রাখবে। কোনো নির্দিষ্ট প্রোগ্রামে আবেদনপ্রক্রিয়া সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটরকে ই-মেইল করতে হবে।