বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা নিয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যতম অর্থনীতি সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। দেশটির সাম্প্রতিক লক্ষ্যমাত্রায় রয়েছে ২০৩৩ সালের মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল শহর দুবাইয়ে ৬৫ হাজার কোটি দিরহাম বা ১৭ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণ।
ব্যবসা, কর ও ভিসানীতি সংস্কারের কারণে সাম্প্রতিক দশকে বৈশ্বিক সম্পদ প্রবাহের গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যে পরিণত হয়েছে দুবাই ও আবুধাবির মতো শহরগুলো। যেখানে অবৈধ পথে অর্জিত অর্থের বড় ধরনের বিনিয়োগও হচ্ছে।
২০৩৩ সালের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ নগর অর্থনীতির দেশ হতে চায় ইউএই। উচ্চাভিলাষী এ পরিকল্পনা ঘিরে দুবাই কর্তৃপক্ষের নেয়া কর্মসূচি পরিচিতি পেয়েছে ‘ডি-৩৩’ হিসেবে। এ অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে সামনে রেখে এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্প ও উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ধরা হয়েছে দুবাইয়ের মেট্রো স্টেশনসংলগ্ন এলাকাকে। এ এলাকা ঘিরে একাধিক উন্নয়ন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
দেশটি উপপ্রধানমন্ত্রী ও কার্যনির্বাহী পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান শেখ মাকতুম বিন মোহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাকতুম সম্প্রতি এক বৈঠকে বলেছেন, ‘আমরা একটি সুপরিকল্পিত অর্থনৈতিক মডেল দাঁড় করিয়েছি। এর মাধ্যমে ইউএই বৈশ্বিক বিনিয়োগের শীর্ষ গন্তব্যে পরিণত হবে।’
সম্প্রতি বৈদেশিক বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ১০ বছরের জন্য ২ হাজার ৫০০ কোটি দিরহাম বা ৬৮০ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছে ইউএই সরকার। এর উদ্দেশ্য ডি-৩৩ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ১৭ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করা।
শেখ মাকতুম বলেন, ‘আমরা একটি সমন্বিত, স্বতন্ত্র ও প্রতিশ্রুতিশীল অর্থনৈতিক মডেল তৈরি করেছি। এর আওতায় নীতিনির্ধারণে উন্নত উপাদান ও সক্ষমতা তৈরি, সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র অন্বেষণে বোর্ড গঠন এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগ ও মেধাবীদের আকর্ষণ করা হবে।’
ইউএইর নতুন এ উন্নয়ন মডেলকে পরীক্ষার জন্য ৩ হাজার সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে। শেখ মাকতুম বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করা। একই সঙ্গে দুবাইভিত্তিক আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর বিস্তৃতিতেও সহযোগিতা করা।’
এ উন্নয়ন মডেলে বেশকিছু বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সুবিধাজনক লজিস্টিক অবকাঠামো, কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান ও মেধাবী জনশক্তির সমন্বয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক হাব হিসেবে ইউএইর অবস্থানকে তুলে ধরা।
বৈঠকে বলা হয়, ডি-৩৩ লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে উন্নয়ন পরিমাপে একটি সমন্বিত কাঠামো ব্যবহার ও গৃহীত নীতির কার্যকারিতা মূল্যায়নের পর প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হবে। ফলে নীতিনির্ধারকরা আরো বেশি কার্যকর ও তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
তিনটি প্রধান উপাদানের সমন্বয়ে এ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথমত, প্রায় ৩ হাজার সূচক ব্যবহার করে দেশটির ব্যষ্টিক অর্থনীতি, খাতভিত্তিক উপাত্ত এবং বৈশ্বিক র্যাংকিং ও সূচকের তথ্য সংগ্রহ। দ্বিতীয়ত, সূচকগুলো সম্পর্কে পূর্বাভাস এবং দুবাইয়ের অর্থনীতিতে স্থানীয় ও বৈশ্বিক নীতির প্রভাব বিশ্লেষণের পদ্ধতি। সর্বশেষ ধাপ হলো, অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের উপকরণ ও ইন্টারঅ্যাকটিভ ড্যাশবোর্ডের ব্যবহার, যা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবণতার তত্ত্বাবধান এবং তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
এসব উপাদানের মাধ্যমে নীতিনির্ধারকরা স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবেন। পাশাপাশি নতুন নীতির বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার এবং ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সক্ষম হবেন তারা।
ইউএইর অর্থনীতি ও পর্যটন অধিদপ্তর মডেলটি তত্ত্বাবধান করছে। এর তথ্য ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া অটোমেশনের আওতায় আনতে কাজ করছে দুবাই ডিজিটাল অথরিটি। পরবর্তী সময়ে মডেলটির সক্ষমতা বাড়াতে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।
মডেলটিতে গণপরিবহনের ব্যবহার ৪৫ শতাংশে উন্নীত করা, মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণ ১৬ টনে নামিয়ে আনা এবং গণপরিসরগুলোর মান বাড়িয়ে হাঁটাচলাকে উৎসাহিত এবং ছায়াযুক্ত স্থানের পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
এছাড়া আবাসিক, পরিষেবা, বাণিজ্যিক ও কার্যালয়ের বৈচিত্র্য বাড়াতে মেট্রো স্টেশনগুলোর কাছাকাছি জনবসতি বাড়ানোর লক্ষ্যও নিয়েছে সরকার। ইউএইতে বর্তমানে ৬৪টি স্টেশনের মাধ্যমে ৮৪ বর্গকিলোমিটার এলাকায় মেট্রোরেল পরিচালিত হচ্ছে। ২০৩৩ সালের মধ্যে এ সক্ষমতা ৯৬টি স্টেশন এবং ১৪০ বর্গকিলোমিটারে উন্নীত করা হবে।