জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠক হবে তার। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গেও বৈঠকে করবেন তিনি। নিউ ইয়র্কের এই বৈঠকে ভারত ও বাংলাদেশ বিভিন্ন সংস্কার কর্মকাণ্ডে সহায়তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা আছে।
এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি, মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে রোহিঙ্গা ঢল যেন আর না হয়, সে বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক লেন্স দিয়ে দেখে। ফলে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে দুই শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে আলোচনা হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয়।’
এ অঞ্চলে ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। আবার ঢাকার সঙ্গেও ওয়াশিংটন ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়। ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ভালো সম্পর্কের বিষয়ে তাদের আগ্রহ থাকবে বলে মনে করেন এই কূটনীতিক।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ভারত অস্বস্তিকর অবস্থায় রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও আলোচনা করেছে। ওই আলোচনার যতটুকু প্রকাশ পেয়েছে, তাতে প্রতীয়মান হয় যে বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত।’
এই কূটনীতিক আরও বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলাপকালে প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি উত্থাপন করে ভারতকে নিবৃত্ত করার জন্য অনুরোধ করতে পারেন।’
বাংলাদেশ কী চায়
মার্কিন শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিভিন্ন ধরনের সংস্কার ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টা আলোচনা করবেন।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘এই বৈঠকের বার্তা হচ্ছে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় দুই দেশ। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝানোর জন্য এটি একটি সুযোগ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের প্রেক্ষাপট এবং সরকার-গৃহীত বিভিন্ন খাতে সংস্কার পদক্ষেপগুলো নিয়েও আলোচনা করতে পারবেন প্রধান উপদেষ্টা।’
মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের একটি প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে ঢাকা সফর করেছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বিভিন্ন খাতে সংস্কার নিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে মার্কিন দলের বৈঠক হয়েছে। ভবিষ্যৎ সহযোগিতা আরও বেগবান করার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্ভাব্য এই বৈঠকটি ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।’
তিনি জানান, মিয়ানমারে চলমান সহিংসতার কারণে আবারও রোহিঙ্গা সমস্যা জটিল হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ নিয়েও কথা হতে পারে।
উল্লেখ্য, ৭৯তম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণের জন্য ২৪ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ২৭ সেপ্টেম্বর সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য দেওয়ার পর ওই দিনই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি।
সফরকালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কফ, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস, জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, ইউএসএআইডির প্রশাসকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক নিশ্চিত হয়েছে।