দীর্ঘ সময় ধরে ঘরবন্দি জীবনযাপন চলছে আমাদের। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীজুড়ে সবাই কার্যত ঘরবন্দি সময় কাটাচ্ছে প্রায় তিন মাস। এই সময়ে ভ্রমণ তো দূরের কথা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য জোগাড় করা ছাড়া ঘরের বাইরে বের হয়নি বেশিরভাগ মানুষ। তার পরেও আমরা যারা মাঝেমধ্যে অজানার উদ্দেশে ঘর ছেড়ে যেতাম, তাদের অনেকটা হাঁসফাঁস সময় কাটছে চার দেয়ালের মধ্যে। নানারকম চিন্তাভাবনা করছি, পরিবেশ স্বাভাবিক হলে কোথায় যাওয়া যায়? কীভাবে যাওয়া যায়? একটু মুক্ত বাতাস নেওয়া যায়। তবে চাইলেও এত সহজে কোথাও যাওয়া ঠিক হবে বলে মনে হয় না।
১. নিঝুম দ্বীপ : একই সঙ্গে তিন রকমের ভ্রমণের স্বাদ নেওয়ার এক অপূর্ব সুযোগ হতে পারে নিঝুম দ্বীপ, যাওয়ার পথ একটু লম্বা হলেও। পুরোটা লঞ্চের নির্ধারিত কেবিনে যেতে পারলে ঝুঁকি অনেকটাই কম থাকবে বলে আমার মনে হয়। নিঝুম দ্বীপে যেতে-আসতে আর সেখানে গিয়ে আপনি একই ভ্রমণে পেয়ে যাবেন নদী, সমুদ্র, অরণ্য আর নির্জন গ্রামীণ জীবনের অপরূপ ছবি।
২. হাওড় অঞ্চল : সবকিছু একটু স্বাভাবিক হলে কিছুটা নিরাপদ আর বেশ ঝুঁকিহীন পারিবারিক ভ্রমণ হতে পারে হাওড় অঞ্চলে। নিজেদের গাড়ি থাকলে তো কথাই নেই। একদম হাওড় পাড়ে গিয়ে, আগে থেকে ঠিক করে রাখা একটি জলযানে চেপে বসতে পারেন দুই থেকে তিন দিনের জন্য অনায়াসে।
৩. সোনাদিয়া : একদম নির্জন, কোলাহলমুক্ত আর ঝুঁকিহীন একটি গন্তব্য হতে পারে সোনাদিয়া দ্বীপের মুক্ত বাতাসে কয়েক দিনের ক্যাম্পিং।
৪. নদী ভ্রমণ : পরিবারের সবাই মিলে কয়েক দিনের জন্য মুক্ত হতে বিশুদ্ধ বাতাস পেতে, খোলা আকাশের নিচে বুক ভরে নিশ্বাস নিতে চাইলে বুড়িগঙ্গার তীর থেকে নিজেদের জন্য একটি জলযান ঠিক করে বেরিয়ে পড়তে পারেন দু-এক দিনের জন্য, বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যা-পদ্মা-মেঘনায় ভেসে বেড়াতে।
৬. তেঁতুলিয়া : যাঁরা সবুজ আর চা বাগান পছন্দ করেন, তাঁরা বাস, মাইক্রো বা ট্রেনের কেবিন বুক করে পরিবার নিয়ে চলে যেতে পারেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। নিরাপদ আর আনন্দঘন ভ্রমণের একটা চমৎকার গন্তব্য হতে পারে তেঁতুলিয়া।
৭. লামা অঞ্চল : যাঁরা যেভাবেই হোক একটু পাহাড়ে যেতে চান, তাঁদের জন্য বান্দরবানের লামা অঞ্চল হতে পারে বেশ ঝুঁকিহীন পাহাড়ি এলাকা। কারণ এই এলাকায় মানুষ তুলনামূলক কম যায়। তাই করোনা মহামারির ঝুঁকি কিছুটা হলেও কম থাকবে।
৮. সিটমহল : যেকোনো ট্রেনের কেবিন রিজার্ভ করে উত্তরবঙ্গ গিয়ে, সাইকেল বা দীর্ঘ (টানা দুই দিন বা যতটা লাগবে) সময়ের জন্য অটো রিজার্ভ নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন সিটমহলগুলো। যেখানে খুঁজে পাবেন অলিখিত অনেক ইতিহাস।
৯. দক্ষিণ বাংলা : লঞ্চের কেবিন রিজার্ভ করে দক্ষিণবঙ্গে গিয়ে একটি ট্রলার বা ছোট লঞ্চ রিজার্ভ করে কয়েক দিনের জন্য ঘুরে বেড়াতে পারেন নানা রকম বিলে (সাঁতলা), ঝিলে, নদীতে। এটা হতে পারে একেবারেই নিরাপদ আর ভিন্ন রকমের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা।
১০. সাইক্লিং ও ক্যাম্পিং : যাঁরা বেশ পরিশ্রমী, যাঁদের আছে সমমনা কিছু বন্ধু আর হাতে সময়; তাঁরা দলবেঁধে নেমে পড়তে পারেন পথে। নিজের সাইকেল নিয়ে আর অবশ্যই সব সরঞ্জাম সঙ্গে নিয়ে। যেন থাকা বা খাওয়ার জন্য কারো সংস্পর্শে যেতে না হয়। এমনটা করতে পারলে চলে যেতে পারেন দেশের যেকোনো প্রান্তে অনায়াসে।
সজল জাহিদ