রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ১১:৪০ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের রবিন যেভাবে নাম লেখালেন অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ ধনীদের তালিকায়

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫

অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী বাংলাদশিদের মধ্যে আলোচিত নাম রবিন খুদা। তিনি শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেই পরিচিত নন; গোটা অস্ট্রেলিয়াজুড়ে রয়েছে তার নামডাক। আর রবিন খুদার এই খ্যাতি একজন ধনকুবের হিসেবে।

অস্ট্রেলিয়ায় শীর্ষ গণমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, রবিন খুদার প্রতিষ্ঠান “এয়ারট্রাংক” অধিগ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ব্ল্যাকস্টোন ইনকরপোরেশন ও কানাডা পেনশন প্ল্যান ইনভেস্টমেন্ট বোর্ডের (সিপিপি ইনভেস্টমেন্ট) নেতৃত্বাধীন একটি কনসোর্টিয়াম। আর এক্ষেত্রে তারা এয়ারট্রাংককে প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকার বেশি দিয়েছে। আর তাতে সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে অস্ট্রেলিয়ার ধনকুবেরদের তালিকায় ওপরের দিকে চলে এসেছে রবিন খুদার নাম।

সম্প্রতি এই প্রবাসী ধনীকে একটি বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো। যেখানে রবিন খুদা নিজেই শুনিয়েছেনন তার উত্থানের গল্প।

প্রথম আলো জানিয়েছে, ১১টি ডেটা সেন্টারের মাধ্যমে হংকং, জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ নানা দেশে ক্লাউডসেবা দেয় রবিন খুদার প্রতিষ্ঠান “এয়ারট্রাংক”। তথ্য ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণবিষয়ক এই প্রতিষ্ঠান গড়েই অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ ধনীদের তালিকায় নাম তুলেছেন বাংলাদেশের রবিন খুদা।

প্রথম আলোর তথ্যমতে, রবিন খুদাদের আদি বাড়ি সিরাজগঞ্জের ছাতিয়ানতলী গ্রামে। তার বাবা এস এম ওয়াজেদ আলী উচ্চমাধ্যমিক পড়ার জন্য ঢাকায় এসেছিলেন। তারপর তিনি ঢাকাতেই থেকে যান। পড়াশোনা শেষে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন এস এম ওয়াজেদ আলী। বাবার চাকরির সুবাদে ঢাকাতেই রবিনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। রবিন পড়াশোনা করেছেন শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় ও হারম্যান মেইনার কলেজে।

১৯৯৭ সালে এইচএসসি পাসের পর অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান রবিন ‍খুদা। সেখানে স্নাতকে ভর্তি হন সিডনি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিষয় হিসাববিজ্ঞান। একমাত্র ছেলে সিডনিতে স্থায়ী হওয়ার চিন্তা করলে তার মা-বাবাও ১৯৯৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান।

২০০২ সালে স্নাতক শেষ করে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ করেন রবিন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করতেন রবিন। পড়ালেখা শেষ করে হিসাবরক্ষক হিসেবে যোগ দেন একটি প্রতিষ্ঠানে।

কাজের প্রতি রবিনের একাগ্রতা আর দক্ষতার কারণে পেশাগত জীবনে দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকেন রবিন। পাশাপাশি সিপিএর (সার্টিফাইড প্রাকটিসিং অ্যাকাউন্ট্যান্ট) মতো বিভিন্ন পেশাগত কোর্স করে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করতে থাকেন এই প্রবাসী।

২০০৭ সালে জাপানি প্রতিষ্ঠান ফুজিৎসুতে মহাব্যবস্থাপক পদে যোগ দেন রবিন খুদা। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড অঞ্চলের টেলিকম ও ক্লাউড কম্পিউটিং বিভাগের কাজে দুই বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন। এরপর প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেন অস্ট্রেলিয়ান টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি পাইপ নেটওয়ার্কে। কোম্পানিটি অস্ট্রেলিয়া ও গুয়াম দ্বীপের মধ্যে একটি সাবমেরিন ফাইবার কেব্‌ল নির্মাণের কাজ করছিল তখন।

সেখানস থেকেই টেলিকমিউনিকেশন ব্যবসা বিষয়ে বেশ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন রবিন। এরপর ডেটা সেন্টার কোম্পানি নেক্সটডিসির নির্বাহী পরিচালক হন রবিন। সেই সময় তার কাজ ছিল বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে। রবিনের দক্ষতা বিনিয়োগকারীদের নজর কাড়ে। বর্তমানে নেক্সটডিসি প্রায় ১০ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারের প্রতিষ্ঠান, যেটির পেছনে রবিনের ভূমিকা অনন্য। ২০১৪ সালে নেক্সটডিসি ছেড়ে টেলিকম পেমেন্ট কোম্পানি মিন্ট ওয়্যারলেসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব নেন রবিন খুদা।

এরপর থেকে রবিনের গল্প শুধুই এগিয়ে যাওয়ার। ২০১৫ সালে এয়ারট্রাংক যাত্রা শুরু করে। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ৪০০ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার একটি ডেটা সেন্টার নির্মাণের কাজ পায় রবিনের এই প্রতিষ্ঠানটি।

এয়ারট্রাংকের ধারণাটি কীভাবে এল, প্রথম আলোর এমন প্রশ্নের জবাবে রবিন খুদা বলেন, “২০১০ কি ২০১১ সাল থেকেই দেখছিলাম ক্লাউডসেবা জনপ্রিয় হচ্ছে। অ্যামাজন, গুগল বা মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানিগুলো এগিয়ে তখন, তবু ডেটা সেন্টার–শিল্পে সুযোগ দেখতে পেলাম। তখন থেকেই আমি কম খরচে, কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ক্লাউড স্টোরেজ নির্মাণের পরিকল্পনা শুরু করি। এভাবেই এয়ারট্রাংকের যাত্রা।”

তথ্য ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রযুক্তিপাড়ায় এয়ারট্রাংক এখন সুপরিচিত নাম। প্রথম আলোর তথ্যমতে, রবিনের প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কাজ করেন সাড়ে চারশোর বেশি কর্মী। এটি অস্ট্রেলিয়ার প্রথম এবং বৃহৎ হাইপারস্কেল ডেটা সেন্টার। বর্তমানে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও জাপানে এয়ারট্রাংকের ক্লাউডসেবা চালু আছে। অস্ট্রেলিয়া, হংকং, জাপান, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে প্রতিষ্ঠানটির ১১টি ডেটা সেন্টার রয়েছে। আরও ৪০টি কেন্দ্র চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

এয়ারট্রাংক অধিগ্রহণ হয়ে গেলেও রবিন খুদা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে তার মালিকানাও রয়েছে। সেই হিসেবে রবিন এখন অস্ট্রেলিয়ার ১০৯তম ধনী।

রবিন খুদাকে গত বছর “বিজনেস পারসন অব দ্য ইয়ার” পুরস্কার দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ফাইন্যান্সিয়াল রিভিউ (এএফআর) পত্রিকা।

২০২০ সালে “খুদা ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন” নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন রবিন। এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নতি ও কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশনটি প্রযুক্তি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে কাজ করে। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধেও সহায়তা করে।

এই ফাউন্ডেশন থেকে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা (১০০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার) অনুদান দিয়েছেন রবিন। বিশ্ববিদ্যালয়টির স্টেম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) বিষয়ের নারী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও অনুদানে এই অর্থ ব্যয় করা হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com