কুমিল্লা সদর উপজেলার পিয়ারাতলী গ্রামের পাশ ঘেঁষে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট কাচা পাকা ভবন ফাঁকে ছোট ছোট জলাধার, জুড়ে থাকা সবুজ ফসলের মাঠ, আঁকা বাঁকা গ্রামবাংলার সরু পথ আর এই দিগন্ত মাঠ সমেত প্রাকৃতিক সম্ভারের পাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে ধূসর রঙের কতক উচুতলা ভবন।
এর ভেতরেই চলছে দেশ এবং দেশ ছাপিয়ে যাওয়া বাণিজ্যিকভাবে মোবাইল ফোন তৈরির পল্লীর এক কারখানা। যেখানে আশপাশের গ্রামের অল্পবিস্তর শিক্ষাগত যোগ্যতার জোরে কাজের মাধ্যমে অর্জিত কমবেশি দক্ষতা নিয়ে ছোটবড় বয়সী তরুণ-তরুণীর হাত দিয়ে চলছে মোবাইল সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ তৈরির এক বিশাল কর্মযজ্ঞ।
এই গ্রামটিসহ আশপাশের এলাকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রামের অধিকাংশ শুধুমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় পার করেছে এমন দক্ষ-অদক্ষ নারীদের জীবনযাত্রার মান এখন বেশ উন্নত। তারা মোবাইল ফোনের এই কারখানায় কাজ করে স্বাবলম্বী। কারণ এখানে স্থানীয় এক ব্যক্তির উদ্যোগে ধানের জমির পাশে গড়ে উঠেছে মোবাইল ফোন তৈরির কারখানা।
হালিমা গ্রুপের হালীমা হাইটেক মোবাইল তৈরির এ কারখানায় কাজ শেখে নারীরা নিজেরাও এখন বাড়িতে বসে বসে মোবাইলসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্য বানানোর কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।
এই গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরেই চলছে এমন কর্মযজ্ঞ। হালিমা টেলিকম কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, কারখানার প্রায় ৯০ ভাগ শ্রমিক নারী। তাদের কারও বাড়ি পিয়ারাতলী, কারও মাঝিগাছা, ছত্রখিল কিংবা চাঁনপুরে। এর উদ্যোক্তা স্থানীয় তরুণ আবুল কালাম হাসান টগর।
পিয়ারাতলী গ্রামে গিয়ে জানা যায়, এখানের নারী শ্রমিকদের অধিকাংশ প্রাথমিক শিক্ষাও শেষ করতে পারিনি। কেউ আবার লেখা পড়ার পাশাপাশি কারখানায় মোবাইল ফোন তৈরির কাজ করে নিজেরাই স্বাবলম্বী হয়েছেন।
এই গ্রামের নারীরা এখন মোবাইল ফোনের ডেট লেভেল, এলসিডি, এলসিডি লেন্স, কী প্যাড, আপ হাউজিং, ব্যাক হাউজিং, স্পিকার নেট চেনেন। কাপড়ের পুতুল বানানো তরুণী এখন মোবাইল ফোন তৈরি করছেন।
নারীরা পরিপাটি অফিস ড্রেস পরে কাজ করছেন। তদারকি করছেন কারখানার কর্মকর্তারা। কর্মকর্তারা জানান, ‘গ্রামের নারীরা পিছিয়ে নেই। তাদের উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক মানের। আমরা দেশে তৈরি যে কোনো পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের বাজার সৃষ্টি করেছি।
পিয়ারাতলী গ্রামের মোবাইল কারিগর এক নারী বলেন, পরিবারের আয় কম, ঘরের পাশের কারখানায় এসে কাজ শিখেছি। এখন নিজে মোবাইল ফোন বানাতে পারি, এটা এখন অনেকটা পুতুল বানানোর মতো সহজ। কারখানায় ভালো বেতন পাই। সন্তানদের পড়ালেখা করাতে পারছি।
কারখানার আরও দুই নারী শ্রমিক বলেন, ঘরের পাশে কারখানা হওয়ায় যাতায়াতের ভোগান্তি নেই, খরচ নেই। পায়ে হেঁটে আসি। দুপুরের খাবারও বাড়িতে খেয়ে আবার কারখানায় এসে কাজ করতে পারি।
উদ্যোক্তা আবুল কালাম হাসান টগর বলেন, কারখানার নারী কর্মীরা অল্প লেখাপড়া জানা। আমাদের কর্মীরা গ্রামের বলে পিছিয়ে নেই। তাদের উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। আমরা দেশে তৈরি যে কোনো পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের বাজার সৃষ্টি করেছি।
কুমিল্লার চাঁন্দপুর গ্রামে মোবাইল ফোন অ্যাকসেসরিজের ব্যবসা দিয়ে শুরু করেছি। নারীদের এখানে এনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে তারা নিজের হাতে মোবাইল তৈরির কাজ করেন। এখন নারীরাই পিয়ারাতলী গ্রামের কারখানায় মোবাইল ফোন তৈরির কারখানায় কাজ করে নিজেরাই স্বাবলম্বী হয়েছেন। সামনে নারীরা ইলেকট্রনিকস পণ্য ও অ্যান্ড্রয়েড ফোন তৈরি করবেন।
কুমিল্লার প্রত্যন্ত এই গ্রামের নারীদের তৈরি পণ্য ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে বলে ও জানিয়েছেন হালীমা গ্রুপের উদ্যোক্তা আবুল কালাম হাসান টগর।