ফ্রান্স মদ এবং পনিরের জন্য বিখ্যাত হলেও বিশ্বজুড়ে বিপুল পরিমাণ পর্যটকের অন্যতম গন্তব্য এই দেশটি। বছর জুরে ৮২ মিলিওনেরও বেশি দর্শনার্থী আসে ফ্রান্সের বিভিন্ন দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় স্থান দেখতে। প্যারিস, তুুলাউস, লিওন, বারডোও এবং অনেক শহরগুলোতে সংস্কৃতিমনা পর্যটকদের বিপুল আগ্রহ রয়েছে। দেশটিতে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এর সংখ্যাও ৩৯ টি! আর তাছাড়া ফ্রান্সের আরামদায়ক জলবায়ু, চমৎকার সৈকত, প্রাচীন দুর্গ, ঐতিহাসিক যাদুঘর, বাগান এবং উদ্যানের জন্যও বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের ১ম পছন্দ ফ্রান্স। তো চলুন দেখে নেই ফ্রান্সের দর্শনীয় স্থান গুলো সম্পর্কে:
ফ্রান্সের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান এর লিস্টে ৫ম স্থানে রয়েছে ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরা / কোট ডা’জিউর। এটি ফ্রান্সের সবচেয়ে আকর্ষণীয় উপকূলীয় অঞ্চল যার সমার্থক শব্দ হতে পারে — “গ্ল্যামার”। কোট ডা’জিউর এর মানে হলো “Coast of Blue (নীল উপকূল)” যার কারন ভূমধ্য সাগর (Mediterranean Sea) এর গভীর নীল রং। তবে ইংরেজিতে একে বলা হয় ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরা। এটি সেইন্ট ট্রপ থেকে ইতালির সীমান্তবর্তী মেন্টন (Menton) পর্যন্ত বিস্তৃত। গ্রীষ্মকালে এটি হয়ে উঠে সৈকতপ্রেমীদের মিলনস্থল। জাহাজ আর ইয়ট গুলোতে চোখে পরে অনেক বিত্তশালী লোকদের। এখানকার “কান (Cannes)” বিখ্যাত এর সেলিব্রিটি ফিল্ম ফেস্টিভাল এবং হোটেলের জন্য।
ফ্রান্সের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান এর লিস্টে পরবর্তী স্থানে রয়েছে ভার্সাইল যা হলো ফ্রান্সের একটি ক্ষুদ্র গ্রাম। আর এই ভার্সাইল গ্রাম তার বৃহৎ এবং অত্যাশ্চর্য প্রাসাদ (চাতেউ – এর জন্য বিখ্যাত। এই স্থানটি হল ফরাসি শিল্পের এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৌন্দর্যের নিদর্শন। ফরাসি বিপ্লবের সময় রানি মারি এন্তনের জন্য ভার্সাইল প্রায়ই খবরের শিরোনাম হতো।
ভার্সাইলের মূল বাসভবন শুধুমাত্র ত্রয়োদশ লুই এবং তার পরিবারের জন্য একটি শিকার লজ হিসাবে ব্যবহৃত হলেও, পরবর্তীকালে একে বিভিন্নভাবে অলংকৃত করে একটি অপরিমেয় রাজকীয় ভবনে রূপ দেওয়া হয়। রাজকীয় এই প্রাসাদটি তার সুন্দর বাগান এবং “হল অফ মিরর” এর জন্য খুবই পরিচিত। ফ্রান্সের পর্যটকরা সাধারণত বিখ্যাত এবং রাজকীয় এই প্রাসাদটির পরিদর্শন করতেই ভার্সাইল আসে। তবে, এই শহরটি তার নিজস্ব সত্ত্বায়ই পর্যটকদের কাছে বিস্ময় হয়ে উঠেছে।
ফ্রান্সের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থানের লিস্টে ৩য় স্থানে রয়েছে মন্ট সেন্ট-মিচেল। সমুদ্র থেকে উত্থিত মন্ট সেন্ট-মিচেল যেন এক অদ্ভূত কাল্পনিক দূ্র্গ। এর অবস্থান ফ্রান্স এর নরমান্ডি উপকূলের কাছাকাছি একটি ক্ষুদ্র দ্বীপে যা ইউরোপের সর্বোচ্চ জোয়ার প্রবাহ দ্বারা আক্রান্ত হয়। মধ্যযুগীয় এই দূর্গটি গির্জাতে রূপান্তরিত হওয়ার মাধ্যমে ফ্রান্সের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনস্থল রূপে মাথা তুলে দাড়ায়। এখানে বিভিন্ন দোকান, রেস্তোঁরা এবং ছোট ছোট হোটেলও দেখা যায়। ইউনেস্কো ১৯৭৯ সালে মন্ট সেন্ট-মিচেলকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। প্রতি বছর প্রায় ৩০০০০০০ দর্শনার্থী আসে এই গির্জাটি দেখতে।
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত ও সমৃদ্ধ আমাদের লিস্টে ২য় স্থানে রয়েছে। ফ্রান্সের এই মিউজিয়ামটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ১২০০ সালে যদিও এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০ বছর আগে। তবে ল্যুভরের স্বর্ণযুগ বলা হয় এর শাসনামলকে। তার নেতৃত্বেই ফ্রান্সের আধিপত্য সমগ্র ইউরোপ জুড়ে বিস্তৃত হয় এবং মিউজিয়ামটির সংগ্রহশালা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। তিনি বিজিত দেশগুলো থেকে লুট করা মহামূল্যবান দ্রব্যসমাগ্রী ও শিল্পসম্ভার এখানে এনে সংরক্ষণ করেন।
কিন্তু নেপোলিয়ানের পতনের পর এসব মহামূল্যবান অনেক দ্রব্যসমাগ্রী ও শিল্পসম্ভারই বিজিত দেশগুলোকে পুনরায় ফেরিয়ে দেয়া হয়। ১৮৪৮ সালে ল্যুভর মিউজিয়াম ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে পরিণত হয়। বর্তমানে এতে ৬টি প্রশাসনিক বিভাগসহ পৃথক গ্যালারিতে গ্রিক, মিসরীয়, রোমান ও প্রাচ্যের অসংখ্য শিল্পনিদর্শন রয়েছে। বহু বিখ্যাত শিল্পী ও ভাস্করের শিল্প ও ভাস্কর্যকর্মও আছে এই মিউজিয়ামটিতে। দা ভিঞ্চির বিশ্ববিখ্যাত ঐতিহাসিক শিল্পকর্ম ‘মোনালিসা‘ও এই ল্যুভরেই সংরক্ষিত আছে।
সত্যিকথা বলতে ফ্রান্সের দর্শনীয় স্থান এর কথা বলা হলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে এর ছবি। তাই তো? হ্যাঁ, আমাদের লিস্টের ১ম স্থানেও আছে ফ্রান্সের এই ল্যান্ডমার্ক। এর অবস্থান প্যারিস শহরে। এর নির্মাতা গুস্তাভো আইফেল ১৮৮৯ সালে প্যারিস আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর প্রবেশদ্বার তোরণ হিসেবে এটি নির্মাণ করেন। এটি লম্বায় ৩২৪ মিটার (১,০৬৩ ফুট)। ১৮,০৩৮ টি লোহার খণ্ড দিয়ে তৈরি বিভিন্ন আকৃতির ছোট-বড় কাঠামো জোড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল এই আইফেল টাওয়ার। দর্শনার্থীদের পরিদর্শনের জন্য লৌহ নির্মিত এই আইফেল টাওয়ারটিতে ৩টি স্তর রয়েছে। তবে এর তৃতীয় তলাটিই প্যারিস শহর পর্যবেক্ষণ করার জন্য সর্বাধিক জনপ্রিয়। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৫০০০ দর্শনার্থী আসে এই আইফেল টাওয়ার দেখতে।
ফ্রান্সের আরো কিছু দর্শনীয় স্থান:
শ্যাতো দে ভিনসেনস, শ্যামনি, চ্যাম্প-ইলিসি, নটর্ ডেম, সেন্ট-ক্ল্যাউড, শেভরেস, ল্যে চেসন্যে, গার্চেস, ডিজনিল্যান্ড, আর্ক ডি ট্রাইয়ামফ্, মুস্যি ডি’ওর্স্যে ইত্যাদি।