১। বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো জাতি-রাষ্ট্রের মধ্যে একটি হল ফ্রান্স। ফ্রান্স শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ফ্রান্সিয়া থেকে এসেছে। এর অর্থ ল্যান্ড অব ফ্রান্স বা ফ্রাংকদের ভূমি। ১৭৮৯ সালে দেশটিতে একটি বিখ্যাত বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল। ইতিহাসে এটি ফরাসি বিপ্লব নামে পরিচিত।
মধ্যযুগে ডিউক ও রাজপুত্রদের রাজ্যগুলি একত্র হয়ে একটিমাত্র শাসকের অধীনে এসে ফ্রান্স গঠিত হয়। বর্তমানে ফ্রান্স এর পঞ্চম প্রজাতন্ত্র পর্যায়ে রয়েছে। ১৯৫৮ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর এই প্রজাতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় প্রবণতার উত্থান এবং বেসরকারী খাতের উন্নয়ন এই নতুন ফ্রান্সের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ফ্রান্স ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম প্রধান সদস্য। ফ্রান্স জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য-দেশের একটি এবং এর ভেটো প্রদানের ক্ষমতা আছে।
২। ফ্রান্সের আয়তন ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৮০১ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে ফ্রান্স ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ এবং পৃথিবীর মধ্যে ৪৮ তম দেশ।
৩। ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশটির জনসংখ্যা ৬ কোটি ৬৯ লাখেরও অধিক। জনসংখ্যার দিক থেকে এটি ইউরোপে চতুর্থ স্থানে রয়েছে।
৪। ফ্রান্সের সংবিধান অনুযায়ী দেশটির ভাষা ‘ফ্রেঞ্চ বা ফরাসি’। এখানকার ৯০ শতাংশের অধিক মানুষ ফরাসি ভাষাতে কথা বলে।
৫। সংবিধান অনুযায়ী একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ ফ্রান্স। তবে ২০১৬ সালের এক হিসাব অনুযায়ী দেখা গেছে, দেশটির ৫১ শতাংশ মানুষ খ্রিষ্টান ধর্ম পালন করে। মুলসমান ও অন্যান্য আরও কিছু ধর্ম পালন করে ৯ শতাংশ মানুষ। এছাড়া প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ কোনো প্রকার ধর্ম পালন করে না।
৬। ফ্রান্সের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর হচ্ছে প্যারিস। প্যারিস কে বলা হয় “দা সিটি অব লাভ”।
দুই হাজার বছরেরও বেশি ঐতিহ্যের অধিকারী এই নগরী বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। রাজনীতি, শিক্ষা, বিনোদন, গণমাধ্যম, পোষাকশৈলী, বিজ্ঞান ও শিল্পকলা- সবোদিক থেকে প্যারিসের গুরুত্ব ও প্রভাব এটিকে অন্যতম বিশ্বনগরীর মর্যাদা দিয়েছে।
৭। ফ্রান্স বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটক আকর্ষক দেশ। ২০১৫ সালে এই দেশে রেকর্ড সাড়ে ৮ কোটি পর্যটক ঘুরতে আসেন। আর এই জন্যই গত কয়েক বছরে ফ্রান্স বিশ্বের নাম্বার ওয়ান পর্যটক আকর্ষক দেশ হয়ে উঠেছে।
৮। বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার পাওয়া দেশ হচ্ছে ফ্রান্স। ফ্রান্স এই পর্যন্ত সাহিত্যে মোট ১৫ টি নোবেল পুরষ্কার জিতেছে।
৯। যেইসব মানুষেরা দেখতে পান না তাদের পড়ালেখার পদ্ধতির নাম হচ্ছে ব্রেইল। যা ফ্রান্সের বাসিন্দা লুইস ব্রেইল আবিষ্কার করেন। তিনি নিজেও ছোটবেলা থেকেই একটি একসিডেন্ট এর কারনে অন্ধ ছিলেন।
১০। এছাড়াও ফ্রান্সে ডিজিটাল ক্যালকুলেটর, প্যারাসুট, হট এয়ার বেলুন এর মতো কিছু বড় বড় আবিষ্কার হয়েছে।
১১। প্যারিস এর সবচেয়ে পুরাতন ব্রিজের নাম হচ্ছে পন্ট নেউফ ব্রিজ।
১২। স্ট্যাচু অফ লিবার্টি নিউ ইয়র্ক এর একটি বিখ্যাত ভাস্কর্য। এই ভাস্কর্যটি ফ্রান্স আমেরিকাকে উপহার হিসাবে দেয়।
১৩। ফ্রান্সের আইন অনুসারে মৃত মানুষকেও বিয়ে করা যায়।
১৪। ফ্রান্সের চাইতে আফ্রিকাতে ফ্রেন্স ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা বেশি।
১৫। ইউনাইটেড কিংডম এর পরে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দেশ শাসন করেছে ফ্রান্স। একসময় পৃথিবীর ৮ শতাংশ এলাকা ফ্রান্সের মালিকানাধীন ছিল। বিশ্বের ৫৮ টি দেশ তাদের স্বাধীনতা দিবস ইউনাইটেড কিংডম থেকে স্বাধীন হবার ফলে এবং ২৬ টি দেশ তাদের স্বাধীনতা ফ্রান্সের থেকে স্বাধীন হবার ফলে উদযাপন করে।
১৬। ‘বিকিনি’ শব্দ এবং এই ড্রেসের সাথে আমরা পরিচিত।পশ্চিমা দেশগুলোতে এটা খুবই জনপ্রিয় একটি ড্রেস । ১৯৪৬ সালে ফ্রেঞ্চ ইঞ্জিনিয়ার এবং পোশাকের ডিজাইনার লুইস রেয়ারড Louis Réard এই টু পিস ‘Swim Suit’ প্রথম বাজারে আনেন।
১৭। কুকুর বা বাদুড় কামড় দিলে ‘র্যাবি’ নামের এক ধরণের মারাত্মক রোগ হয়। আমরা অনেকেই দেশে একে বলি ‘জলাতঙ্ক’ রোগ। ১৮৮৫ সালে এই রোগের প্রতিষেধক সর্বপ্রথম ফ্রান্সেই আবিষ্কৃত হয়।
১৮। আমরা কমবেশি সবাই পেন্সিল ব্যাবহার করে থাকি। এই আধুনিক পেন্সিল ১৭৯৫ সালে ফ্রান্স আবিষ্কার করে।
১৯। সুদৃশ্য নিদর্শন আইফেল টাওয়ারের কথা তো আমরা সবাই অনেক শুনেছি। এটি কিন্তু ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস এই অবস্থিত। আইফেল টাওয়ার পৃথিবীর বিখ্যাত কাঠামোর একটি এবং ফ্রান্সের অন্যতম একটি প্রতিক। আইফেল টাওয়ার এর উচ্চতা হচ্ছে ৩০০ মিটার বা ৯৮৬ ফুট।
২০। ফ্রান্সের শিক্ষার মান খুবই উন্নত এবং এর ডিগ্রি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ফ্রান্সে অনেক ইউনিভার্সিটি রয়েছে যেগুলো রেঙ্কিং এ অনেক এগিয়ে। ফ্রান্সের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারনত ফ্রেঞ্চ ভাষায় পড়াশোনা করানো হয়। অল্প কিছু প্রতিষ্ঠানে ইংরেজিতে পড়াশোনা করা যায়। তাই ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী হলে ফ্রেঞ্চ ভাষার উপর ভালো দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এখানে শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে এবং শেষ হয় মে-জুনে।
২১। ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় মুদ্রা হচ্ছে ইউরো।
২২। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় ২.৮৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ৪৩,৫০০ মার্কিন ডলার।
২৩। ফ্রান্সের ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৩৩।