প্রমোদতরী শব্দটি উচ্চারিত হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিশালাকৃতির ক্রুজ বা জাহাজ। সমুদ্রে ভেসে থাকা সত্ত্বেও এখানে রয়েছে আধুনিক সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। রয়েছে নীল জলরাশি ও আকাশের মিতালি উপভোগ করার ব্যবস্থা। কাটানো যায় অবকাশের সেরা সময়গুলো। দূর থেকে দেখলে মনে হয় এ যেন চলন্ত একটি শহর।
ফ্লোরিডা থেকে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ: ‘অ্যালুর অব দ্য সিজ’ রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির মালিকানাধীন ওয়েসিস ক্রাস ক্রুজ শিপ। বিশ্বের অন্যতম বড় ক্রুজ জাহাজ অ্যালুর অব দ্য সিজ। ক্রুজ জাহাজটি ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে নির্মিত হয়। এটি এতটাই বিশাল যে, এতে ছয় হাজার ৩৬০ জন যাত্রী বহন করা যায়।
বিলাসবহুল এ ক্রুজ জাহাজটি আমেরিকার ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য থেকে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ভ্রমণ করে। মূলত ইউরোপ ও এশিয়ার পর্যটকরা এর প্রধান যাত্রী। জাহাজটির একটি টুইন রয়েছে। উভয় ক্রুজ জাহাজ পর্যটকদের জন্য নানা ধরনের বর্ণিল ও মনোরম অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। প্রচুর পরিমাণে কাচ, কাঠ এবং গাছের মাধ্যমে এ জাহাজটিকে ইউনিট করা হয়েছে।
এ ছাড়াও এতে কাচের নির্মিত দোকান, ডাইনিং ভেন্যু, সিনেমা দেখা, হেলিপ্যাড ও থিম পার্কের ব্যবস্থা রয়েছে। এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো বিলাসবহুল ক্যাসিনো। এ ছাড়া আধুনিক সব যন্ত্রপাতি ও স্থাপনাশৈলী দিয়ে সাজানো হয়েছে এই অ্যালুর অব দ্য সিজ। অন্যদিকে পর্যটকদের জন্য কেবিনের সঙ্গে থ্রিডি সিনেমা, আইপড, ট্যাবের ব্যবস্থা রয়েছে।
এর ‘রিচা স্যান্টিনা’ নামক বারে রয়েছে আধুনিকতম সুইমিংপুল। যেখানে সুইমিং করতে করতে খাওয়া যায় নামিদামি সব খাবার ও পানীয়। জাহাজের রেস্টুরেন্টেও পাওয়া যায় বিখ্যাত সব খাবার। যেসব খাবার পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হটডগ, মেক্সিকান ফুড, রেড চিলিজি, সজেজ, পাস্তা, চিপস এবং ট্যাকো সালাদ ইত্যাদি নানা মুখরোচক খাবার।
এমনকি বিশ্ববিখ্যাত সব ব্র্যান্ডের পোশাক, ঘড়ি, হাতব্যাগ, জুতা, জুয়েলারি, সানগ্লাসের আউটলেট রয়েছে এতে। আপনি এখান থেকে চাইলে আপনার পছন্দের ব্র্যান্ডের নানা জিনিসপত্র কিনে নিতেও পারেন। মজার বিষয় এখানকার ব্র্যান্ডের আউটলেটগুলোতে যে কালেকশন তা আপনি অন্য কোথাও পাবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের সাদাম্পটন থেকে নিউইয়র্ক: ফ্রান্সে নির্মিত নরওয়েজিয়ান ক্রুজ লাইন কোম্পানির মালিকানাধীন বিলাসবহুল ক্রুজ নরওয়েজিয়ান এপিক। ২০০৮ সালে নির্মাণের সময় এটি ছিল পৃথিবীর তৃতীয়তম বিশালাকৃতির ক্রুজ জাহাজ। ২০১০ সালের ২৪ জুন প্রথমবারের মতো ক্রুজ জাহাজটি যুক্তরাষ্ট্রের সাদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
ক্রুজ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সোলো স্টুডিও কেবিন, ওয়েভ কেবিন সংযুক্ত করা হয় জাহাজটিতে। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো আধুনিকতম বাথরুমের ব্যবস্থা করা হয় এখানে। জাহাজটিতে যে কোনো অনুষ্ঠানের জন্য রয়েছে বিশাল পরিসর জায়গা। যেখানে একসঙ্গে তিন হাজার পর্যটক সমবেত হতে পারেন।
এ ছাড়া খেলাধুলার জন্য স্পোর্টস সেন্টার, লিভিং রুমের ব্যবস্থা রয়েছে। আর বিনোদনের জন্য ৬৮১ আসনের মাল্টি- মেগা থিয়েটার ক্রুজ জাহাজটিকে অন্য যে কোনো ক্রুজের চেয়ে আলাদা করেছে। এ ছাড়া সংগীতপ্রেমীদের কনসার্টের জন্য রয়েছে লিজেন্ড ইন কনসার্ট নামক আধুনিক মঞ্চ। এ ছাড়াও স্পোকিং জোন, বিশালাকৃতির ক্যাসিনোও রয়েছে। আর খাবারের চাহিদা মেটানোর জন্য মুখরোচক খাবারে ভরপুর ২০টির বেশি রেস্টুরেন্ট রয়েছে।
এ ছাড়া খাবারকে সব সময় যাত্রীদের দোরগোড়ায় নিতে কফি গার্ডেন, পিত্জা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। আর ভ্রমণের ক্লান্তি দূর করতে ১০৮১ ফুট আকৃতির বিশাল করিডর রয়েছে। সমুদ্রের নীল পানির সৌন্দর্য আপনার মনকে প্রশান্তি দেবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ক্রুজ জাহাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় স্পা-সেলুন সেন্টার রয়েছে এ নরওয়েজিয়ানে।
এ যেন পাঁচতারকা হোটেল: প্রমোদতরীটি সমুদ্রের মাঝে যেন একটি বিলাসবহুল পাঁচতারকা হোটেল। এটি কুইনার্ড কোম্পানির তৈরিকৃত প্রমোদতরী কুইন মেরি-২। পৃথিবীর এ যাবৎকালের নির্মিত দ্বিতীয় বৃহত্তম জাহাজ। বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ, প্রশস্ত ও উচ্চতম এ জাহাজের সুবিশাল ডাইনিং রুম, বলরুম, থিয়েটার আর পৃথিবীর প্রথম ভাসমান প্লানেটেরিয়াম একে আর সব জাহাজ থেকে করেছে অনন্য।
আকৃতির বিশালতা আর অসাধারণ নির্মাণশৈলীর সুনিপুণ প্রদর্শনের দরুন কুইন মেরি-২ আজ সমুদ্র-পর্যটন, পরিবহন আর শিপইয়ার্ড ইন্ডাস্ট্রিতে একটি অনবদ্য নাম। ২০০২ সালের ২৪ জানুয়ারি কুইন মেরি-২ এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। আটলান্টিকের প্রতিকূল আবহাওয়া যে কোনো সমুদ্রযানের জন্যই একটি হুমকি।
কখনো কখনো এর ঢেউয়ের আকার তিনতলা সমান উঁচুও হয়। এ জন্য যে কোনো জাহাজের সামনের অংশটি উঁচু রাখা হয় যাতে বড় ঢেউকে তা কেটে ফেলতে পারে। কুইন মেরি-২ এর ক্ষেত্রে এই বিষয়টি মাথায় রেখে সাধারণের চেয়ে অনেক উঁচু করা হয়েছে। এ ছাড়া সামনের ডেকের ওপর কিছুটা বর্ধিত অংশ আছে যা কখনো ঢেউয়ের পানির তোড় জাহাজের ওপরে চলে এলেও তাকে আবার সাগরেই ফেলে দেয়।
জাহাজটিতে কেবিনের সংখ্যা ১৩১০টি। এতে মোট ১০ ধরনের কেবিন আছে। এখানে রয়েছে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। প্রতিবন্ধীদের জন্য ৩০টি কেবিন আছে, যেখানে হুইলচেয়ার ও প্রতিবন্ধীদের জন্য টয়লেটের সুব্যবস্থা আছে। ৩৬টি কেবিন শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য আছে।
সর্বসাধারণের জন্য এখানে ১৫টি রেস্টুরেন্ট ও বার, পাঁচটি সুইমিংপুল, একটি ক্যাসিনো, একটি বলরুম, একটি থিয়েটার এবং ১টি প্লানেটেরিয়াম আছে। রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্রিটানিয়া রেস্টুরেন্ট, যেটি দুটি ডেকের ওপর পুরো জাহাজের প্রস্থজুড়ে বিস্তৃত।
সাগরের বুকে ভাসমান শহর: সাগরের বুকে ভাসমান শহর বলা যায় ‘ওয়েসিস অব দ্য সিজ’ বা ‘সাগরের মরূদ্যান’। আভিজাত্য ও আকারের দিক থেকে ‘ওয়েসিস অব দ্য সিজ’ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাহাজগুলোর মধ্যে একটি। এটা ৫টা টাইটানিকের চেয়েও বড় আবার ৪টা ফুটবল মাঠের চেয়েও বড় বলা যায়।
এতদিন পৃথিবীতে সর্ববৃহৎ জাহাজ হিসেবে ছিল ইনডিপেনডেন্ট অথবা ফ্রিডম অব দ্য সিজ। এই জাহাজগুলোর চেয়ে ওয়েসিস অব দ্য সিজ ৭৫ ফুট বেশি লম্বা। তাই বলা যায়, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও বিলাসবহুল জাহাজের নাম ‘ওয়েসিস অব দ্য সিজ’। বিভিন্ন মাধ্যমে ‘ওয়েসিস অব দ্য সিজ’কে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজ বলা হলেও এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজ নয়।
একই কোম্পানির আরও একটি জাহাজ রয়েছে। যেটির নাম ‘অ্যালুর অব দ্য সিজ’। মাত্র ২ ইঞ্চি পার্থক্য রয়েছে জাহাজ দুটির আয়তনের মধ্যে। ‘অ্যালুর অব দ্য সিজ’ ২ ইঞ্চি বড় ‘ওয়েসিস অব দ্য সিজ’ থেকে। ‘ওয়েসিস অব দ্য সিজ’ জাহাজটির প্রতি পরতে পরতে আপনাকে বিস্মিত করবে।
মোট ৭টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে জাহাজের বিশেষত্বকে। যেমন— সেন্ট্রাল পার্ক, পুল, ফিটনেস সেন্টার, বিনোদন কেন্দ্র প্রভৃতি। বিশ্বের প্রথম ভাসমান উদ্যানটি এই জাহাজেই অবস্থিত। এখানে ১২ হাজার গাছের চারা এবং ৫৬টি গাছ রয়েছে। জাহাজের পেছনের অংশে রয়েছে ৭৫০টি আসনবিশিষ্ট থিয়েটার, যার মধ্যে রয়েছে সুইমিংপুল।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, জাহাজের এই জায়গাটি দিনে ব্যবহৃত হয় সুইমিংপুল হিসেবেই, অথচ রাতে ব্যবহৃত হয় সাগরের একটি থিয়েটার হিসেবে। জাহাজটির গঠন ও ধারণক্ষমতার দিক থেকেও এটি অনন্য। ২২ তলাবিশিষ্ট বিলাসবহুল এই জাহাজটিতে রয়েছে ১৬টি ডেক এবং ২,৭০০টি বিলাসবহুল রুম। জাহাজটি একসঙ্গে ৬,৩০০ যাত্রী ধারণ করতে পারে।
সেই সঙ্গে জাহাজটিতে অবস্থান করেন দুই হাজার ১০০ ক্রু। যারা সমুদ্রে সরাসরি সার্ফ করতে পারেন না। তাদের সার্ফিং করা জন্য বানানো হয়েছে জাহাজের মধ্যেই দুটি সার্ফ এরিয়া। একটি পূর্ণ বয়স্কদের জন্য, আরেকটি শিশুদের জন্য। সার্ফিং এরিয়ার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্লো রাইডার্স। আর সাহসীদের জন্য আছে ওড়ার ব্যবস্থা। গ্লাইডিং করে জাহাজের ছাদের ২৫ মিটার ওপর পর্যন্ত ওড়তে পারবেন আপনি।
জিপ ওয়্যার ধরে তীব্র গতিতে ওপরে ওঠানামার খেলার ব্যবস্থাও আছে। পর্বতারোহণে উৎসাহীদের জন্য পাথরের দেয়ালে তৈরি করা হয়েছে ১৩ মিটার উচ্চতার দুটি টাওয়ার। কেবিন বা থিয়েটার ছাড়াও জাহাজের প্রায় প্রতিটি অংশেই রয়েছে অসংখ্য বার, পোশাক ও বিভিন্ন দ্রব্যাদির দোকান আর রেস্টুরেন্ট।
এ ছাড়াও এখানে রয়েছে খেলাধুলার বিশেষ ব্যবস্থা। রয়েছে ভলিবল কোর্ট, বাস্কেটবল কোর্ট, চারটি বিশালাকৃতির সুইমিংপুল ইত্যাদি। এখানে আরও রয়েছে বিশেষ ইয়ুথ জোন। যেখানে কম্পিউটার গেমিং ও সায়েন্স ল্যাবরেটরিসহ নানা আকর্ষণীয় বিষয়, থিম পার্ক এবং বাচ্চাদের জন্য বিশেষ নার্সারি ও খেলাধুলার স্থান রয়েছে।
বিলাসবহুল এই জাহাজে করে ক্যারিবিয়ান সাগরের বুকে ভেসে বেড়াতে চাইলে আপনাকে দুই বছর আগে বুকিং দিতে হবে। সেই সঙ্গে আপনাকে গুনতে হবে ভিতরের দিকে কেবিন ভাড়া বাবদ ১৪৫৮ মার্কিন ডলার এবং দ্বিতলবিশিষ্ট সমুদ্রের দিকে মুখ করা সুইট ভাড়া ৩২০০ মার্কিন ডলার।
মোট ৯ রাত ৯ দিন উত্তর ক্যারিবিয়ান সাগরের বুকে আপনি এই জাহাজে করে ঘুরতে পারবেন। ৮৭০০ মানুষের খাবার ব্যবস্থার জন্য ২৬টা গ্যালি বা রান্না ঘরে সকাল ৬টা থেকেই রান্নার কাজ চলতে থাকে। চাহিদা অনুযায়ী নানা পণ্য স্টোরেজ করা হয়। যেমন, চা, কফি, দুধ, মাছ, মাংস, চাল, ময়দা, বিস্কুট, সবজি, সস, কেচাপ, মাখন, পনির, রুটি, নানা ধরনের মদ এবং পানীয় ইত্যাদি।
বিভিন্ন গ্যালিতে বিভিন্ন রকমের খাবার রান্না হয়। যেমন যে গ্যালিতে মাছ-মাংস রান্না হয় সেখানে সবজি রান্না বা বেকিং হবে না আবার সকালের নাস্তা বা হালকা নাস্তার জন্য ভিন্ন গ্যালি এই ভাবে। ৭১টি দেশের প্রায় ২৪০০ জন ক্রু নিয়োজিত রয়েছেন জাহাজটি পরিচালনায়। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পালাক্রমে ক্রুরা নানা কাজ করছেন।
শুধু জানালার কাচে জমা নোনা জল পরিষ্কার করার জন্য ডজনখানেক ক্রু এবং ১৮টা রোবট কাজ করছেন। ২৪ ঘণ্টা এর লন্ড্রিতে ৩৪ জন ক্রু কাজ করছেন, যাদের দিনে প্রায় ২০,০০০ টেবিল ক্লথ, ন্যাপকিন, বিছানার চাদর, তোয়ালে ধোয়া, ইস্ত্রি করা এবং ভাঁজ করতে হয়। যদিও চাদর, ন্যাপকিন, টেবিল ক্লথ ধোয়া ও ইস্ত্রি করা হয় বিশাল আকারের মেশিন দ্বারা।
কিন্তু তোয়ালে ও টেবিল ন্যাপকিন নানা ডিজাইন করে ভাঁজ করার কাজ হাতেই করতে হয়। কারও স্বাস্থ্য সমস্যা হলে আছে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট। আরও আছে তিনজন সার্বক্ষণিক ডাক্তার। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে একজন মানুষের যাবতীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। এমনকি হার্ট অ্যাটাক হলেও চিকিৎসার জন্য রয়েছে আইসিইউ ব্যবস্থা।
তবে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হলে জাহাজের ডাক্তার এবং ক্যাপটেন পরামর্শ করে জাহাজের দিক পরিবর্তন করে নিকটস্থ বন্দরে ভেড়ানোর ক্ষমতা দেওয়া আছে।
এমনকি মাঝে মাঝে রোগীকে হেলিকপ্টারে করে স্থানান্তর করা হয়ে থাকে। এই জাহাজ নির্মাণ শুরুর আগেই রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ‘নেম দ্যাট শিপ’ নামের এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ৯১ হাজার নাম সংগৃহীত হয়। বিপুলসংখ্যক নাম থেকে বেছে মিশিগানের জর্জ ওয়েজারের পাঠানো ‘ওয়েসিস অব দ্য সিজ’ নির্বাচন করা হয়।
সাদাম্পটন ও ইংল্যান্ডের প্রমোদতরী: রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ক্রুজ লাইনের মালিকানাধীন ফ্রিডম ক্লাস ক্রুজ ইনডিপেনডেন্স অব দ্য সিজ ২০০৮ সালের এপ্রিল মাস থেকে যাত্রীসেবা দিয়ে আসছে। ১৫টি ডেকের ক্রুজ জাহাজটি পাঁচ হাজার ৩৭০ যাত্রী এবং এক হাজার ৩৬০ জন ক্রু পরিবহনে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের পর্যটকরা এর প্রধান গ্রাহক।
ইনডিপেনডেন্স অব দ্য সিজ গ্রীষ্মকালে সাদাম্পটন, ইংল্যান্ড এবং শীতকালে ফোর্ট লওডারডেলে ভ্রমণ করে। শীতের সময়ে সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এ ক্রুজ জাহাজটিতে ফ্রিডম অব সিজের মতো ওয়াটার পার্ক এইচটুও জোন, স্পোর্টস পুল, হুয়ালপুলের ব্যবস্থা করে থাকে। ক্রুজটির বারগুলোকে যাত্রীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আনতে বিশেষভাবে আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে।
এ ছাড়া রয়েছে বিশ্বের নামিদামি কিছু ক্যাসিনোর শাখা। এখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের কোনো ক্যাসিনোতে সরাসরি খেলার সুযোগ পান পর্যটকরা। ক্রুজটিতে স্ট্রিট শপিংয়ের মাধ্যমে যাত্রীরা বিভিন্ন ধরনের পণ্য কিনতে পারবেন। কেবিনগুলোতে মোবাইল সংযোগ দেওয়ার জন্য ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা আছে। সমুদ্রের যত দূরেই থাকুন থাকবে মোবাইল ইন্টারনেট।
আইচ শো আপনাকে দেবে রোমাঞ্চকর অনুভূতি। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর ভিন্ন এক পরিবেশ লক্ষ্য করা যায় এখানে। দূর থেকে মনে হয় এ যেন চলন্ত কোনো শহর। রয়েছে দুটি হেলিপ্যাড। সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়। রয়েছে নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী ও হাসপাতাল। এককথায় বলতে গেলে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সবকিছুই রয়েছে এই ইনডিপেনডেন্সে। তাই তো কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার খরচ করে সবাই ছুটে যান এখানে।
বিল গেটসের প্রমোদতরী: বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির তালিকায় সবার শীর্ষে বিল গেটস। তার টাকার পরিমাণ আসলে কত তিনি নিজেও জানেন না। প্রতিনিয়ত তার সম্পদের পরিমাণ বাড়ছেই। যদিও তিনি তার সম্পত্তির বেশির ভাগ অংশই সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য দান করে দিয়েছেন। নিজের সন্তানদের করেছেন সুশিক্ষিত।
বিল গেটসের লাইফস্টাইল কেমন এসব নিয়ে আমাদের সবারই কৌতূহল। তার বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়ি আছে ঠিকই, কিন্তু বাস্তবে বিল গেটস খুবই সাধারণ জীবন-যাপন করে থাকেন। তারপরও তার রয়েছে বিলাসবহুল প্রমোদতরী। এটি একটি সাগরের বুকে ভাসমান বাড়ি বললেই বরং উত্তম।
এখানে রয়েছে রেস্টুরেন্ট ও বার, পাঁচটি সুইমিংপুল, একটি ক্যাসিনো, একটি বলরুম, থিয়েটার— এককথায় নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুই। তার বিলাসবহুল ভাসমান প্রমোদতরীর ভিতরটা দেখলে আপনি অবাক না হয়ে পারবেন না। মাইক্রোসফট কোম্পানির মালিক বিল গেটস এখানে বসেই তার সব কাজ সম্পাদন করতে পারেন। এমনকি উন্নত ইন্টারনেট ব্যবস্থার মাধ্যমে তিনি সেরে নিতে পারেন জরুরি যে কোনো মিটিং।
আর্ট কালচারের নানা প্রদর্শনী: ‘নেভিগেটর অব দ্য সি’ ভয়েজার ক্লাস ক্রুজ জাহাজের অন্তর্গত। এটি রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালের মালিকানাধীন ফিনল্যান্ডের বিখ্যাত অ্যাকের ফিনইয়ার্ডে নির্মিত। ক্রুজটি গ্রীষ্মকালে যাত্রীদের জন্য বিশেষ ধরনের প্যাকেজ দিয়ে থাকে। আর্ট এবং কালচারে আগ্রহীদের এক্সিবিশন দেখানোর ক্রুজটি চার মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে।
এককথায় বলতে গেলে সারা বছরই কোনো না কোনো প্রদর্শনী চলতে থাকে এখানে। পানির নিচে সাঁতার কাটার জন্য রয়েছে বিশেষভাবে সাতটি ডেকের ব্যবস্থা। ক্রুজটির সাজসজ্জা, অভিনব করতে দিনের বেলা এবং সন্ধ্যায় আলাদা আলোকসজ্জা করা হয়। আর খাবারের ক্ষেত্রে নতুনত্ব দিতে উইন্ডজেমার বাফেল এলাকা যাত্রীদের কাছে সুপরিচিত।
রেস্টুরেন্টগুলোতে পাওয়া যায় নানা মুখরোচক খাবার। সেকেন্ড জেনারেশনের এই ক্রুজ জাহাজটিতে কাচের নির্মিত বিশেষ বেলকনি রয়েছে। যেখান থেকে খুব সহজে সমুদ্রের অবারিত সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। আর ফার্স্ট জেনারেশন সল্ট অ্যাকুরিয়ামে পিয়ানোর সঙ্গে বিশেষ ধরনের বসার ব্যবস্থা আছে।
রয়েছে বিখ্যাত সব ব্র্যান্ডের জুয়েলারি ও সানগ্লাসের আউটলেট। প্রমোদতরীটির ভিতরটা দেখলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। এখানে রয়েছে উন্নত বার এবং সুইমিংপুলের ব্যবস্থা। আরও রয়েছে যে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সুবিশাল বলরুম। সারা বিশ্ব থেকে শিল্প-সাহিত্যের পুরোধা ব্যক্তিত্বরা এখানে এসে জমায়েত হন। নানা বিখ্যাত চিত্রকর্মও এখানে প্রদর্শিত হয়।
এ ছাড়াও রয়েছে খেলাধুলার নানা ব্যবস্থা। টেবিল টেনিস, পুল, বিলিয়ার্ড ইত্যাতি নানা খেলার সুব্যবস্থা রয়েছে এখানে।
লেখক: শামছুল হক রাসেল ও সাইফ ইমন তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন