সাশ্রয়ী জীবনযাপন, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগের কারণে এশিয়া এখন বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের কাছে জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।
বিদেশে বসবাসের অভিজ্ঞতা নিয়ে এ বছরের ইন্টারন্যাশনাল এক্স প্যাট ইনসাইডার সার্ভেতে ১৭২টি দেশের ১০ হাজারের বেশি প্রবাসী অংশ নেন। জরিপে দেখা গেছে, আর্থিক সচ্ছলতা পাওয়া প্রবাসীদের মূল লক্ষ্য। এই দিক থেকে এশিয়ার দেশগুলো প্রবাসীদের বেশ সুবিধা দিচ্ছে। বিশ্বের শীর্ষ ১০ প্রবাসী গন্তব্যের মধ্যে পাঁচটি এশিয়ায়। দেশগুলো হলো থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, চীন, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া।
এ বছর সূচকে চীনের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। ২০২৪ সালে ১৯তম অবস্থান থেকে উঠে এসে এবার ষষ্ঠ হয়েছে দেশটি। অন্যদিকে মালয়েশিয়া প্রথমবারের মতো শীর্ষ ১০-এ প্রবেশ করেছে। ভিয়েতনাম রয়েছে পঞ্চম স্থানে।
বিবিসি এই তিনটি দেশে বসবাসরত প্রবাসীদের অভিজ্ঞতা নিয়ে সম্প্রতি একটি লেখা প্রকাশ করে। সেখান থেকে বোঝা যায়, প্রবাসীরা কেন দেশগুলো পছন্দের তালিকায় রাখছে।
চীন
এ বছর প্রবাসীদের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে চীন। কাজের সুযোগ, ভালো বেতন, চাকরির নিরাপত্তা এবং সামগ্রিক জীবনমানের জন্য দেশটি প্রবাসীদের কাছ থেকে ভালো রেটিং পেয়েছে। তবে অভিজ্ঞতা শহরভেদে ভিন্ন। আন্তর্জাতিক কমিউনিটি, প্রতিষ্ঠানের আধিক্য, রেস্টুরেন্ট এবং সামাজিক মেলামেশার সুযোগ বেশি বলে সাংহাই প্রবাসীদের মধ্যে খুবই আকর্ষণীয়। অন্যদিকে বেইজিং সংস্কৃতির দিক থেকে সমৃদ্ধ হলেও সেখানে প্রবাসীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর শেনজেনকে বলা হয় দেশটির ‘টেক ক্যাপিটাল’। সেখানে আধুনিক অবকাঠামো, পরিচ্ছন্ন রাস্তা, উন্নত পরিবহনব্যবস্থাসহ প্রচুর চাকরির সুযোগ রয়েছে। প্রবাসীরা এখানে ই-বাইক ব্যবহার করে সহজে চলাচল করতে পারে। চীনে প্রবাসীদের জীবনযাত্রা বেশ সুবিধাজনক।
মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়া প্রথমবারের মতো শীর্ষ ১০ প্রবাসী গন্তব্যের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। দেশটিতে বসবাসের খরচ সাশ্রয়ী। এ ছাড়া ভালো মানের বাসস্থান এবং ভাষাগত সুবিধা প্রবাসীদের আরও আকর্ষণ করছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী ক্রিস্টিন রেনল্ডস বলেন, ‘এখানে খাপ খাওয়ানো তুলনামূলক সহজ। অল্প খরচে পছন্দমতো অ্যাপার্টমেন্ট পাওয়া যায়। যেখানে জিম ও সুইমিংপুল আছে।’
মালয়েশিয়ার বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি প্রবাসীদের বেশি মুগ্ধ করে। এখানে সব ধর্মের মানুষের স্বাধীন ধর্মচর্চার সুবিধার জন্য প্রার্থনালয় রয়েছে। প্রবাসীরা এখানে কাজের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য রাখতে পারেন। ডিজিটাল নোমাডদের জন্য সহজ ভিসা, উন্নত ইন্টারনেট, প্রচুর কো-ওয়ার্কিং স্পেস এবং দীর্ঘমেয়াদি বসবাসের জন্য ‘মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম’ কর্মসূচি প্রবাসীদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ তৈরি করেছে।
ভিয়েতনাম
পঞ্চম স্থানে থাকা ভিয়েতনাম ব্যক্তিগত অর্থনীতির দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে। তাদের সাশ্রয়ী জীবনযাত্রা বরাবরই প্রবাসীদের কাছে বসবাসের জন্য সেরা দেশগুলোর একটি। মার্কিন প্রবাসী নরম্যান বোর জানান, দা নাং শহরে সমুদ্রের কাছে মাত্র ৩৬০ ডলার ভাড়ায় ফ্ল্যাট পাওয়া যায়। এ ছাড়া ভিয়েতনামে খাবার ও পরিবহনও বেশ সস্তা। সেখানে প্রবাসীরা স্থানীয় সমাজের সঙ্গে দ্রুত মিশে যেতে পারেন। প্রতিবেশী, দোকানি এমনকি রাস্তার হকারও যেকোনো সাহায্যে পাশে থাকে। তবে কাগজপত্র-সংক্রান্ত কাজ কিছুটা জটিল। তবে এত সব সুবিধার কাছে এটি তেমন কঠিন কিছু মনে হয় না বেশির ভাগ প্রবাসীর কাছে।
ভিয়েতনামের আবহাওয়া নতুনদের জন্য প্রতিবন্ধকতা হতে পারে। কিন্তু সেটি একসময় ঠিক হয়ে যায়। এ ছাড়া ভিয়েতনামের কফি সংস্কৃতি সবাইকে বেশ আকৃষ্ট করে। সাইগন নদীর ধারে ছোট ছোট ক্যাফেতে সময় কাটানোর জন্য বিভিন্ন নতুন স্বাদের কফি পাওয়া যায়।
এ বছর শীর্ষ ১০ প্রবাসী গন্তব্য
প্রবাসীদের জন্য এশিয়ার দেশগুলো সেরা গন্তব্যে পরিণত হয়ে উঠছে। সাশ্রয়ী জীবনযাপন, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আর কাজের সুযোগ মিলিয়ে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, চীন, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো দেশ এখন প্রবাসীদের ঝামেলামুক্ত এবং কম খরচে জীবনযাপনের সুযোগ দিচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি