বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৭ অপরাহ্ন

প্রথমবারের মতো টাকায় বৈদেশিক বিল পরিশোধ করল বাংলাদেশ

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০২৩

বিদেশি ঋণ-অর্থায়নকৃত ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো স্থানীয় মুদ্রায় বিল প্রদান করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে আরও ভালোভাবে সংরক্ষণের আরেকটি পদ্ধতির সূচনা হলো।

গত বছরের শেষদিকে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন হয়। প্রকল্পটি নির্মাণে ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৭ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা) ব্যয় হবে।

চীন ২% সুদে পুরো প্রকল্পের মোট খরচের ৮৫% ঋণ হিসেবে দিচ্ছে, যা ২০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করা যাবে। প্রকল্পের বাকি ১৫% খরচ বহন করছে বাংলাদেশ সরকার।

প্রকল্পের বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা চীনা ঠিকাদার চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের কাছে মার্কিন ডলারের মাধ্যমে ঋণের অংশ পরিশোধ করছে চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক। অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকার ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করবে।

বাংলাদেশ সরকারের ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ১৫% খরচ বহনের প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক শাহাবুদ্দিন খান সংবাদমাধ্যম ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমরা টাকার মাধ্যমে বিলটি গ্রহণ করতে তাদের (ঠিকদার) রাজি করিয়েছি। কারণ বাংলাদেশে তাদের কিছু খরচ করতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তানা আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।” প্রকৌশলী ও কর্মীসহ ২৫০ জনের বেশি চীনা নাগরিক এবং এক হাজার বাংলাদেশি বর্তমানে এ প্রকল্পে কাজ করছেন বলে জানান তিনি।

বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে চাহিদা-সরবরাহের ব্যবধান ঘোচাতে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রির এবং টাকার অবমূল্যায়নের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স থেকে সম্মিলিত প্রাপ্তির তুলনায় উচ্চ আমদানি বিলের কারণে গত ৩১ মে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৯.৯২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা গত বছরের একই দিনে ৪২. ২০ বিলিয়ন ডলার ছিল।

গত বছরের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। গত অক্টোবরে এ প্রকল্পের প্রথম কিস্তি বাবদ ১৩০ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১,৩৩৯ কোটি টাকা) দেওয়া হয়। এর মধ্যে সরকারের অংশের পরিমাণ ৩৪ কোটি টাকা।

আগামী জুনে এ প্রকল্পের ব্যয়ের জন্য পরের কিস্তিতে ৫৮.২৫ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬০০ কোটি টাকা) দেওয়ার কথা রয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে ৯০ কোটি টাকা।

শাহাবুদ্দিন খান বলেন, “বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংক্রান্ত পরিস্থিতি ভালো না হওয়া পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকবে।”

২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর, আশুলিয়া, বাইপাইল এবং ইপিজেডকে যুক্ত করবে।

প্রকল্পের নথি অনুযায়ী, এই এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে দেশের ৩০ জেলার মানুষ দ্রুত ও সহজে ঢাকায় প্রবেশ করতে ও বের হতে পারবে। এর মাধ্যমে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি ০.২১% বাড়বে বলেও আশা করা হচ্ছে।

প্রকল্পের ৫% এরও বেশি বাস্তবায়িত হয়েছে এবং জুনের শেষ নাগাদ তা ৮% এ পৌঁছাবে উল্লেখ করে শাহাবুদ্দিন খান বলেন, “আগামী অর্থবছরের মধ্যে আমাদের সামগ্রিক প্রকল্পের ৩০% সম্পন্নের লক্ষ্য রয়েছে।”

বিদেশি ঋণ-অর্থায়নকৃত প্রকল্পের জন্য প্রথমবারের মতো স্থানীয় মুদ্রায় বিল প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের বৈদেশিক সহায়তা বাজেট এবং হিসাব শাখার যুগ্ম সচিব মো. মাসুদুল হক। তিনি বলেন, “দেশের সব জাতীয় প্রকল্পে একই কাজ করা হলে এটি দেশের জন্য ইতিবাচক পরিণত হবে এবং কিছু বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।”

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হানের ধারণা, ঠিকাদারের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে এটি সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, “এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং এ উদ্যোগটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ কমাতে সাহায্য করবে।”

তিনি বলেন, “এ উদ্যোগটি অর্থ সঞ্চালনেও সহায়তা করবে এবং স্থানীয় সরবরাহকারীরা এতে সম্পূর্ণভাবে উপকৃত হবে। যদি এ ব্যবস্থাটি বিদেশি ঋণের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোতে চালু করা যায়, তাহলে এটি দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com