বাংলাদেশি নারী নাজমুন নাহার। ভ্রমণপিপাসু নাজমুন নাহারের অদম্য ইচ্ছা ছিল তিনি দেশ ভ্রমণ করে রেকর্ড গড়বেন। আর বাংলাদেশকে নিয়ে যাবেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। সেখানে ওড়াবেন বাংলাদেশের পতাকা। বছরের পর বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে তিনি সেই কাজে সফল হচ্ছেন। পাশাপাশি একটি দেশে সফর করার পর নতুন আরেকটি দেশ সফর করার জন্য অর্থও উপার্জন করেছেন। এই সাফল্য কেবল তার একার নয়, বাংলাদেশেরও। কারণ লাল-সবুজের পতাকা তিনি বছরের পর বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাচ্ছেন ও সেখানে ওড়াচ্ছেন। বাংলাদেশের পতাকার পাশাপাশি তিনি উঁচু করে ধরেছেন বিশ্ব শান্তির বার্তা ‘নো ওয়ার, অনলি পিস’।
জানা গেছে, প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নাজমুন নাহার ১৬০টি দেশ ভ্রমণের রেকর্ড গড়েছেন। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি ১৬০তম দেশ হিসেবে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর পুণ্যভূমি সৌদি আরবের মাটিতে পা রাখেন। তিনি সেখানে রিয়াদ, জেদ্দা ও মক্কা সফর করেন এবং ওমরাহ পালন করেন। সেখান থেকে তিনি বাংলাদেশে যান। তিনি বিশ্ব শান্তির বার্তা ও পরিবেশ সচেতনতায় তরুণ ও শিশুদের উৎসাহিত করেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত রোটার্যাক্ট দক্ষিণ এশিয়া সম্মেলনে নাজমুন নাহার বিশ্ব ভ্রমণের সাহসিকতার গল্প তুলে ধরেন। সেখানে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৪৫০ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। রোটেশিয়ার পক্ষ থেকে নাজমুন নাহারকে বিশেষ সম্মাননা ‘রোটেশিয়া লেজেন্ডস অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়।
তিনি ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশন আয়োজিত ‘মিট দ্য সেলিব্রেটি’ সেশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সারা দেশ থেকে আসা তরুণ ডিবেটারদের উৎসাহিত করেন। এদিকে ৩ মার্চ তিনি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের আমন্ত্রিত স্পিকার হিসেবে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সপ্তম ডিভিশনাল রেড ক্রিসেন্ট ক্যাম্পে যোগ দেন। সেখানে সারা দেশ থেকে আসা ইয়ুথ ভলান্টিয়ারদের সামনে তার বিশ্ব ভ্রমণের সংগ্রাম, সাফল্য ও অর্জনের কথা তুলে ধরেন।
নাজমুন নাহার ২০০০ সালে ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ব ভ্রমণ অভিযাত্রা শুরু করেন। ২০১৮ সালের ১ জুন জিম্বাবুয়েতে ১০০তম দেশ হিসেবে ভ্রমণের রেকর্ড করেন। ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর আফ্রিকার দেশ সাওটোম ও প্রিন্সিপ ভ্রমণ করেন। বিশ্বের প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে বিশ্ব ভ্রমণের নতুন একটি ইতিহাস তৈরি করেন তিনি।
নাজমুন নাহার যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে ঠিকানা অফিসে আসেন এবং ঠিকানার কাছে তার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ও গল্প শোনান। তিনি বলেন, যত দিন সম্ভব তত দিন দেশ ভ্রমণ করে যাবেন। তিনি কোনো দেশ ভ্রমণকালে সেখানকার স্থানীয় কমিউনিটির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যান।
নাজমুন নাহার ইতিমধ্যে প্রায় ৬০টি পুরস্কার অর্জন করেছেন। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ও বরণ্যে ব্যক্তিত্বের তরফ থেকে তাকে সম্মান জানানো হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুরের মেয়ে হলেও জীবনের অনেকটা সময় বিদেশে কাটিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের পাশাপাশি সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।