সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৪ অপরাহ্ন

প্যারিসে গ্রেপ্তার অভিবাসী নথি জালিয়াতি চক্রের ৮ সদস্য

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০২৩

ফ্রান্সে অনিয়মিত অভিবাসীদের প্রবেশ ও বসবাসে সহায়তার জন্য জাল নথি তৈরিতে জড়িত একটি শক্তিশালী চক্রের আট জন সক্রিয় সদস্যকে আটক করা হয়েছে৷ প্যারিসে তাদের আটক করেছে অনিয়মিত অভিবাসনের বিরোধী সাব-ডিরেক্টরেটের তদন্তকারীরা।

সোমবার (৫ জুন) প্যারিসের বিচারিক আদালত সূত্রে সন্দেহভাজনদের আটকের তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এই চক্রটি প্রায় দুই বছর ধরে গোপনীয়তার সঙ্গে প্রশাসনিক নথি, রেসিডেন্স কার্ড এবং সিকিউরিটি সোশ্যাল কার্ড জালিয়াতির কাজ চালিয়ে আসছিল।

তবে তারা শেষ পর্যন্ত প্যারিসের পুলিশ সদর দপ্তরের আওতাভুক্ত একটি ছোট তদন্ত দলের হাতে ধরা পড়েছেন। ফ্রান্সের পুলিশের তালিকায় থাকা সন্দেহভাজন জালিয়াতি চক্রের মধ্যে এই চক্রটি অন্যতম প্রধান হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিল।

প্রায় এক বছর ধরে বিশেষায়িত পুলিশ সদস্যদের একটি ছোট কমান্ডো দল এই চক্রের সব কার্যক্রমে নজর রাখছিল৷

ফরাসি গণমাধ্যম টিএফ১-এর তথ্য অনুসারে, প্যারিসের একজন তদন্তকারী বিচারক গত সপ্তাহে তাদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে তথ্য দিয়েছিলেন। আটককৃতদের মধ্যে সাতজন পুরুষ এবং একজন নারী রয়েছেন। এদের সবাই ২১ থেকে ৫৫ বছর বয়সি। তাদের সবাইকে বৃহত্তর প্যারিস অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

জালিয়াতির মাধ্যমে নথি পেতে একেকজন অনিয়মিত অভিবাসী অন্তত ১৫ হাজার ইউরো বা ১৫ লাখ টাকা নেটওয়ার্কটিকে দিয়েছেন৷ তারা নগদ অর্থের বিনিময়ে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ফ্রান্সে বসবাসের অধিকার পেয়েছিলেন।

তদন্ত দলের একজন কর্মকর্তা জানান, চুক্তির বিনিময়ে তারা পাসপোর্ট, পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বেতনের রশিদ, আয়কর সনদ, মেডিকেল প্রেসক্রিপশন, কাজের চুক্তিসহ পুরো প্যাকেজ পেয়েছিলেন। মিথ্যা নথির তালিকা বেশ বড়। ফ্রান্সে ইতিপূর্বে এমন জালিয়াতি চোখে পড়েনি।

এই নথিগুলোর মধ্যে বড় একটি অংশ তুর্কি বংশোদ্ভূতদের পরিচালিত একটি ফার্মেসিতে কর্মরত সহযোগীদের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছিল। আটক হওয়া ব্যক্তিরা পুরো প্রক্রিয়ায় একে অপরের জন্য বিভিন্ন কোড ও ছদ্মনাম ব্যবহার করত।

প্যারিস পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তার বর্ণনা অনুসারে, চক্রটি একটি বিশেষ স্কিম তৈরি করেছিল। এটির প্রক্রিয়া অবাক করে দেয়ার মতো।

চক্রটি ফ্রান্স ছাড়াও অনেক ইউরোপীয় দেশের অধীনে মিথ্যা নথি তৈরিতে জড়িত। চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভেনিয়া, লিথুয়ানিয়া, ক্রোয়েশিয়া, ইটালি, পোল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের নথি তৈরি করে তারা অনিয়মিত অভিবাসীদের ফ্রান্সে বৈধ করে দিত। উল্লেখিত দেশগুলোর অফিসিয়াল নথি জাল করা সহজ হওয়ায় তারা সহজে এগুলো ফরাসি কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবহার করত।

জড়িত বেশ কিছু সরকারি কর্মকর্তা

ফ্রান্সে অভিবাসীদের বৈধতার পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় স্থানীয় প্রেফেকচুরগুলোতে।

এই জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে বৃহত্তর প্যারিস অঞ্চলের প্রেফেকচুরগুলোতে কর্মরত বেশ কিছু দুর্নীতিবাজ এজেন্টরাও জড়িত ছিল বলে তদন্ত সূত্রে জানা গেছে।

ভাল দো ওয়াজ (৯৫) ডিপার্টমেন্টের আওতাধীন আর্জন্তই প্রেফেকচুরের একজন এজেন্ট, সেইন সেইন্ট দেনিস (৯৩) ডিপার্টমেন্টের ববিনি প্রেফেকচুরের একজন কর্মকর্তা এবং অউ দ্যো সেইন (৯২) ডিপার্টমেন্টের অধীনে থানা নন্তের প্রেফেকচুরের একজন এজেন্ট এই চক্রের হয়ে পুরো কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্বে ছিলেন। তারা এই নেটওয়ার্কের কেন্দ্রীং সূত্র হিসেবে কাজ করতেন।

অর্থাৎ সরকারি সার্ভারে মিথ্যা নথিগুলি কম্পিউটারের মাধ্যমে যাচাই করে তারা জালিয়াতিতে ভূমিকা রাখতেন। এই কাজের প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে সেটি জেনেও সন্দেহভাজনরা পূর্বে কখনও তাদের ঊর্ধ্বতনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেননি।

বৃহত্তর প্যারিস অঞ্চলের বিভিন্ন শিসা বারে এই চক্রটি তাদের গ্রাহক বা অনিয়মিত অভিবাসীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করত। তারা অভিবাসীদের ইউরোপের অন্য দেশের নাগরিক বানিয়ে ফ্রান্সে বৈধতা নিয়ে দিত। এছাড়া বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তারা ফ্রান্সে থাকার পাঁচ বছরের রেসিডেন্স পারমিট বানিয়ে দিত যেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অতিরিক্ত পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন করা যায়।

তদন্তের সময় এই চক্রের সহায়তা নেয়া প্রায় চল্লিশজন গ্রাহককে শনাক্ত করা হয়েছে। কিন্তু অভিবাসীদের চূড়ান্ত সংখ্যা সম্ভবত কয়েক শত। কারণ অন্তত দুই বছর ধরে চক্রটি তাদের ব্যবসা চালিয়েছে।

অভিযুক্ত আট ব্যক্তি

এসডিএলআইআই-এর অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের তদন্তকারীদের আওতায় তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন আটক হওয়া আট ব্যক্তি। তবে শুরুতে তারা নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে কৌশলে কথা বলেন৷

বেশ কিছু সন্দেহভাজন জিজ্ঞাসাবাদের সময় সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে থাকা ভিডিও নজরদারি, ওয়্যারট্যাপিংসহ নানা প্রমাণ দেখানোর পর তারা তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড স্বীকার করে নেন।

একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তাদের সবাইকে উপস্থাপন করা হলে আটজনকেই অভিযুক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে পাঁচজন এখন কারাগারে আছেন। বাকিদের বিচার বিভাগীয় তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। প্রেফেকচুরের দুই এজেন্টকে জনপ্রশাসন থেকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

চক্রটির বিভিন্ন আস্তানা ও দুটি ফার্মেসিতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে এক লাখ ১০ হাজার ইউরোর বেশি নগদ অর্থ, অত্যাধুনিক লেজার প্রিন্টার, কম্পিউটার, কালি প্যাড, ফাঁকা প্লাস্টিকের কার্ড, অগণিত পরিচয়পত্রসহ নথি উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, স্পষ্টতই নেটওয়ার্কটির এই লাভজনক ব্যবসা থেকে তাড়াতাড়ি সরে যাওয়ার কোন ইচ্ছা ছিল না। গ্রুপের একজন সদস্যকে সন্দেহ করা হচ্ছে যে তিনি এই গ্যাং থেকে অর্জিত কৌশলের সাহায্যে কয়েক মাস আগে তার নিজ কমিউনিটিতে থাকা অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়মিতকরণের একটি নেটওয়ার্ক চালু করেছেন।

নথি জালিয়াতির পাশাপাশি তারা ঘুষের বিনিময়ে প্রেফেকচুরে নিযুক্ত একজন এজেন্টের মাধ্যমেও কাজ চালাতেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com