অ্যান্টার্কটিকা উপদ্বীপের পশ্চিম উপকূলে পামার দ্বীপপুঞ্জ। এখানে গাউডিয়ার নামে একটি দ্বীপে রয়েছে। দ্বীপটি ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলের অংশ। আর এখানেই রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দূরবর্তী পোস্ট অফিস। যার নাম পোর্ট লকরয়। পোস্ট অফিসটি এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে একটি।
গাউডিয়ার দ্বীপ, যেখানে পোর্ট লকরয় অবস্থিত, সেখানে জেন্টু পেঙ্গুইন নামক কিছু পেঙ্গুইনের আবাসস্থল রয়েছে। আর এ জন্যই এটি পেঙ্গুইন পোস্ট অফিস নামেও পরিচিত। দর্শনার্থীরা তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল দেখতে আসে। এই প্রাণীগুলোকে কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করে। দর্শনার্থীরা পেঙ্গুইনের আচরণ, বাসা বাঁধার ধরণ এবং জীবনধারা স্বচক্ষে দেখতে পান। তবে এর জন্য নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ আছে। যাতে পেঙ্গুইনদের আবাসস্থল বিঘ্নিত না হয়।
পোর্ট লকরয়, অ্যান্টার্কটিকায় প্রতিষ্ঠিত প্রথম ব্রিটিশ বৈজ্ঞানিক ঘাঁটিগুলোর মধ্যে একটি। এটি একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্য বহন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, পোর্ট লকরয় গোপন যুদ্ধকালীন ঘাঁটি হিসেবে কাজ করেছিল। যুদ্ধের পরে, ১৯৬২ সাল পর্যন্ত একটি গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছিল। এরপর এটি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে, ১৯৯৬ সালে, পোর্ট লকরয়কে পুনরুদ্ধার করা হয়। এ সময় এটিকে একটি যাদুঘর এবং পোস্ট অফিস হিসেবে খোলা হয়।
পোর্ট লকরয়, অ্যান্টার্কটিক চুক্তি ব্যবস্থার অধীনে একটি ঐতিহাসিক স্থান এবং স্মৃতিস্তম্ভ। যা কিনা অ্যান্টার্কটিক অনুসন্ধানের ইতিহাস প্রদর্শন করে। এখানকার যাদুঘরে ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং ফটোগ্রাফ রয়েছে। যেগুলো অ্যান্টার্কটিকের বিজয় সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি সরবরাহ করে। এটি অ্যান্টার্কটিকার সচল পোস্ট অফিসগুলোর মধ্যে একটি। আজও এই পোস্ট অফিস, দক্ষিণতম মহাদেশ থেকে পোস্টকার্ড এবং চিঠি প্রেরণের ব্যবস্থা করে থাকে। এখানকার পোস্টকার্ডগুলোতে বিশেষ অ্যান্টার্কটিক স্ট্যাম্প এবং অনন্য পেঙ্গুইন-আকৃতির পোস্টমার্ক দেখা যায়।
পোর্ট লকরয় ঘুরতে অনেক পর্যটক জাহাজে পাড়ি দিয়ে আসেন। এটি অ্যান্টার্কটিকার অন্যতম ব্যস্ততম জায়গা। অনেকেই শখের বসে বিশ্বের এই প্রত্যন্ত পোস্ট অফিস থেকে প্রিয়জনদের পোস্টকার্ড পাঠিয়ে থাকেন। আবার কেউ আসেন পেঙ্গুইনের কলোনি ঘুরে বেড়াতে।
পোর্ট লকরয়ের ঐতিহাসিক তাৎপর্য, যাদুঘর, পেঙ্গুইন উপনিবেশ এবং অ্যান্টার্কটিকা থেকে মেইল প্রেরণের সুযোগ থাকায়, আজ এটি পর্যটকদের কাছে একটি উল্লেখযোগ্য গন্তব্য হয়ে ওঠেছে।
সূত্র- টাইমস অব ইন্ডিয়া