রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪১ অপরাহ্ন

পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল দশ স্থান

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০২৩

বাংলাদেশে বসবাস করে বিশ্বের সবচেয়ে শীতল স্থানের অবস্থা অনুভব করা কঠিন। কারণ, বাংলাদেশ জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ। মানে বেশি শীতও নয় আবার বেশি গরমও নয়। তুমি কি জানো, পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল স্থান কোনটি? অথবা পৃথিবীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কত ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে? এটুকু বলতে পারি, বিশ্বের সবচেয়ে শীতল স্থানের নাম শুনলে তুমি হয়তো সেখানে যেতে চাইবে। কিন্তু গেলেও টিকে থাকা মুশকিল। কারণ, সেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ৯৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুঝতে পারছ, কী অবস্থা হবে?

হয়তো এটাও তুমি কল্পনাও করতে পারছ না। তাই জানিয়ে রাখি, বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাতেই দেশের মানুষ কেঁপে উঠেছিল। এবার ভেবে দেখো, মাইনাস ৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কতটা ঠান্ডা হতে পারে।

চলো তাহলে, দেখে নিই পৃথিবীর কোন কোন এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। জানিয়ে রাখা ভালো, এসব স্থানের বেশির ভাগ অঞ্চলেই মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা অসম্ভব। তবে বিজ্ঞানীরা সেখানে বেঁচে থাকার কিছু উপায় খুঁজে বের করেছেন। তুমি সুস্থ অবস্থায় সেখানে গেলেও মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে জমে বরফ হয়ে যাবে। সাধারণ থার্মোমিটার কাজ করে না সেখানে। এসব স্থানের বেশির ভাগই গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। অনেক যুগান্তকারী আবিষ্কারও হয়েছে সেখানে। চলো, সেই স্থান সম্পর্কে অল্প পরিসরে জানা যাক।

১০. নর্থ আইস, গ্রিনল্যান্ড

তাপমাত্রা: মাইনাস ৬৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস

সময়: জানুয়ারি, ১৯৫৪

১৯৫২ সালে ব্রিটিশ নর্থ গ্রিনল্যান্ড অভিযানে এ গবেষণাকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিজ্ঞানীদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সেখানে পৌঁছানোর জন্য প্রথমে সামরিক বাহিনীর বিমান ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কোনো কারণে বিমান বিধ্বস্ত হলে ব্রিটিশ সরকার আর ঝুঁকি নিতে চায়নি। পরে কুকুরের সাহায্যে স্লেজ বানিয়ে সরঞ্জাম পৌঁছানো হয়েছিল সেখানে। ১৯৫৪ সালে নর্থ আইসে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করেছিল।

৯. ওয়মিয়াকন, রাশিয়া

তাপমাত্রা: মাইনাস ৬৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস

সময়: ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৩

স্থায়ীভাবে মানুষ বসবাস করে এ রকম সবচেয়ে শীতল স্থান পূর্ব সাবেরিয়ার ওয়মিয়াকন গ্রাম। এখানে বসবাসকারী মানুষেরা পেশায় হরিণপালক। এক হাজারের কম মানুষ বাস করে সেখানে। দুটি উপত্যকার মধ্যে এই গ্রামটি অবস্থিত। এ কারণে শীতল বাতাস আটকে থাকে। ফলে পরিস্থিতি আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ৫৫ ডিগ্রির নিচে নেমে গেলে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

৮. ক্লিঙ্ক রিসার্চ স্টেশন, গ্রিনল্যান্ড

তাপমাত্রা: মাইনাস ৬৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস

সময়: ডিসেম্বর, ১৯৯১

গ্রিনল্যান্ড বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ। সব সময় বরফের চাদরে ঢাকা থাকে। এখানকার জনসংখ্যাও খুব কম। বিজ্ঞানীরা খুব কষ্ট করে গবেষণা করেন এখানে। তবে এই কষ্টের মূল্যও আছে। গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু গবেষণার পাশাপাশি এই স্টেশনগুলো উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে চরম অবস্থা রেকর্ড করেছে। ওটি গ্রিনল্যান্ডের সবচেয়ে উঁচু স্থান গুনবিয়র্নের কাছাকাছি ৩ হাজার ১০৫ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।

৭. ভারখোয়ানস্ক, রাশিয়া

তাপমাত্রা: মাইনাস ৬৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস

সময়: ফেব্রুয়ারি, ১৮৯২

এ শহরে প্রায় এক হাজার লোকের বাস। রাশিয়ার এই শহর আর্কটিক সার্কেলের মধ্যে অবস্থিত। এটি উত্তর মেরুর সবচেয়ে শীতল স্থানগুলোর মধ্যে একটি। এখানে উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, বুধ গ্রহের মতো এখানেও তাপমাত্রা ওঠানামা করে। গ্রীষ্মকালে এখানকার তাপমাত্রা হয় প্রায় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার শীতকালে প্রায় মাইনাস ৬৯ ডিগ্রিতে নেমে যায়। বুধ গ্রহে দিনের বেলায় তাপমাত্রা ৪৩০ ডিগ্রি থাকলেও রাতে মাইনাস ১৮০ ডিগ্রিতে নেমে যায়।

৬. ডেনালি, আলাস্কা

তাপমাত্রা: মাইনাস ৭৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস

সময়: ১৯৫০ ও ১৯৬৯ সালের কিছু সময়ে

উত্তর আমেরিকার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গটি দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ হাজার মিটারেরও বেশি উচ্চতায় এটি অবস্থিত। পর্বোতারোহীদের জন্য এটা স্বর্গ। এই শৃঙ্গের শীর্ষের কাছাকাছি অবস্থিত একটি আবহাওয়া স্টেশনে ২০০৩ সালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ৭৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। পর্বতটি একসময় মাউন্ট ম্যাককিনলি নামে পরিচিত ছিল। তবে পর্বতের আশপাশের অঞ্চলে যাঁরা বসবাস করেন, তাঁরা এটিকে ডেনালি নামেই ডাকেন।

৫. ডোম আর্গাস, অ্যান্টার্কটিকার মালভূমি

তাপমাত্রা: মাইনাস ৮২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস

সময়: জুলাই, ২০০৫

পৃথিবীর তাপমাত্রা কত নিচে নামতে পারে? বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, হয়তো এই জায়গায় পৃথিবীর তাপমাত্রা সবচেয়ে শীতল হবে। কিন্তু দেখতেই পাচ্ছ, আমরা মাত্র ৫ নম্বর সিরিয়ালে আছি। অর্থাৎ, আরও শীতল স্থান পৃথিবীতে আছে। ২০১৮ সালে বোল্ডার-কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ইনফ্রারেড ম্যাপিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার এমন কিছু অঞ্চল শনাক্ত করেছিলেন, যেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামতে পারে।

৪. আমুন্ডসেন-স্কট দক্ষিণ মেরু স্টেশন, অ্যান্টার্কটিকা

তাপমাত্রা: মাইনাস ৮২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস

সময়: জুন, ১৯৮২

এখানে যাঁরা গবেষণা করতে আসেন, তাঁরা বছরে মাত্র একটি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পারেন। বুঝতেই পারছ, এখনকার তাপমাত্রা কত কম। অ্যান্টার্কটিকা মালভূমিতে অবস্থিত স্টেশনটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার মিটার ওপরে অবস্থিত। এমনকি গ্রষ্মের দিনেও এখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হওয়া সম্ভব নয়। ১৯৫৬ সালে এখানে প্রথম ঘাঁটি গেড়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে এখানে প্রায় ১৫০ জন মানুষ থাকেন। বিজ্ঞানীরা এখানে নিউট্রিনোসহ আরও নানা বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন।

৩. ভস্টক রিসার্চ স্টেশন, অ্যান্টার্কটিকা

তাপমাত্রা: মাইনাস ৮৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস

সময়: জুলাই, ১৯৮৩

পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল স্থানগুলোর একটি। অদ্ভুতভাবে, সূর্যোজ্জ্বল দিনও বটে। ডিসেম্বর মাসে অ্যান্টার্কটিকার ভস্টক স্টেশনে বসবাসরত মানুষেরা ২২ ঘণ্টারও বেশি সূর্যালোক উপভোগ করেন। আবার অন্য সময় এখানে সামান্য সূর্যের আলোও দেখা যায় না। এটি অন্য যেকোনো আবহাওয়া স্টেশন থেকে সর্বনিম্ন গড় বার্ষিক তাপমাত্রা রেকর্ড করে। স্টেশনটি ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত করে।

২. ডোম ফুজি, অ্যান্টার্কটিকা

তাপমাত্রা: মাইনাস ৯৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস

সময়: আগস্ট, ২০১০

২০১০ সালে ল্যান্ডসেট ৮ স্যাটেলাইট থেকে জানা যায়, ডোম ফুজিই পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল স্থান। তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় মাইনাস ৯৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অঞ্চলের তাপমাত্রা বেশির ভাগ সময়ই মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকে। তারপরও অবিশ্বাস্যভাবে মানুষ এখানে টিকে থাকার উপায় খুঁজে পেয়েছেন। ১৯৯৫ সালে ডোম ফুজি নির্মাণ করা হয়েছিল।

১. পূর্ব অ্যান্টার্কটিক মালভূমি, অ্যান্টার্কটিকা

তাপমাত্রা: মাইনাস ৯৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস

সময়: মে, ২০২৩

বর্তমানে পৃথিবীর শীতলতম স্থান পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার মালভূমি। সেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ৯৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অ্যান্টার্কটিকা সারা বছর বরফের চাদরে ঢাকা থাকে। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, সেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ৯৩ ডিগ্রিতে পৌঁছায়। তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জার্নাল জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারস-এ প্রকাশিত তথ্যমতে, তাপমাত্রা আরও নিচেও নেমে যায় কখনো কখনো। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো-বোল্ডারের ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটাসেন্টারের জ্যেষ্ঠ গবেষক টেড স্ক্যাম্বোস বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা সম্ভবত এর চেয়ে কম হওয়া সম্ভব না।’

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস ও লাইভ সায়েন্স

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com