রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৫ অপরাহ্ন

পৃথিবীর সব চাইতে পরিষ্কার পরিছন্ন দেশটির নাম এস্তনিয়া

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
পৃথিবীর সব চাইতে পরিষ্কার পরিছন্ন দেশটির নাম এস্তনিয়া। যে দেশটাতে আমি বর্তমানে থাকছি। প্রতি বছরই এমন গবেষণা হয়। এ বছর এস্তনিয়ার অবস্থান একদম এক নাম্বারে! অবশ্য প্রতি বছরই একদম প্রথম দিকেই থাকে।
আমাদের এখানে বাতাস এতটাই বিশুদ্ধ যে, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবার যখন ফিরি। নিশ্বাস নিলেই বুঝতে পারি- একদম হালকা লাগছে। আমরা এখানে কলের পানি দিব্যি খাচ্ছি। কোন সমস্যা নেই। খুবই বিশুদ্ধ পানি।
পুরো রাস্তা জুড়ে কোথাও কোন ময়লা নেই। একটা ছোট কাগজও কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। সব কিছু এত সাজানো গোছানো যে, মাঝে মাঝে আমার এমনকি বিরক্তও লাগে! দেশটির অর্ধেকের বেশি জায়গায় শুধু গাছ আর গাছ। রাজধানী শহর, মানে যে শহরে আমি থাকি। সেই শহরে এলে আপনার মনে হবে কোন পার্কে চলে এসেছেন!
দেশটি পৃথিবীর অন্যতম শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর একটিও বটে। এখানে রাত ১২টা, রাত ৩টা কিংবা যে কোন সময় আপনি নির্ভয়ে হেঁটে বেড়াতে পারবেন। সে আপনি ছেলে হন কিংবা মেয়ে। মানে এই দেশ এতই নিরাপদ যে, থাকতে থাকতে এক সময় আপনার মনে হব- নাহ, জীবনে কোন বৈচিত্র্য নেই!
এই দেশটি পৃথিবীর সেরা ডিজিটাল কান্ট্রিগুলোরও একটি। পৃথিবীর প্রথম ই-কান্ট্রি এই ছোট্ট দেশটি। পৃথিবীতে সবার প্রথম এরা অনলাইনে ভোট দিয়েছে। আমরা এখনে সকল কিছু অনলাইনে করতে পারি। আমার এপার্টমেন্ট কেনার সময় ব্যাংক লোন থেকে শুরু করে রেজিস্ট্রেশন পর্যন্ত আমি ঘরে বসে করেছি! মানে এক বারের জন্যও বাইরে বের হতে হয় নাই!
শুধু সেটাই না! এমনকি আপনি পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে বসে এই দেশের ডিজিটাল রেসিডেন্ট হয়ে যেতে পারবেন। আপনি নিজ দেশ থেকে আবেদন করবেন। এরপর যদি ক্রাইটেরিয়া ঠিক থাকে। তাহলে আপনি ডিজিটাল রেসিডেন্স পারমিট পাবেন। ধরেন বাংলাদেশে বসেই আপনি এই দেশের ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারবেন। ব্যবসা করতে পারবেন। একটা কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করতে অন-লাইনে আমাদের তিন-চার মিনিট লাগে!
গণপরিবহন ফ্রি, শিক্ষা চিকিৎসা ফ্রি। চাকরি না থাকলে আপনাকে ভাতা দেবে। চাকরি দেবার জন্য ব্যবস্থা করবে সরকার। বুড়ো হলে সরকার দেখভাল করবে। বাচ্চা হলে প্রতিটা বাচ্চার জন্য আলাদা ভাতা। যত বেশি বাচ্চা, তত বেশি ভাতা!
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন হবার পর উত্তর ইউরোপের ছোট্ট এই দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছিল। অথচ মাত্র তিন দশকে এখন এদের অর্থনীতিও অনেক ভালো।
আর আমরা ৫৩ বছর ধরে সেই একই আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছি। সবাই দেশ প্রেমের কথা বলে। বাংলাদেশে দেশ প্রেমিকের অভাব নেই। অথচ এই দেশে কাউকে দেখি না দেশ নিয়ে এমনকি কথা পর্যন্ত বলছে! থাক তো দেশ প্রেম! এখানে সবাই সবার কাজ করছে কেবল। নিজ দায়িত্ব টুকু ঠিক ভাবে পালন করে ওরা।
কে যে এই দেশের প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রেসিডেন্ট। অনেকে এটা জানতেও চায় না। দুই পয়সার মূল্য নাই এদের। কাজের জায়গাতে এরা নিজেদের কাজ করছে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে কেউ পাত্তাও দেয় না (ইন-ফ্যাক্ট আমিও দেই না!) আর বাংলাদেশে?
থাক তো মন্ত্রী-এমপি। সামান্য ছাত্র নেতা কিংবা সরকারি কর্মচারী। একেক জনের যে ভাব! পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে গ্রামে কিংবা সব জায়গায় লোকজন এদের স্যার বলছে। এরা একেকজন বিরাট জন-দরদী! দেশপ্রেমিক। অথচ পৃথিবীর মানচিত্রে কোথাও এই দেশটাকে পাওয়া যায় না।
এই যে পৃথিবীর এক নাম্বার পরিষ্কার-পরিছন্ন দেশে আমি থাকছি। এরপরও তো এই দেশটাকে নিজের দেশ মনে হয় না। মন পড়ে থাকে সেই বাংলাদেশে। তাহলে কেন আমরা বাংলাদেশিরা ৫৩ বছরেও দাঁড়াতে পারলাম না?
উত্তরটা খুব সহজ। রাজনীতিবিদরা আমাদের দেশটাকে দাঁড়াতে দেয় নাই। উনারা নিজেরাই কেবল দাঁড়িয়েছেন!

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com