বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:০১ অপরাহ্ন

পুরুষদের আত্মহত্যা বাড়ার জন্য নারীরা দায়ী

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০২৪

সমাজে নারীর ‘প্রভাব ক্রমশ বৃদ্ধির’ কারণে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে—এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দারুণভাবে সমালোচিত হচ্ছেন দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের এক সিটি কাউন্সিলর।

সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সিউল সিটি কাউন্সিলর কিম কি-ডাক বলেন, কয়েক বছর ধরে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। ফলে পুরুষদের জন্য একটি চাকরি এবং বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

কাউন্সিলর বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ার সমাজব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়ে দিন দিন নারী প্রধান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। এটাই সম্ভবত পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধির জন্য আংশিকভাবে দায়ী।’

বিশ্বে যেসব ধনী দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করে, দক্ষিণ কোরিয়া তার অন্যতম। অথচ, লৈঙ্গিক ভারসাম্যের দিক দিয়ে সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত দেশগুলোর একটি দক্ষিণ কোরিয়া।

সিউলের সিটি কাউন্সিলরের কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে কিমের ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশ পায়। প্রতিবেদনে একটি পরিসংখ্যানের উল্লেখ করা হয়েছে। ওই পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানীর ভেতর দিয়ে বয়ে চলা হান নদীর সেতুগুলো ওপর থেকে মানুষের আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা বেড়ে গেছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হান নদীর সেতুগুলোর ওপর থেকে ২০১৮ সালে ৪৩০ জন আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। ২০২৩ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ২৩ জনে ঠেকেছে। যাঁরা আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছেনম, তাঁদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৬৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৭ শতাংশ হয়েছে।

এই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে দক্ষিণ কোরিয়ার ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা কাউন্সিলর কিম তাঁর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন। তবে কিম একাই নন, সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার বেশ কয়েকজন পুরুষ রাজনীতিবিদ একই ধরনের মন্তব্য করেছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার আত্মহত্যা প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞরা কিমের প্রতিবেদন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

সিউলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক অধ্যাপক সং ইন হান বিবিসিকে বলেন, ‘পর্যাপ্ত প্রমাণ হাতে না নিয়েই এই ধরনের দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা বিপজ্জনক ও মূর্খের মতো আচরণ।’

সারা বিশ্বেই নারীদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশে ৫০ বছরের কম বয়সী পুরুষদের মৃত্যুর একটি বড় কারণ আত্মহত্যা।

বরং ঠিক কী কারণে সিউলে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার চেষ্টা এত উচ্চহারে বেড়ে গেছে, তা খুঁজে বের করতে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

দক্ষিণ কোরিয়ায় পূর্ণকালীন চাকরিতে নারী ও পুরুষের সংখ্যায় বিস্তর ফারাক রয়েছে। সেখানে নারীরা অস্থায়ী বা খণ্ডকালীন চাকরি বেশি করেন। যদিও লিঙ্গভিত্তিক মজুরি বৈষম্য ধীরে ধীরে কমে আসছে। তারপরও এখনো নারীরা পুরুষের চেয়ে গড়ে ২৯ শতাংশ কম মজুরি পান।

দক্ষিণ কোরিয়ায় গত কয়েক বছরে নারীবাদ বিরোধী নানা আন্দোলন গড়ে উঠেছে। তরুণ পুরুষরা ওইসব আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁদের যুক্তি, নারীদের জীবনমান উন্নত করার উদ্যোগের কারণে তাঁরা (তরুণ পুরুষ) অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

কাউন্সিলর কিমের প্রতিবেদনেও একই সুরে কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের চূড়ান্ত অংশে বলা হয়েছে, জনসাধারণের মধ্যে লৈঙ্গিক সমতা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ‘নারী আধিপত্যের এই পরিস্থিতি’ কাটিয়ে ওঠা যেত। আর সেটা হলে ‘নারী-পুরুষ উভয়ই সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারত’।

কাউন্সিলরের এ বক্তব্যের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁরা (কিমের সঙ্গে একমত পোষণ করা ব্যক্তিরা) অন্য কোনো জগতে বাস করেন কিনা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com