গিজ়া শহরের এক প্রান্তে গিজ়া মালভূমি। জগদ্বিখ্যাত চারকোনা বিশালাকৃতি ইমারতগুলো তার উপরেই। শহরের রাস্তা ধরে এগোতে থাকলে অনেক দূর থেকেই চোখে পড়ে এই চত্বর— গিজ়া পিরামিড কমপ্লেক্স। কেমন লাগে? বলা মুশকিল। প্রথম যখন নিজের চোখে দেখলাম, তখন রোমাঞ্চই বেশি হচ্ছিল। ছোটবেলা থেকে বইয়ে পড়া এক রহস্যঘেরা ইতিহাস আচমকা সাকার হয়ে উঠলে বোধহয় তেমনই হওয়ার কথা।
দূর থেকে খুব স্পষ্ট বোঝা যায় না পিরামিডগুলো। রোদ আর ধুলো মিলিয়ে দৃষ্টিপথ ঝাপসা। মালভূমি বেয়ে যখন তার সামনে পৌঁছলাম, তখন যেন নিজে থেকেই বিস্ময়সূচক শব্দ বেরিয়ে এল মুখ থেকে! বাক্রুদ্ধ হয়ে যাওয়াও আশ্চর্য নয়। স্বদেশে তাজমহল দেখেছি, ভিনদেশে বরোবুদুর, সব বিরাট বিরাট সৌধ, কিন্তু কখনও এত বড় এবং বিচিত্র কোনও সৃষ্টি দেখেছি বলে মনে করতে পারলাম না। বহু মাথা খাটিয়েও এই মাপের আন্দাজ পাওয়া কঠিন। এক-একটা চৌকো পাথর ১০-১৫ টন, সে রকম হাজার হাজার পাথর দিয়ে উঠে গিয়েছে এক বিশাল চারকোনা সৌধ। মিশরে অনেকেই বিশ্বাস করেন, পিরামিড মানুষের তৈরি নয়, ভিনগ্রহের প্রাণীদের বানানো! এ রকমও প্রচলিত যে, কোনও জাদুমন্ত্র বলে পাথরগুলোর ওজন শূন্য করে ফেলে সেগুলো পরপর সাজিয়ে পিরামিড বানানো হয়েছিল! এ সব কথাও কেন ভিতর থেকে বিশ্বাস করা সম্ভব, পিরামিডের সামনে না পৌঁছলে বুঝতাম না।
তবু যুক্তি দিয়ে ভাবতে তো হবেই। জানলাম, কিছু পাথর এসেছিল ওই এলাকার খনি থেকে, বাকিটা দক্ষিণ মিশরের আসোয়ান থেকে নীলনদ হয়ে। সেই সব পাথর কী ভাবে সাজানো হয়েছিল কিংবা অত উঁচুতে তোলা হয়েছিল, তা নিয়ে অবশ্য নিশ্চিত নন ইতিহাসবিদেরা। তবে অনেক রকম জ্যামিতিক হিসেবের কথাই বলা হয়। কেন তৈরি হয়েছিল পিরামিড? প্রাচীন মিশরীয়রা জন্মান্তরে বিশ্বাস করত। সেই সভ্যতার চতুর্থ রাজবংশের আমলে তাই গিজ়া মালভূমির উপরে তৈরি হয় এই আশ্চর্য সমাধিক্ষেত্র। সেখানেই আছে তিন ফারাও খুফু, খাফরে আর মেনকাউরে-র বিরাট পিরামিডগুলো। আছে স্ফিংস, আরও অনেক সমাধি এবং শিল্প-শ্রমিকদের গ্রাম। প্রাচীন কালের পৃথিবীর সাত আশ্চর্যের মধ্যে পিরামিডই সবচেয়ে পুরনো এবং অনেকাংশে অক্ষত।