শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০৫ অপরাহ্ন

পিনপতন নীরবতায় বিশুদ্ধ বাতাস; কান পাতলেই পাখির সুমিষ্ট ডাক

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৩
Deers of sundarbans are having food together.

সুন্দরবনের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে বছরজুড়ে বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা। ছুটির দিন ছাড়াও জীববৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ নোনাজল বনের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে চলে দিনে প্রায় দুই ডজন পর্যটকবাহী জাহাজ।

ট্যুর অপারেটরদের অভিযোগ, পর্যটকদের নিয়ন্ত্রণহীন শব্দ উৎপাদন, প্লাস্টিক বর্জ্য আর কর্তৃপক্ষের তদারকির ঘাটতিতে ক্ষতি হচ্ছে এই মহাপ্রাণের প্রকৃতিগত পরিস্থিতি।

সুন্দরবন মুগ্ধতা ছড়ায় দিন-রাত সারাক্ষণ। তবে ভোরবেলায় এর রূপ মোহনীয়। সুর্যোদয়ের আগেই যেন কোটি প্রাণের উজার করা আমন্ত্রণ। চাইলেই এখানে উপভোগ করা যায় পিনপতন নিরবতা। আর বুক ভরে শাস নেয়ার মতো বিশুদ্ধ বাতাস আছে। এছাড়া কান পাতলেই শোনা যায় বনের পাখির সুমিষ্ট ডাক।

স্বতন্ত্র বাস্তুতন্ত্রের জন্য বিখ্যাত মহাপ্রাণ সুন্দরবনের গভীরে ঢুকে পড়েছে ইঞ্জিনচালিত নৌকা। এগুলোর বেশিরভাগই পর্যটকবাহী। তবে ঘনিষ্ঠভাবে সুন্দরনকে যারা দেখতে চান, তাঁরা আসেন যন্ত্রবিহীন নৌকায়, কখনও বা ছোট নৌকায়।

দুনিয়ার সবচেয়ে বড় এই শ্বাসমূলীয় বনে বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পট আছে। যেখানে নিয়ম মেনে ঘুরে বেড়ানো যায়। সাথে থাকেন বন রক্ষী আর ট্যুর গাইড।

বনে পা ফেলতেই স্বাগতম জানায় স্বাগতম। তাদের আচরণ দেখে মনে হবে, নিয়মিত পর্যটক দেখে তারা অভ্যস্ত। অন্যদিকে সুন্দরবনের চঞ্চল হরিণগুলো গাছের পাতা খাচ্ছে। সাবধানতার অংশ হিসেবে প্রতিটি পর্যটক দলের সাথে একজন বনরক্ষী থাকেন। আর ঘন সবুজের বুক চিরে বয়ে চলা পথ দেখলে মনে হবে বহু পরিচিত।

এক পর্যটক বলেন, প্রথমবার সুন্দরবনে এসেছি। হরিণ, বানর দেখেছি। এখানকার প্রকৃতি সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে।

আরেক পর্যটক বলেন, যান্ত্রিক জীবনের বাইরে সুন্দরবনের মনোরম পরিবেশ উপভোগ করছি। কিন্তু এখানে পর্যটকদের অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরায় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে।

রোমানিয়া থেকে সুন্দরবন দেখতে এসেছেন দু’জন। তাঁরা বলেন, সুন্দরবনের সবকিছুই ভালো লাগছে, বিশেষ করে, আমরা সুন্দরবনের শান্ত পরিবেশে মুগ্ধ। অনেক হরিণ, বানর ও পাখি দেখছি।

সমুদ্রসৈকতের চারপাশ দেখলে বুঝা যায়, কীভাবে গাছগুলো বুক চিতিয়ে ঘুর্ণিঝড় থেকে বনের অখণ্ডতা রক্ষা করেছে। বনরক্ষী জানান, সুন্দরবনের কটকা অভয়ারণ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ঘুরে বেড়ায়।

এক বনরক্ষী বলেন, সুন্দরবন থেকে কোনকিছুই আহরণ করা যায় না। শুধুমাত্র মধু আর গোলপাতা সংগ্রহ করা যায়।

কোটি প্রাণের আধার এই বন যেন মরা গাছ আর কাঠকেও সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। অসংখ্য নদী, ছোট ছোট খাল, খাড়ি, বালিয়াড়ি জড়িয়ে রেখেছে এই মহাপ্রাণকে।

সরকারি তথ্য বলছে, এখানে ৩৩৪ প্রজাতির গাছ আছে। বাণিজ্যিক দিক থেকে গুরুত্বপুর্ণ ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৮টি উভচর প্রজাতির আবস্থল আছে। তবে বনে ঘুরতে এসে এগুলোর সবকিছু একবারে দেখা সম্ভব নয়। তবে পর্যটকদের অসচেতন আচরণ জীববৈচিত্র্যে ঝুঁকি তৈরি করছে। ছড়ানো-ছিটানো প্লাস্টিক বনের বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করছে।

ট্যুর অ্যান্ড টিপসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জুনায়েদ ইসলাম জিয়া বলেন, প্রতিযোগিতা করে আমরা জাহাজ নিয়ে সুন্দরবনে আসছি। এতে করে আমরাই সুন্দরবনের ক্ষতি করছি। সারারাত ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলে, আর উচ্চশব্দে ডিজে পার্টি করার ফলে সকালে বন্যপ্রাণী দেখতে পাই না। এসব সুন্দরবনে বন্ধ করতে হবে।

বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, কোনোভাবে যেন সুন্দরবনে দূষণ না হয় সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি। একইসঙ্গে পর্যটন স্পটগুলোতে যেন পর্যটকদের চাপ না পড়ে সেজন্য নতুন চারটি স্পট করা হচ্ছে।

পৃথিবীর সেরা লবণাক্তভূমির এই বনে পর্যটকদের জন্য রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা আছে। কয়েকদিনের জন্য এখানে আসলে মনে রাখতে হবে, সরকরি মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক ছাড়া অন্য কোম্পানির নেটওয়ার্ক এখানে নেই।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com