আলোচিত প্রশান্ত হালদার কুমার ওরফে পি কে হালদারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান দখলের মতো করেই ইসলামী ব্যাংক দখলে নেয় এস আলম গ্রুপ। পি কে হালদারের ফর্মুলা ছিল—যে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতেন, সেই টাকা দিয়ে ওই ব্যাংকের শেয়ার কিনে মালিক হওয়া। ইসলামী ব্যাংকের নথিপত্র বলছে— এস আলম ইসলামী ব্যাংক দখলের আগে ব্যাংকটিতে তাদের তিন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ ছিল ৩ হাজার ৬ কোটি টাকা। পি কে হালদারের ফর্মুলা অনুসরণ করে ঋণের টাকা পরিশোধ না করে উল্টো এস আলম গ্রুপ বাজার থেকে শেয়ার কিনে ইসলামী ব্যাংকের মালিক হয়েছে। পরে বিভিন্ন অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের শেয়ার কিনে মোট সাতটি ব্যাংকের মালিক হয়েছেন।
পি কে ফর্মুলা
বিভিন্ন তথ্য উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, ইসলামী ব্যাংক দখলের দুই বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৪ সালে পি কে হালদার যা যা করেছে, দুই বছর পর ২০১৬ সালে এস আলম গ্রুপ ঠিক তাই করেছে।
তথ্য বলছে, পি কে হালদার ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান দখল করার জন্য ২০১৪ সালে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলেছেন, শেয়ার বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনেছেন, এরপর দখল করা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের নামে টাকাও সরিয়েছেন। এমনকি দেশের বাইরেও তিনি কোম্পানি খুলেছেন।
একইভাবে এস আলম গ্রুপ ২০১৬ সালে নামে-বেনামে বিভিন্ন কোম্পানি খুলেছেন। ইসলামী ব্যাংক দখলে নেওয়ার জন্য ওইসব কোম্পানির নামে শেয়ার বাজার থেকে ব্যাংকটির বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনেছেন। এরপর দখল করা ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণের নামে টাকাও সরিয়েছেন। এমনকি পি কে হালদারের মতো এস আলম গ্রুপও দেশের বাইরে কোম্পানি খুলেছেন।
ইসলামী ব্যাংক সূত্র বলছে, ২০১৬ সালজুড়ে অস্তিত্বহীন বা শুধু কাগজে-কলমে আছে—এমন নতুন নিবন্ধিত কিছু কোম্পানি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার কেনা শুরু করে। এসব কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন ২০১৬ সালেই নেওয়া হয়েছিল। কোম্পানিগুলোর প্রকৃত মালিক আসলে এস আলম গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে—এক্সেল ডায়িং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড, আরমাডা স্পিনিং মিল লিমিটেড, এবিসি ভেঞ্চার্স লিমিটেড, গ্র্যান্ড বিজনেস লিমিটেড, প্ল্যাটিনাম এন্ডেভারস, প্যারাডাইস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এবং ব্লু ইন্টারন্যাশনাল।
পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার কিনে নেওয়ার পর ইসলামী ব্যাংকের ২০ শতাংশ শেয়ার চলে আসে এস আলমের হাতে।
শুধু তাই নয়, দুই-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া এস আলম গ্রুপ ও পি কে হালদারের মধ্যে আরও বেশ কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন- ২০১৪ সালে কমপক্ষে চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) মালিকানায় অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসে। ঋণ নিয়ে শেয়ার কিনে পি কে হালদার দখল করেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। অবশ্য এই চারটি প্রতিষ্ঠান দখলে নিলেও কোনও প্রতিষ্ঠানেই পি কে হালদারের নিজের নামে শেয়ার নেই। সেই চার প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা এখন চরম খারাপ। একটি বিলুপ্তের পথে, বাকি তিনটিও গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। একইভাবে এস আলমের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সাতটি ব্যাংকের মধ্যে বেশিরভাগই গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না।
২০১৯ সালের মাঝামাঝি পি কে হালদারের দখল করা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যখন গ্রাহকের টাকা ফেরত দিয়ে ব্যর্থ হতে শুরু করে, তখন তিনি (পি কে হালদার) ভারতে পালিয়ে যান। পরে তিনি কানাডা ও সিঙ্গাপুরে বসবাস শুরু করেন। এস আলমও এখন সপরিবারে সিঙ্গাপুরে বসবাস করছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, পি কে হালদার ও এস আলমের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিল আছে। সেটা হলো বাংলাদেশ ব্যাংক এ দুজনকেই আইন লঙ্ঘন করে অকাতরে সহযোগিতা করেছে। বিশেষ করে তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী এ দুজনকেই অবৈধভাবে সুযোগ করে দিয়েছেন।
দুই শতাংশ শেয়ার ধারণের নিয়মে এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে একই ব্যাংকের শেয়ার কিনে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ যেভাবে নিয়েছিল, এভাবেই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছিলেন পি কে হালদার। একই পদ্ধতিতে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানাও আসে এস আলম গ্রুপে কাছে।
এ জন্য অবশ্যই শেয়ার বাজার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তার প্রয়োজন ছিল, যা তারা পেয়েছিলেন। যেমন- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম এসব কাজে সহায়তা করতেন। যদিও পি কে হালদার একসময় এস আলম গ্রুপের মালিকানায় থাকা এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন।
প্রতিষ্ঠানগুলো দখলের সময় পি কে হালদার প্রথমে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স এবং পরে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন। আর এসব কাজে তাকে সব ধরনের সমর্থন ও সহায়তা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)— এই দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার চোখের সামনেই সবকিছু ঘটেছে বলে অভিযোগ আছে।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী এস আলম বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় ব্যাংক খাতে ঢুকেছিলেন ২০১৫ সালে কমার্স ব্যাংকের শেয়ারের মালিক হয়ে। তবে ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংক দখল করে আলোচনায় আসে তিনি। পরে ২০১৭ সালের নভেম্বরেই সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) মালিকানায়ও বদল ঘটে। ওই বছর র্যাডিসন ব্লু হোটেলের বদলে মালিকানা পরিবর্তনের ঘটনাটি ঘটেছিল আরেক পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিনে, বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে। দুই বৈঠকেই এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংক দখলের জন্য তাদের তাড়াহুড়ো এতটাই ছিল যে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ফজলে কবির সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের নতুন পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ফাইলে সই করতে রাত ১০টা পর্যন্ত অফিস করেছিলেন। এভাবে এক এক করে এস আলম গ্রুপের মালিকানায় এসেছিল সাতটি ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র বলছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যরা এত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দখল করে রেখেছেন। এই অসাধ্য কাজটি সম্ভব হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারণে।
এক পরিবারের শেয়ারের সীমা লঙ্ঘন
বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকে এস আলমের ৩০ শতাংশ শেয়ার ছিল। অথচ আইন বলছে, একটি ব্যাংকে একটি পরিবারের শেয়ারের সীমা হবে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। কিন্তু সেই আইন না মেনেই এই পরিবারটি ইসলামী ব্যাংকের বড় অঙ্কের শেয়ার দখল করে রাখে। অভিযোগ আছে, সাইফুল আলমের স্বজনরা ব্যাংকটিতে কোনও বিনিয়োগ না করেও এক লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন।
ইসলামী ব্যাংকের নথিতে দেখা গেছে, সাইফুল আলমের পরিবার বাংলাদেশের একমাত্র পরিবার—যে পরিবারের সব সদস্য এবং তাদের কিছু আত্মীয় একাধিক ব্যাংকের বোর্ডে বসেছিলেন। মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুনজরে (!) এই পরিবারের জন্য নিয়ম শিথিল করা হয়। ফলে তারা বেশ চতুরতার সঙ্গে কৌশলে ব্যাংকগুলোর শেয়ার দখল করে নেয়।
এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ছিল জাতীয় সংসদও!
গভর্নর ফজলে কবিরের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সংসদকে ব্যবহার করারও অভিযোগ রয়েছে। এস আলম গ্রুপকে অনৈতিক সুবিধা দিতে ব্যাংকের বোর্ডে একটি পরিবারের সদস্যদের পরিচালক হওয়ার সংখ্যা বাড়িয়েছে জাতীয় সংসদ। প্রথমে সেই সংখ্যা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে চার জন করা হয়। অবশ্য পরে চাপের মুখে কমিয়ে তিন জন করা হয়। এখানেই শেষ নয়, একজন পরিচালককে ১২ বছর বোর্ডে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি থিংকট্যাংক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকার আইন সংশোধন করে এস আলমকে ব্যাংকগুলোর ওপর আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ করে দিয়েছে। এটা মোটেও ভালো সিদ্ধান্ত ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘একটি পরিবার কীভাবে ব্যাংকিং খাতকে নিয়ন্ত্রণ করে এই খাতকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়— তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এস আলম পরিবার।’ এজন্য ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকেও দায়ী করেন ফাহমিদা খাতুন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাংক খাত সংস্কারের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে। এর আগ পর্যন্ত সাইফুল আলমের পরিবারের সবাই বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন।
সাইফুল আলম ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন ব্যাংকটির পরিচালক ছিলেন। তাদের ছেলে আহসানুল আলম, মেয়ে মাইমুনা খানম ও মেয়ে-জামাতা বেলাল আহমেদ যথাক্রমে ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করতেন। সাইফুল আলমের ভাই, বোনসহ অন্যান্য আত্মীয়রাও বেশ কয়েকটি ব্যাংকের বোর্ডে ছিলেন। যদিও ব্যাংক আইন বলছে, একটি ব্যাংকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ারের মালিকানা থাকা কোনও ব্যক্তি অন্য ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য শেয়ার কিনতে পারবেন না।
অথচ ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য শেয়ারের মালিকানা থাকা সত্ত্বেও ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার কিনে ব্যাংক দুটি দখল করে নেন সাইফুল আলম।
ইসলামী ব্যাংক দখলের পর নামে-বেনামে ২৪ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৩১ কোটি ৮৯ লাখ ১২ হাজার ১৬৫টি শেয়ারের মালিকানা নিয়েছে এস আলম গ্রুপ, যা ব্যাংকটির মোট শেয়ারের ৮১ দশমিক ৯২ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও এস আলমের ছেলে আহসানুল আলমের মালিকানাধীন জেএমসি বিল্ডার্সের নামে শেয়ার রয়েছে ৩ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার ৮১২টি, যা ২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। এ ছাড়া বিটিএ ফাইন্যান্স, প্যারাডাইস ইন্টারন্যাশনাল, এবিসি ভেঞ্চারস, এক্সেল ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, প্লাটিনাম এনডেভার্স, এক্সেলশিয়ার ইমপেক্স, গ্র্যান্ড বিজনেস, লায়ন হেড বিজনেস রিসোর্সেস, বিএলইউ ইন্টারন্যাশনাল, আর্মদা স্পিনিং মিলস, কিংসওয়ে এনডেভার্স, ইউনিগ্লোব বিজনেস, সোলিভ ইন্স্যুরেন্স, হলিস্টিক ইন্টারন্যাশনাল, হাই ক্লাস বিজনেস এন্টারপ্রাইজ, ক্যারেলিনা বিজনেস, ব্রিলিয়ান্ট বিজনেস, ব্রডওয়ে ইম্পেক্স, পিকস বিজনেস, এভারগ্রিন শিপিং, ম্যারাথন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, কিংস্টোন ফ্লাওয়ার মিলস ও পারসেপ্টা এনডেভার্স—এসব প্রতিষ্ঠানের নামে ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ার রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে একটি ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেক পরিচালক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বছরের পর বছর ঋণ পুনঃতফসিল করেছেন। এভাবে তারা ঋণখেলাপি হওয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করেছেন।’
আইনে বলা হয়েছে, একটি পরিবারের তিন জনের বেশি সদস্য ব্যাংকের পরিচালক পদে থাকতে পারবেন না। এছাড়া একটি পরিবার ও তাদের প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিক হতে পারবে না। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের ৩০ শতাংশ শেয়ার ছাড়াও সাইফুল আলমের পরিবারের সদস্য ও প্রতিষ্ঠানগুলো সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ২২ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ২৮ শতাংশ ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৩০ শতাংশ শেয়ারের মালিক হন।
এছাড়া আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ও নর্দার্ন ইনস্যুরেন্সে পাঁচ শতাংশ করে এবং আভিভা ফাইন্যান্স ও ইউনিয়ন ব্যাংকে ৭০ শতাংশের বেশি শেয়ার রয়েছে তাদের।
কার অ্যাকাউন্টে এখন কত টাকা আছে
এস আলমের ভাই আব্দুল্লাহ হাসান। গত পাঁচ বছর তার অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৯০০ কোটি টাকা। আগের জেরসহ এখন আছে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তবে এস আলম আছেন প্রায় শূন্য অবস্থায়। তার অ্যাকাউন্টে ২০ কোটি টাকা ঢুকলেও আছে মাত্র সাড়ে ৫ লাখ। আর তার স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে আছে ১৭ লাখ টাকা মাত্র। তবে তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৫৭ ব্যক্তি ও কোম্পানির নামে থাকা ৬ ব্যাংকের দুই শতাধিক অ্যাকাউন্টে গত পাঁচ বছরে লেনদেন পাওয়া গেছে ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা। হিসাবগুলোতে এখনও জমা আছে ২৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল লিমিটেডের অ্যাকাউন্টে গত পাঁচ বছরে জমা হয় ৮৪ হাজার কোটি টাকা। এখন আছে পৌনে ৫ হাজার কোটি টাকা। কর কর্মকর্তাদের ধারণা, এস আলমের বেশিরভাগ ঋণের টাকা এই হিসাবে জমা হয়। পরে ধীরে ধীরে টাকাগুলো বের করে নেওয়া হয়। এস আলম ভেজিটেবল কোম্পানির অ্যাকাউন্টে পাঁচ বছরে ঢুকেছে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। এখন আছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। সুপার এডিবল কোম্পানির অ্যাকাউন্টে জমা হয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে আছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন কোম্পানির অ্যাকাউন্টে আছে ৩ হাজার ৬০০ কোটির বেশি। এস আলম ট্রেডিং কোম্পানিতে আছে পৌনে ৫ হাজার কোটি টাকা।