1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
পাহাড়েও বেনজীরের থাবা
সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ১১:৩৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
ভারতের যেসব জায়গায় গ্রীষ্মেও দেখা মেলে তুষারপাত আবুধাবি বিমানবন্দর হয়ে ভ্রমণ? দেরি ও বাতিলের আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষের সতর্কবার্তা ট্রানজিট যাত্রীরাও ক্ষতিগ্রস্ত? আঞ্চলিক উত্তেজনায় এমিরেটস ফ্লাইট বাতিলের মেয়াদ বাড়াল এয়ার ইন্ডিয়া ট্র্যাজেডি : স্ত্রীর শেষ বিদায়ের পর নিজেই হারিয়ে গেলেন দূর আকাশে নাগরিকত্ব পেতে ৫ মিলিয়ন ডলারের ‘গোল্ড কার্ড’, ওয়েবসাইট চালু করলেন ট্রাম্প সিলেটে প্রত্যাশার চেয়ে পর্যটক কম, ৫০ শতাংশ হোটেল-মোটেলই খালি ভিয়েতনামের জনপ্রিয় দ্বীপ ফুঁককে এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৭ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি বিদেশি পর্যটক আহমেদাবাদে ২৪২ জন আরোহীসহ দুর্ঘটনার পর বোয়িংয়ের শেয়ারে ৮% দরপতন টানা ছুটিতে বিনোদন কেন্দ্রে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস মালয়েশিয়ায় ক্রুজ পর্যটন

পাহাড়েও বেনজীরের থাবা

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০২৪

গ্রাম থেকে শহর, সাগরের বুকে প্রবাল দ্বীপ ও সংরক্ষিত বনের পর এবার পাহাড়েও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিপুল পরিমাণ জমির খোঁজ মিলেছে। পার্বত্য আইন অমান্য করে বান্দরবানে নিজের ও স্ত্রী-কন্যার নামে শত একরের বেশি জমি কিনেছেন তিনি। আর এই জমিতে গড়ে তুলেছেন খামারবাড়ি ও বাগান।

পাহাড়ে বেনজীরের এসব সম্পত্তি দেখাশোনা করেন বান্দরবান জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মং ওয়াইচিং মারমা এবং বান্দরবান সদর থানার ডিবির সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফিজুর রহমান। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ দুজনই ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বেনজীরকে এসব জায়গা দখল করে দিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লিজের জমি ক্রয় ও বিক্রয় নিষিদ্ধ থাকলেও বান্দরবান পৌরসভার মধ্যমপাড়া এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে শাহ জাহানের কাছ থেকে সদর উপজেলার সুয়ালক মৌজায় ৬১৪ নম্বর দাগের ৩ নম্বর সিটে ২৫ একর জমি স্ত্রী জীশান মির্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিস্তা বিনতে বেনজীর এবং ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর ও নিজের নামে লিখে নিয়েছেন বেনজীর আহমেদ। ওই জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে গবাদি-পশুর খামার, মৎস্য প্রজেক্ট, ফলদ বৃক্ষ ও সেগুনবাগান এবং বিলাসবহুল একটি খামারবাড়ি। এ ছাড়া বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ডলুছড়ি মৌজার টংগ ঝিরিতে অর্ধশত একর এবং জেলা সদরের সুয়ালক ১ নম্বর ওয়ার্ডের হরিণঝিরি এলাকায় আরও ৪০ একর জায়গা কিনেছেন বেনজীর।

সরেজমিন সুয়ালকে দেখা যায়, জেলা সদরের সুয়ালকের মাঝের পাড়ার চা অফিস থেকে পৌনে ১ কিলোমিটার দূরে ২৫ একর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে বেনজীরের ওই খামারবাড়ি। সেই খামারে এখন বিদেশি জাতের ৩৭টি গবাদিপশু আছে। আরও আছে বিভিন্ন ফল ও ফুলের বাগান, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত দোতলা পাকা দালান। কিছুদিন আগেও এই খামারের ত্রিসীমানায় যাওয়া যেত না। বেনজীর র‍্যাবপ্রধান থাকা অবস্থায় সেখানে ডিবির সাবেক ওসি মোস্তফিজুর রহমানসহ বেশ কয়েকবার তিনি ঘুরে যান বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

সুয়ালকের খামারবাড়িটি দেখাশোনা করেন লেদু মিয়া নামের এক ব্যক্তি। তিনি জানান, বেনজীর আহমেদের এই খামারে ১ মাস ধরে গরুগুলো দেখাশোনা করছেন তিনি। এই কাজের জন্য বেনজীরের পক্ষে তাঁকে বেতন দেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ওয়াইচিং মারমা।

অন্যদিকে লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের ডলুছরি টংগো ঝিরি বাগানের কেয়ারটেকার মো. ইব্রাহিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বেনজীর আহমেদের ৫৫ একর জায়গা দেখাশোনা করছেন তিনি। তাঁকে আগে মং ওয়াইচিং মাসিক বেতন পরিশোধ করলেও ৫ মাস ধরে কোনো বেতন পরিশোধ করছেন না।

বান্দরবানে বেনজীরের সম্পত্তি দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা মং ওয়াইচিং জানান, সুয়ালকের মাঝের পাড়ায় নিজের জায়গার পাশে বেনজীর আহমেদের ২৫ একর জায়গা থাকার কারণে সেগুলো তাঁকে দেখাশোনার দায়িত্ব দেন বেনজীর। তবে লামার জায়গাজমি-সংক্রান্ত কোনো তথ্য তাঁর কাছে নেই বলে জানান জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই নেতা।

১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তি অনুসারে, পার্বত্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দা না হলে বাইরের কেউ পার্বত্য চট্টগ্রামে গিয়ে জমি কিনতে পারবেন না। বেনজীর আহমেদ জন্মসূত্রে গোপালগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা হয়েও কীভাবে সেখানে জমি কিনলেন, সে প্রশ্ন উঠেছে এখন।
এই বিষয়ে বান্দরবান বোমাং রাজার সহকারী অংঝাই খ্যায়াং আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জমি ক্রয় করতে বোমাং রাজার স্থায়ী বাসিন্দার সনদ, এনআইডি, পৌরসভার নাগরিক সনদ ও মা-বাবার নামে মৌজার জমি থাকলে তাঁরা জমি ক্রয় করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে বেনজীর কীভাবে জমি ক্রয় করেছেন, তা আমার জানা নেই।’

সুয়ালকের ইউপি চেয়ারম্যান উ ক্য নু মারমা বলেন, ‘সুয়ালক মৌজার মাঝের পাড়ায় বেনজীর আহমেদের জায়গা আছে, তা আমি জানি। মাঝে মাঝে একজন এসপি ও সাবেক ওসি এখানে আসেন। সম্প্রতি বাগানটির গাছ বিক্রির জন্য জোত পারমিট করা হয়েছে।’
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বান্দরবানে বেনজীর আহমেদের জায়গাজমির তথ্য বা জবরদখল-সংক্রান্ত কোনো বিষয় জানা নেই। এই বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দেশ ছাড়ার আগে ভাটারার সাততলা বাড়ি বিক্রি করেন বেনজীর দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে দেশ ছেড়েছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ। তবে দেশ ছাড়ার আগে তিনি নিজের নামে থাকা ঢাকার একটি সাততলা বাড়ি বিক্রি ও ব্যাংক থেকে প্রায় ১৫ কোটি টাকা উত্তোলনের খবর পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

দুদকের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বেনজীর আহমেদের ব্যাংকিং লেনদেনের পুরো তথ্য পাওয়া যায়নি। সেটা পাওয়া গেলে তিনি ব্যাংক থেকে কী পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করেছেন, সেগুলো কোথায় রেখেছেন, অবৈধ পন্থায় বিদেশে পাচার করেছেন কি না এবং তাঁকে অর্থ পাচারে কারা সহযোগিতা করেছে, তা খতিয়ে দেখবে দুদক।

এদিকে রাজধানীর ভাটারা এলাকায় বেনজীরের নামে থাকা একটি সাততলা বাড়ি বিক্রি করেছেন বলে প্রমাণ পেয়েছে দুদক। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়, দুদকের অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পরই বাড়ি বিক্রি করে দেন বেনজীর আহমেদ।

গত ২৮ মে বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নোটিশ দেয় দুদক। নোটিশে ৬ জুন (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টায় তাঁকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। ৯ জুন তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়েকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। কীভাবে তিনি এই বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন, সেই বিষয়ে তাঁকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে নোটিশে।

এ অবস্থায় তিনি দুদকের তলবে হাজির না হলে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর জজ আদালতে দুদকের প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, উনাকে (বেনজীর) যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেখানে তাঁর উপস্থিতির বিষয়ে বলা থাকলে বক্তব্য দিতে উনাকেই আসতে হবে। আবার আইনজীবী বা প্রতিনিধির মাধ্যমে যদি বক্তব্যের বিষয়ে বলা হয়ে থাকে, তাহলে সেভাবেই বক্তব্য দিতে পারেন। আমার মনে হয়, উনার সশরীরেই উপস্থিত হয়ে উনার বিরুদ্ধে যেসমস্ত অভিযোগ, সেগুলো সঠিক নাকি মিথ্যা, জানানো উচিত।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com