অভিবাসীদের জন্য জার্মানিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে আইন পরিবর্তন করতে যাচ্ছে দেশটির জোট সরকার৷ গত ২৩ আগস্ট মন্ত্রিসভা এই আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে৷
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজা এটিকে সরকারের সবচেয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প’ হিসেবে অভিহিত করেছেন৷
মূলত দক্ষকর্মীর সংকটে থাকা জার্মানির আইন যথেষ্ট আধুনিক ও অভিবাসীদের জন্য আকর্ষণীয় নয় বলে অভিযোগ করে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা৷ খসড়া আইন অনুমোদনদের পর ন্যান্সি ফেজা বলেন, ‘‘আমরা একটি আধুনিক অভিবাসন আইন প্রণয়ন করছি যা আমাদের বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাজ এবং আধুনিক রাষ্ট্রের জন্য ন্যায়সঙ্গত৷ জোট সরকাররে জন্য নতুন নাগরিকত্ব আইনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার৷”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে জার্মানিতে বসবাসকারী এক কোটি ২০ লাখ মানুষের জার্মান পাসপোর্ট নেই৷এর মধ্যে দশ বছর বা তার বেশি সময় বসবাস করছেন এমন অভিবাসীর সংখ্যা ৫৩ লাখ৷
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জার্মানির জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বছরের পর বছর বসবাসের পরও সমাজের মূল স্রোতে যুক্ত হতে পারছেন না৷ এ কারণে সমাজে তারা জার্মান নাগরিকদের মতো অংশগ্রহণ এবং অবদান রাখার সুযোগ পাচ্ছেন না৷
মুসলিম ছাত্রকে শ্রেণিকক্ষের সবাইকে একে একে চড় মারতে বললেন শিক্ষিকা খসড়া আইনে জার্মানির নাগরিকত্বের নিয়মে বড় ধরনের কয়েকটি পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ সুযোগ থাকছে দ্বৈত নাগরিকত্বের, কমছে জার্মানিতে বসবাসের সময়ের শর্ত৷
নতুন আইনে যে পরিবর্তন আনা হচ্ছে-
দ্বৈত নাগরিকত্ব
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সুইস নাগরিক ছাড়া দ্বৈত পাসপোর্টের অনুমোদন দেয় না জার্মানি৷ খসড়া আইন পাস হলে এই শর্তের পরিবর্তন হবে৷সেক্ষেত্রে বিদেশিরা নিজ দেশের নাগরিকত্ব বজায় রেখেও জার্মানির পাসপোর্ট গ্রহণ করতে পারবেন৷এজন্য তাকে অবশ্য অন্য শর্তগুলো পূরণ করতে হবে৷
কমছে সময়
অভিবাসী শিশু
অভিবাসী বাবা-মায়ের জার্মানিতে জন্ম নেয়া শিশুরা শর্তহীন নাগরিকত্ব পাবে৷ চাইলে বাবা-মায়ের দেশের নাগরিকত্বও তারা রাখতে পারবে৷ তবে বাবা অথবা মা যেকোসো একজন বৈধভাবে জার্মানিতে পাঁচ বছর বসবাস করলে নাগরিকত্বের এই যোগ্যতা অর্জন করবে তারা৷
বহুবিবাহ
জার্মানির আইন অনুযায়ী, বহুবিবাহ এবং একাধিক স্ত্রী রাখা নিষিদ্ধ৷ এইক্ষেত্রে নাগরিকত্বের জন্য তিনি বিবেচিত হবেন না৷ এছাড়া নারী ও পুরুষের সমানাধিকারের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখালে সেই ব্যক্তিও নাগরিকত্ব পাবেন না৷
যারা নাগরিকত্ব পাবেন না
জার্মানিতে কেউ নাগরিক হতে হলে তাকে দেশটির মুক্ত সমাজের মূল্যবোধের প্রতি দায়বদ্ধ হতে হবে৷ সব মানুষের প্রতি সাম্য ও সম্মান বজায় রাখতে হবে৷ কেউ এই মূল্যবোধের অধিকারী না হলে বা এর বিরুদ্ধাচরণ করলে তিনি নাগরিকত্বের যোগ্য হবেন না৷ বিশেষ করে ইহুদি বিদ্বেষ, বর্ণবাদ ও মানবতাবিরোধী আচরণ জার্মানির মৌলিক আইনের বিরোধী৷ অতীতে কেউ এমন আচরণ করলে তিনি নাগরিকত্বের জন্য বিবেচিত হবেন না৷ এছাড়া রাষ্ট্রের সামাজিক সুরক্ষা ভাতাপ্রাপ্তরাও নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন না৷
রাজনীতির অধিকার
নাগরিকত্বপ্রাপ্তরা সমভাবে দেশটির রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন৷ তারা সমঅধিকার পাচ্ছেন কিনা রাষ্ট্র তার দেখভাল করবে৷ নতুন নাগরিকত্বপ্রাপ্তদের যাতে একটি উৎসবের মাধ্যমে এই সংক্রান্ত সনদ হস্তান্তর করা হয়, তার প্রস্তাব রাখা হয়েছে খসড়া আইনে৷
সূত্র: ডয়েচে ভেলে