দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনে চলছে ৯ মাসের পর্যটক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা। এ অবস্থায় দ্বীপের পরিবেশ-প্রতিবেশের উন্নতি ঘটাতে চলছে মাসব্যাপী পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। উদ্দেশ্য হলো দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় পরিচালিত দ্বীপের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্লিন-আপ প্রোগ্রাম’।
এই প্রকল্পের প্রথম পর্বে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ সাসটেইনেবল অ্যালায়েন্সের (বিএসএ) যৌথ উদ্যোগে গত মঙ্গলবার ও গতকাল বুধবার দুই দিনব্যাপী পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলেছে। এই দুই দিনে দ্বীপ থেকে ৪১০ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রথম আলোকে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন। তিনি বলেন, গতকাল পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক জমির উদ্দিন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্লাস্টিক বর্জ্যগুলোর মধ্যে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন, প্লাস্টিকের কাপ, পানির বোতল, প্লাস্টিক স্ট্র, টুথপেস্টের প্যাকেট, শ্যাম্পুর প্যাকেট ও চকলেটের মোড়ক রয়েছে।
দুই দিনব্যাপী কার্যক্রমের প্রথম দিন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটায় শুরু হয়। এতে অংশ নেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও পরিবেশবিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের ২৬৬ স্বেচ্ছাসেবক। তাঁরা সেন্ট মার্টিনের একাংশে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। টেকনাফ উপজেলার ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন শপথবাক্য পাঠ করানোর মাধ্যমে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সেন্ট মার্টিনে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন ও প্লাস্টিকের দূষণ কমাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে দৈনিক সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটকের রাত যাপনের সীমা নির্ধারণ করা হয়। এই সময়ে গড়ে ১ হাজার ৬৯৪ পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করেছেন। অতিরিক্ত যাত্রী বহনের দায়ে কয়েকটি জাহাজকে সতর্ক করা হয় এবং দুটি জাহাজকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, পর্যটক ও স্থানীয় লোকজনকে সচেতন করতে দ্বীপে তথ্যসংবলিত সাইনবোর্ড স্থাপন ও গ্রাফিতি অঙ্কন করা হয়েছে। সমুদ্রসৈকতের পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তায় বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির অধীনে ১০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ৬ লাইফগার্ড সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তী সরকার সেন্ট মার্টিনে পর্যটকের যাতায়াত সীমিত করে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১ ডিসেম্বর থেকে জাহাজে চড়ে দৈনিক দুই হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের সুযোগ পান। টেকনাফের বিকল্প হিসেবে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট থেকে দৈনিক পাঁচটি জাহাজ সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করত। জাহাজ চলাচলের সময়সীমা শেষ হয় ৩১ জানুয়ারি। এরপর আর কারও সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের সুযোগ থাকছে না।