ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পট। এখানে সমুদ্র সৈকত, লেক, ঝরনা, পাহাড় ও গিরিখাদ থাকায় এই উপজেলা হয়ে উঠেছে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া, দেশের ৬ষ্ঠ সেচ প্রকল্প মুহুরী প্রজেক্ট, উপজেলার অলিনগরে অবস্থিত হিলসডেল মাল্টিফার্ম ও মধুরিমা রিসোর্ট, করেরহাট ফরেস্ট ডাকবাংলো, আরশিনগর ফিউচার পার্ক, ডোমখালী সমুদ্র সৈকত, মিরসরাই শিল্পনগর সমুদ্র সৈকত, রূপসী ঝরনা, বাওয়াছড়া লেক ও হরিনাকুন্ড ঝরনা, রূপসী ঝরনা, সোনাইছড়ি ঝরনা, নাপিত্তাছড়া ঝরনা, বোয়ালিয়া ঝরনা, খৈয়াছড়া ঝরনা, মেলখুম গিরিপথ, মিরসরাই-নারায়ণহাট সড়ক ও মিরসরাই জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল সবই রয়েছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে।
১৫ বছর আগে মহামায়া হ্রদ আর খৈয়াছড়া ঝরনা ঘিরেই মিরসরাই ভ্রমণ করতেন পর্যটকরা। তবে দিন দিন পর্যটনকেন্দ্রের তালিকায় নতুন নতুন নাম যেমন যুক্ত হয়েছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পর্যটক। মিরসরাইয়ের বেসরকারি পর্যটনকেন্দ্র ও বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, উপজেলায় প্রতিবছর গড়ে পাঁচ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করতে আসেন। মিরসরাইয়ে বাস্তবায়নাধীন জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে আগামী ১০ বছরে অন্তত ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ার কথা রয়েছে, যার সূত্র ধরেও পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে বাড়বে দেশি-বিদেশি পর্যটক।
বছরের শেষ সময়ে পর্যটকরদের ভিড় বাড়তে থাকতে ডোমখালী সমুদ্রসৈকতে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে এখানে ছুটে আসছেন ভ্রমণপিপাসু মানুষ। দুপুর গড়িয়ে বিকেলের শুরুতে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। সাহেরখালী ইউনিয়নের ডোমখালী থেকে গজারিয়া পর্যন্ত এতে বাঁধ ঘেঁষে জেগে ওঠা চর ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় বিশাল এলাকা এখন পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে। প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দৃষ্টিনন্দন সাগরপাড়ে মানুষের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো।
প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে দেশের ভ্রমণ পিয়াসী মানুষ। অনেকে রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় ঝরনার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পাহাড়ের পাদদেশে তাবু টাঙ্গিয়ে অবস্থান করে। আট স্তরের ঝরনা দেখতে দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড় পড়ে যায়। দেশের অন্যতম বড় প্রাকৃতিক ঝরনাটি দেখতে প্রতিদিন ছুটে আসেন হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক।
বছরের পর বছর ঝরনার পানি গড়িয়ে যাচ্ছে এই ছড়া বয়ে। কয়েক বছর পূর্বে রূপসী ঝরনা নামে আবিস্কার হলো এটি। মিরসরাই উপজেলার সর্ব দক্ষিণে বড় দারোগারহাটের উত্তরে পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এক দৃষ্টিনন্দন, অনিন্দ্যসুন্দর এক জলপ্রপাত। এই ঝরনায় যাওয়ার পথে দৃষ্টিনন্দন ছড়া, দু’পাশের দন্ডায়মান পাহাড়, সবুজ প্রকৃতি, গুহার মত ঢালু ছড়া, তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অপরূপ ঝরনা রূপসীর সৌন্দর্য্যকে অন্যান্য ঝরনা থেকে আলাদা করেছে।
প্রকৃতির আরেক নাম মুহুরী। যেখানে আছে আলো-আঁধারির খেলা। আছে জীবন-জীবিকার নানা চিত্র। মুহুরীর চর, যেন মিরসরাইয়ের ভেতর আরেক মিরসরাই। অন্তহীন চরে ছোট ছোট প্রকল্প। এপারে মিরসরাই ওপারে সোনাগাজী। ৪০ দরজার রেগুলেটরের শোঁ শোঁ আওয়াজ শোনা যায় দূর থেকে। পশ্চিমে মৎস্য আহরণের খেলা, আর পূর্বে মন কাড়ানিয়া প্রকৃতি। নুয়ে পড়া মনোবল জেগে উঠবে পূবের জেগে ওঠা চরে। ডিঙি নৌকায় ভর করে কিছুদূর যেতেই দেখা মিলবে সাদা সাদা বক।
মিরসরাই উপজেলার সোনাপাহাড় এলাকায় রয়েছে আরশিনগর ফিউচার পার্ক। এটি সব বয়সী মানুষের জন্য অন্যতম বিনোদন হলেও শিশুদের জন্য রয়েছে অর্ধশতাধিক রাইডের সুবিধা। রয়েছে নানা রঙের ফুল-ফলের গাছ, পানির ফোয়ারা ও লেক। নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামরাসহ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে।
মিরসরাইয়ে পাহাড়ি ঝরনাগুলোর মধ্যে অন্যতম বোয়ালিয়া ঝরনা। একদিনেই ঘুরে আসতে পারেন এই অনিন্দ্য সুন্দর ঝরনা থেকে। ব্যস্ততম ঝান্ত্রিক জীবন থেকে একটু অবসর নিয়ে যে কোনো সময় ঘুরে আসতে পারবেন। চারদিকে সবুজ পাহাড় আর পাহাড়। সবুজের নান্দনিকতা, বিস্তীর্ণ পাহাড় ও বনাঞ্চল পরিবেষ্টিত এই বুনো ঝরনা। এখানে আছে বিমোহিত হওয়া প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। প্রকৃতির স্নিগ্ধতায় সিক্ত এখানকার জনজীবন যেমন সৌহার্দ্যপূর্ণ তেমনই প্রকৃতির মমতায় ভরপুর।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া। ১১ বর্গ কিলোমিটারের এই হৃদ যে কাউকে মুগ্ধ করতে পারে। রয়েছে প্রাকৃতিক ঝরনা, ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভ্রমন এবং কায়াকিং। মহামায়া বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কের ইজারাদার মোহাম্মদ শরিফ উদ্দিন বলেন, মহামায়া খুবই সুন্দর একটি পর্যটন কেন্দ্র। এখানে একই স্থানে রয়েছে লেক, পাহাড়, ঝর্ণা ও রাবার ড্যাম। পাহাড়ের কোলে লেকটির আঁকাবাঁকা অবয়ব অপরুপ সুন্দর। ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত এই লেক। লেকের অন্যতম আকর্ষণ পাহাড়ি ঝরণা ও স্বচ্ছ পানি। মহামায়া লেকের নীল জলরশিতে কায়াকিং করতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, পর্যটকদের সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এখানে। খাওয়া ও থাকার জন্য রয়েছে উন্নত মানের রেস্টুরেন্ট এবং রিসোর্ট। নিরাপত্তার ব্যবস্থার জন্য পুরো পার্ক সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে।
দেশের যে কোনো স্থান থেকে যে কোনো গাড়িতে উঠে মিরসরাই উপজেলার ঠাকুরদিঘী নামতে হবে। সেখানে রাস্তার মুখে সিএনজি চালিত রিকসা রয়েছে। একজন ১৫ টাকা ভাড়ায় মূল গেটে যাওয়া যাবে।