বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২১ অপরাহ্ন

পম্পেই নগরী

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৪
পম্পেই নগরী নিয়ে বিশদ আলোচনা করতে গেলে এর ইতিহাস, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন, ধ্বংসের কারণ, এবং পরবর্তী প্রত্নতাত্ত্বিক কার্যক্রমের বিবরণ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
পম্পেই নগরীর ইতিহাস
পম্পেই নগরীর ইতিহাসের শিকড় খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ বা ৭ম শতাব্দীতে, যখন এটি একটি ছোট ইট্রাস্কান গ্রাম হিসেবে শুরু হয়। রোমান সাম্রাজ্যের প্রভাব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পম্পেই একটি সমৃদ্ধ বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। নগরীর অবস্থান ছিল গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী হিসেবে, যা রোমান সাম্রাজ্যের ব্যবসা ও বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন
পম্পেই নগরী ছিল একটি সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় সমাজ। এখানে ছিল বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ—ধনী জমিদার, বণিক, শিল্পী, শ্রমিক এবং দাস। নগরীর কেন্দ্রস্থলে ছিল ফোরাম, যা ছিল সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। পম্পেইতে বিভিন্ন মন্দির, থিয়েটার, স্নানাগার এবং বাজার ছিল, যা এর সাংস্কৃতিক ও সামাজিক জীবনের সমৃদ্ধির প্রতীক।
বিলাসবহুল ভিলাগুলোয় রোমানদের শিল্প ও সংস্কৃতির নানা নিদর্শন পাওয়া যায়। দেয়ালের চিত্রকর্ম, মূর্তি, এবং মোজাইকগুলো রোমানদের নান্দনিকতা এবং উচ্চমানের শিল্পকলার প্রতি আকর্ষণকে তুলে ধরে। পম্পেইয়ের বিখ্যাত “হাউস অফ দ্য ফন” এবং “ভেটি হাউস” এরকম কয়েকটি দৃষ্টান্ত।
ধ্বংসের কারণ ও প্রক্রিয়া
খ্রিস্টপূর্ব ৭৯ সালের ২৪ আগস্ট, ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরি হঠাৎ করে অগ্ন্যুৎপাত শুরু করে। প্রথমে ছাই এবং ধোঁয়া মেঘ আকাশ ঢেকে দেয়, যা সূর্যের আলো পর্যন্ত আটকিয়ে দেয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই লাভা ও পিউমিস পাথর নেমে আসে এবং তা প্রচণ্ড তাপে পুড়ে নগরীকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। বলা হয়ে থাকে যে পম্পেইয়ের প্রায় ২০,০০০ অধিবাসীর মধ্যে প্রায় ২,০০০ লোক নিহত হয়েছিল, বাকিরা পালাতে সক্ষম হয়েছিল।
প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
পম্পেই নগরী প্রায় ১৭০০ বছর ধরে মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল। ১৭৪৮ সালে খননকার্য শুরু হলে, পম্পেই ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে শুরু করে। এই নগরী অসাধারণভাবে সংরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায় কারণ ছাইয়ের স্তর এর ভবন, শিল্পকর্ম, এবং এমনকি মানুষের দেহাবশেষও মমির মতো সংরক্ষিত করে রেখেছিল। এটির মাধ্যমে রোমানদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, সামাজিক জীবন এবং তাদের বিশ্বাস সম্পর্কে নানা তথ্য জানা যায়।
পম্পেইতে প্রাপ্ত দেয়াললিপি ও চিত্রলিপিগুলোতে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক বার্তা, প্রেমের কবিতা এবং গৃহস্থালির তথ্যও পাওয়া যায়। এমনকি অনেক রেস্তোরাঁ এবং দোকানও পাওয়া গেছে, যেখানে খাবার পরিবেশনের জন্য কৌশল দেখানো হয়েছে।
পর্যটন এবং আজকের পম্পেই
আজকের দিনে পম্পেই নগরী একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র। এটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক এই প্রাচীন নগরী ঘুরে দেখেন, যার মধ্যে আছে থিয়েটার, বাগান, বাড়িঘর, এবং মন্দির। এখানকার খননকৃত নিদর্শনগুলো এখনও গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু, যা রোমান সভ্যতার বৈচিত্র্যপূর্ণ ইতিহাস তুলে ধরে।
পম্পেই নগরীর অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি একসময়কার জীবন্ত শহরকে প্রায় পুরোপুরি অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষিত করেছে। এর ফলে এই প্রাচীন নগরীর জীবনযাত্রার বাস্তব চিত্র পাওয়া যায়, যা ইতিহাসবিদ এবং প্রত্নতাত্ত্বিকদের জন্য অমূল্য।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com