বেশি রেটে এলসি খুলতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের
বাড়ছে পণ্য আমদানি ব্যয়
প্রভাব পড়ছে মূল্যস্ফীতিতে
এক ব্যাংকে থেকে আরেক ব্যাংকে যাচ্ছেন গ্রাহক। কিন্তু নির্ধারিত দরে ডলার সংস্থান করতে পারছেন না। এ কারণে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলা যাচ্ছে না। এ দিকে শিল্পের চাকা যেকোনো মতেই সচল রাখতে হবে। তাই নির্ধারিত দরের চেয়ে ডলারের বাড়তি দাম দিয়েই চাহিদার অর্ধেকেরও কম কাঁচামাল আমদানি করার জন্য এলসি খোলা হয়েছে। কথাগুলো বলেছেন দেশের একজন শিল্প উদ্যোক্তা।
ওই ব্যবসায়ীর মতো বেশির ভাগই ডলার সঙ্কটের কারণে প্রয়োজনীয় এলসি খুলতে পারছেন না। এ বিষয়ে খোদ ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) নেতৃবৃন্দ গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের কাছে এসে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তিনিও গভর্নরের কাছে অভিযোগ করেন, ব্যাংকে নির্ধারিত দরে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে তা ঘোষিত দরের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। গতকাল এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সাথে দেখা করার পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘ডলার মার্কেট নিয়ে গভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, নির্ধারিত রেটে সবাই ডলার পাবেন।’
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রেমিট্যান্স আহরণের জন্য ডলারের দর ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা বেঁধে দেয়া হয়েছে। একই সাথে আমদানিতে ডলারের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ টাকা। কিন্তু এই ১১০ টাকা দরে কোথাও ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। নির্ধারিত এ দরের চেয়ে বেশি দাম দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। অথচ অভিনব কায়দায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ১১০ টাকার লেনদেনের রিপোর্ট পাঠাচ্ছে ব্যাংকগুলো। একজন ব্যবসায়ী জানান, পণ্য আমদানির ১ মাস পর এলসির দায় পরিশোধ করতে হবে। এ জন্য আগে থেকেই ডলারের সংস্থান করতে হয়। এ জন্য এক মাস পরে ডলার পাবেন বলে ব্যাংক থেকে যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এ জন্য বাড়তি চার্জ নেয়া হচ্ছে। ব্যাংকিং ভাষায় তা করপোরেট ডিলিং বলা হচ্ছে। এভাবে ১১০ টাকার ডলার কিনতে বাড়তি ৬ টাকা থেকে ক্ষেত্রবিশেষ ১০ টাকা খরচ হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি ডলার কিনতে ক্ষেত্রবিশেষ ১২০ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এভাবেই ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোরভাবে হস্তক্ষেপ করতে হবে। কারণ, কোনো ব্যাংক নির্ধারিত দর দিয়ে রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করতে হলে ওই ব্যাংক কাক্সিক্ষত পরিমাণ ডলার সংস্থান করতে পারবে না। এর প্রকৃষ্ট উদাহারণ রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। ওই কর্মকর্তার মতে, সোনালী ব্যাংক বরাবরই রেমিট্যান্স আহরণের দিক থেকে শীর্ষ ৫ ব্যাংকের মধ্যে থাকতো। কিন্তু এখন শীর্ষ ১০ ব্যাংকের মধ্যেও ব্যাংকটি থাকতে পারছে না। অথচ এমন অনেক ব্যাংক শীর্ষ ১০ ব্যাংকের মধ্যে চলে আসছে, যা রেমিট্যান্স আহরণের অতিত ইতিহাস ঘাঁটলে শীর্ষ ২০ ব্যাংকের মধ্যে ওই ব্যাংক ছিল না। এভাবেই দর মানতে গিয়ে অনেক ব্যাংক বিপদে পড়ে যাচ্ছে। তারা গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী ডলার সংস্থান করতে পারছেন না। তবে, ব্যসায়ীরা জানিয়েছেন, তাদের উৎপাদন ঠিক রাখতে বাধ্য হয়েই বাড়তি দামেই ডলার কিনতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। যদিও উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেকও উৎপাদন করা যাচ্ছে না শুধু কাঁচামালের অভাবে। এ পরিস্থিতিতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে। এভাবেই মূল্যস্ফীতির পাগলা ঘোড়া থামানো যাচ্ছে না।
এ দিকে গতকাল এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম গভর্নরের সাথে বৈঠক শেষে আরও বলেন, ‘ব্যাংক ঋণের সুদের হার না বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছি গভর্নরের কাছে। এলসি খোলা নিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের নিয়ে আমরা কথা বলেছি। তারা যেন এলসি খুলতে পারেন, এ বিষয়ে গভর্নর আশ্বস্ত করেছেন এবং ব্যাংকগুলোকে সেভাবেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।’