শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৩২ অপরাহ্ন

নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন সিটিতে কয়েক সহস্রাধিক গ্রেপ্তার : টার্গেট স্যাংচুয়ারি সিটিগুলো

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটে বসবাসরত অনথিভুক্ত ও অপরাধী অভিবাসী ধরপাকড়ে সাড়াঁশি যৌথ অভিযান চালাচ্ছে আইস, এফবিআই, এ টি এফ, ডিইএ ও বর্ডার পেট্রোলসহ ফেডারেল আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। ৮  দিনে  কয়েক সহস্রাধিক অনথিভুক্ত ও অপরাধী অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর এ পর্যন্ত এসব অভিযানে শিকাগো, নিউইয়র্ক, ডেনভারসহ একাধিক স্যাংচুয়ারি সিটি থেকেই প্রায় দেড় হাজার অনথিভুক্ত ও অপরাধী অভিবাসী গ্রেপ্তার করা হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স, সিএনএন বিবিসি, এবিসি নিউজ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মূলত আইস স্যাংচুয়ারি সিটিগুলোতে অনথিভুক্ত ও অপরাধী অভিবাসী গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে। শিকাগো, নিউইয়র্ক, নিউজার্সির নিউ ইয়ার্ক ও বস্টনের ম্যাসসেচুয়েটসসহ স্যাংচুয়ারি সিটিতে ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এর নেতৃত্বে যৌথ অভিযানে প্রায় হাজার অভিবাসী গ্রেপ্তার হয়েছেন। কোন অপরাধে অভিযুক্ত ও সম্পৃক্ততা নেই এরকম দেড়শ অভিবাসীকে আটকের খবর পাওয়া গেছে এবিসি ও সিএনএন’র প্রতিবেদনে। এরকম অভিযানে স্যাংকচুয়ারি সিটির অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে দু:শ্চিন্তা চরম আকার ধারণ করেছে। নিউইয়র্কে ১ বাংলাদেশিসহ দুই দিনে ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)। এর মধ্যে সাব্বির আহমেদ নামের এক বাংলাদেশিও রয়েছেন। ফেডারেল ল এনফোর্সমেন্ট এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার সদরের বাসিন্দা সাব্বির ব্রাজিল হয়ে মেক্সিকো বর্ডার দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন ২০২২ সালের ২১ জানুয়ারি। যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন ২৯ বছর বয়সী এই তরুণ। তাঁকে গ্রেপ্তারের সময় আইসের সদস্যদের সঙ্গে সাদাপোশাকধারী পুলিশ সদস্য ও নিউইয়র্ক পুলিশ দপ্তরের সদস্যরা ছিলেন

এদিকে গ্রেপ্তার অভিযানে আতঙ্কে নিউইয়র্কের শেল্টার হাউজে থাকা অনেক অভিবাসী সেখান থেকে সরে গেছেন। নিউইয়র্কে গত কয়েক দিন থেকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে শিকাগোর স্থানীয় একটি দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের নানা তৎপরতার মুখে আতঙ্কে রয়েছেন শহরটির অনেক অধিবাসী। তাঁদের অনেকে স্কুল বা কাজে যাচ্ছেন না। যেমন শহরটির উপকণ্ঠে বসবাস করা দুই বোন ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে স্কুলে যাচ্ছে না। তাদের মা-বাবাও কাজে যাওয়া বন্ধ রেখেছেন।

সিএনএনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বর্ডার জার টম হোম্যান ঝটিকা অভিযান শুরুর দিনকে ‘একটি ভালো দিন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, এই অভিযান ‘মোড় বদলে’ দেওয়ার মতো একটি ঘটনা।

ওই সাক্ষাৎকারের সময় ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের শিকাগো শহরে ছিলেন টম হোম্যান। তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে (অবৈধ অভিবাসন) পুরো প্রশাসনকে কাজে লাগিয়েছেন। শিকাগোর জননিরাপত্তা এবং জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিগুলোর ওপর নজর রাখতে আজ আমরা সরকারের সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে মাঠে নামিয়েছি। ধীরে ধীরে অভিযানের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

এবিসি নিউজকে টম হোম্যান বলেন, অবৈধ ভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ আইন লঙ্ঘন। এটা অপরাধ। আমরা আমাদের দেশের জাতীয় নিরাপত্তায় হুমিক আছে এমন অবৈধদের গ্রেপ্তার ও ডিপোর্টেশন অগ্রাধিকারে রেখেছি। নির্বাসন ফ্লাইট শুরু হয়ে গেছে। কিছুদিনের মধ্যে অবৈধদের বড় ধরণের নির্বাসন দেখতে পাবেন।

ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) সাতটি অঙ্গরাজ্য থেকে তিন দিনে প্রায় ৫৩৮ অনথিভুক্ত অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া ৩৭৩ জনকে আটক করা হয়। তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে নিউইয়র্ক ও নিউ জার্সির শহরগুলোতে নানা অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ রোববার একদিনে ৯৫৬ জন অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে আইস। এ নিয়ে সর্বমোট রোববার পর্যন্ত ২৬৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নিউইয়র্কে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে এল সালভাদরের একজন এমএস-১৩ গ্যাং সদস্য। তিনি জ্যামাইকার একজন নাগরিক। অপ্রাপ্তবয়স্ক একজনকে যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত তিনি। এছাড়া হন্ডুরাসের একজন নাগরিক রয়েছেন যিনি মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর দায়ে অভিযুক্ত। এ রকম অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বোস্টন, ডেনভার, ফিলাডেলফিয়া, আটলান্টা, সিয়াটল, মিয়ামি ও ওয়াশিংটন, ডিসিতে।

নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অভিবাসীদের আটকে রাখা বা বিতাড়িত করতে বাধ্য করতে পারে না। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট সংবিধানকে একতরফাভাবে পরিবর্তন করতে পারেন না। আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অফিসের সঙ্গে কাজ করতে রাজি, তবে আমরা দুর্বল বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা করব, যার মধ্যে অভিবাসী সম্প্রদায়ও অন্তর্ভুক্ত।’

নিউইয়র্ক সিটির স্কুলগুলো বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কোনো পরিস্থিতিতেই আইসিই এজেন্টদের স্কুলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যাবে না।

এছাড়া নিউইয়র্কের কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে এনওয়াই পোস্ট বলছে, স্যাংচুয়ারি সিটি হিসেবে নিউইয়র্কের পুলিশ আইসসহ ফেডারেলের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে সহযোগিতা করবেনা। তবে ফেডারেলের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলির অভিযানে কোন বাধাও দিতে পারবেনা।

এদিকে ইমিগ্রেশন বিশ্লেষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, আনডকুমেন্ট ও অপরাধী অভিবাসীদের গ্রেপ্তার করে সাথে সাথে কোন আইনী প্রক্রিয়া না মেনে কয়েক শতাধিক অভিবাসীকে হাতকড়া পরিয়ে সামরিক বিমানে করে বহিস্কার করা হচ্ছে। এটি কোনভাবেই কাম্য নয়। আনডকুমেন্ট ও অপরাধী অভিবাসীদের গ্রেপ্তারের পর তাদের ডিটেনশন ও আদালতে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত।

২০ জানুয়ারি সোমবার শপথ নেওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ১০০টি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন তার মধ্যে কয়েকটি সরাসরি অভিবাসনবিরোধী ছিল। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণের পথ বন্ধ করে দেন। পাশাপাশি এমন একটি আদেশে সই করেন, যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শুরু হয় বিতর্ক। তা হলো– নথিপত্রহীন বাবা-মা যদি যুক্তরাষ্ট্রে সন্তান জন্ম দেন, তবে ওই সন্তান দেশটির নাগরিক হতে পারবে না। প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেওয়ার পরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ নির্বাহী আদেশ সাময়িক স্থগিত করেছেন আদালত। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের সিয়াটলে ফেডারেল বিচারক জন কুফনার এ আদেশ দেন। আদেশটি স্থগিত করতে ওয়াশিংটনের অ্যাটর্নি জেনারেল নিক ব্রাউন এ আবেদন করেছিলেন।

আদালত ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশকে ‘পুরোপুরি অসাংবিধানিক’ বলে বর্ণনা করেন। বিচারক জন কুফনার বলেন, ‘আমি চার দশক ধরে (আদালতের) এ বেঞ্চে আছি। আমি আর কোনো মামলা এত স্পষ্ট দেখিনি।’ ওয়াশিংটন ছাড়াও অ্যারিজোনা, ইলিনয় ও ওরেগন অঙ্গরাজ্যে এদিন এসব মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার বাতিল প্রসঙ্গে আইনজীবীদের দাবি, প্রেসিডেন্ট বা ফেডারেল এজেন্সি সংবিধান অনুসারে এ ধরনের শর্ত আরোপ করার অধিকার রাখে না।
কুইন্সে একটি অনুষ্ঠানে মেয়র অ্যাডামস বলেছেন, শিশুরা স্কুলে যাবে। যাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন, তারা হাসপাতালে যাবে। যারা অপরাধের শিকার, তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে কথা বলবে। আমরা সবার জন্য দাঁড়াবো।

নিউ জার্সির নিউয়ার্ক শহরের মেয়র রাস বারাকা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার তার শহরে আইসিই এজেন্টরা একটি অভিযান চালিয়েছে। পরে ইউএস ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এজেন্টরা নিউয়ার্কের একটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে অনথিভুক্ত বাসিন্দাদের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদেরও আটক করেছে, কিন্তু কোনো ওয়ারেন্ট দেখায়নি। আমাদের শহর মানুষের ওপর এভাবে অবৈধ সন্ত্রাস চালানো সহ্য করবে না।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com