একটি ছোট ও একদা গুরুত্বহীন দেশ থেকে এসে নিউইয়র্ক সিটির বাংলাদেশীরা অত্যন্ত কম সময়ে যা অর্জন করেছে, তাকে এখন আর অবহেলার দৃষ্টিতে দেখা বা ত্চ্ছুতাচ্ছিল্য করার সুযোগ নেই।
নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কম্যুনিটিতে যারা বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত, বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে কম্যুনিটিকে প্রাণবন্ত করে রাখেন, কিন্তু তথাকথিত এলিটদের কাছে এই অবহেলিত মানুষরাই সামাজিক ও রাজনৈতিক অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন মূলধারায়। গত রবিবার জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রিটের নাম ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ করার কারিগরও তারাই। তাই তাদের অর্থাৎ কম্যুনিটি নেতৃবৃন্দকে স্যালুট জানানো উচিত।
গত প্রায় ২০ বছরে নিউইয়র্ক সিটিতে বিশেষ করে ব্রংক্স, ব্রæকলীন ও কুইন্সে ৮টি রাস্তার নাম বাংলা, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশীদের নামে হয়েছে। এটাকে কোনোভাবেই সংকীর্ণ দৃষ্টিতে দেখা ঠিক হবে না।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নিউইয়র্ক সিটিতে প্রথম রাস্তার নামকরণ বাংলা ভাষার নামে বাংলাবাজার ওয়ে হয় ব্রংক্সের পার্কচেস্টারে স্টার্লিং এভেন্যু ও ইউনিয়ন পোর্ট রোডের কর্ণারটি। ব্রংক্সের তরুণ কম্যুনিটি লিডারদের উদ্যোগে মেয়র মাইকেল বøুমবার্গের সময় এই স্ট্রিট সাইন ওঠে। তৎকালীন কাউন্সিলউয়োম্যান এনাবেল পালমার বিলে এই নামকরণ হয়।
তবে কোনো বাংলাদেশী ইমিগ্রান্টের নামে প্রথম রাস্তার নামকরণ হয় ওজোন পার্কে। ওজোন পার্কে ২০০২ সালের ১১ আগস্ট রাতে রেস্টুরেন্টের কাজ সেরে বাসায় ফেরার পথে লিবার্টি এভেন্যু ও ফরবেল স্ট্রিটের কর্ণারে ফটো সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে একদল দুর্বৃত্ত হত্যা করলে মেয়র বøুমবার্গের প্রশাসনে ঝড় ওঠে। পরে তার নামে একটি রাস্তার নামকরণ করা হয় মিজানুর রহমান ওয়ে, অত্যন্ত দ্রæততম সময়ে, অর্থাৎ ঐ বছরেই।
এরপর ৯/১১ এ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে কর্মরত দম্পতি শাকিলা ইয়াসমিন ও নূরুল হক মিয়ার নামে তারা ব্রæকলীনে যেখানে বাস করতেন সেখানকার দুটি রাস্তার নামকরণ করা হয়। এই দুটি রাস্তার নাম হয় শাকিলা ইয়াসমিন ওয়ে ও নূরুল হক মিয়া ওয়ে।
এর দীর্ঘদিন পরে জ্যামাইকা থেকে জিম জিনারো পুনরায় কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হলে, ২০২১ সালে ১৪ ডিসেম্বর তিনি জ্যামাইকায় হিলসাইড এভেন্যু ও হোমলন স্ট্রিটের কর্ণারের নাম লিটল বাংলাদেশ এভেন্যু করেন। এই রাস্তার নামফলক উন্মোচন করেন তিনি ২০২২ সালের ২১ ফেব্রæয়ারি বাঙালিদের একটি ঐতিহাসিক দিনে।
একই বছর নিউইয়র্কে প্রথম বাংলাদেশী- আমেরিকান সিটি কাউন্সিলউয়োম্যান শাহানা হানিফ তাঁর নির্বাচনী এলাকা বাংলাদেশী অধ্যুষিত কেনসিংটনে চার্চ ও ম্যাকডোনাল্ড এভেন্যুর কর্ণারকে লিটল বাংলাদেশ নামকরণের বিল উত্থাপন করলে তা পাশ হয়। এবং অক্টোবর মাসে শাহানা হানিফ এই লিটল বাংলাদেশের নামফলক উন্মোচন করেন।
গত বছর জ্যাকসন হাইটস এলাকা থেকে নির্বাচিত সিটি কাউন্সিলম্যান শেকার কৃষ্ণান কুইন্সের দুটি রাস্তার নামকরণ বাংলাদেশ ও বাংলাদেশী-আমেরিকানের নামে করার বিল তোলেন। এবং যথারীতি পাশ হয় গত ফেব্রæয়ারি মাসে। সেই সাথে ওজোন পার্কে আরো একটি রাস্তার নামকরণ বিল পাশ হয়। এই বিলটি তোলেন এই ডিস্ট্রিক্টের কাউন্সিলউয়োম্যান জোয়েন এরিওলা। সেই রাস্তার নাম লিটল বাংলাদেশ ওয়ে। গত ১০ মার্চ নামফলক উন্মোচন করা হয় লিটল বাংলাদেশ ওয়ের। আর গত রবিবার বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসে জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রিটে ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’এর নামফলক উন্মোচন করলেন নির্বাচিত প্রতিনিধিবৃন্দ ও বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীদের নিয়ে কাউন্সিলম্যান শেকার কৃষ্ণান।
কাউন্সিলম্যান শেকার কৃষ্ণানের উত্থাপিত বিলে অপর যে রাস্তার নাম ছিল, তাহলো ২০০৮ সালে কুইন্স বুলোভার্ডে ট্রাকের চাপায় নিহত আসিফ রহমানের নামে ৫৬ রোডের নাম আসিফ রহমান ওয়ে। এই রাস্তার নামফলক উন্মোচন করবেন শেকার কৃষ্ণান জুন মাসে।
নিউইয়র্ক সিটির তিন বরোতে এখন তিনটি রাস্তার নাম বাংলাদেশের নামে, একটি বাংলা ভাষার নামে আর অপর ৪টি চার বাংলাদেশীর নামে।