জীবনের কত গল্পই তো থাকে। কোনো গল্প হয়তো কষ্টের কিংবা সংগ্রামের। তবে সেসব কষ্টের গল্প মানুষ শুনতে চায় সফল হওয়ার পর। ব্যর্থ ব্যক্তির সংগ্রামের গল্প কেউ শুনতে চান না।
বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি পাকিস্তান। পেস বোলিং ইউনিটের জন্য শুরু থেকেই তাদের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। বিখ্যাত সব বোলাররা খেলেছেন পাকিস্তানের হয়ে। হারিস রউফ তাদেরই উত্তরসূরি। তার জীবনের গল্পটা অন্যদের থেকে একটু ভিন্ন। নিজের জীবিকা নির্বাহ করতে একসময় বিক্রি করেছেন নাস্তা। থাকার জায়গার অভাবে ঘুমিয়েছেন রান্নাঘরে।
ভারতে বিশ্বকাপ শুরুর আগে ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফোর প্রামাণ্যচিত্র ‘ইনক্রেডিবল রাইজ অব হারিস রউফ’ পর্বে নিজের জীবনের নানা সংগ্রামের গল্প তুলে ধরেছেন হারিস।
পাকিস্তানের রাউয়ালপিন্ডিতে ১৯৯৩ সালের ৭ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন হারিস রউফ। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট ভালোবাসতেন। ফুটবলও খেলতেন ভালো। তবে পেশাদার ক্রিকেটার হবেন স্বপ্ন দেখতে ভয় পেতেন দারিদ্রের কারণে। শুরুতে টেপটেনিস বলেই খেলতে শুরু করেন হারিস। পাড়ার ক্রিকেটে খেলে আয় করতেন অর্থ।
২০১৭ সালে লাহোর কালান্দার্সের ট্রায়ালে অংশ নেন হারিস। প্রথমবারেই মেলে সাফল্য। চোখে পড়ে যান কোচ আকিব জাভেদের। সেই ট্রায়ালের গল্প বলতে গিয়ে হারিস জানান, সেদিন ট্রায়ালে যারা ৮৩-৮৪ মাইল গতিতে বল ছুড়তে পেরেছিল কোচ তাদের সিলেক্ট করেছিলেন। আমি ট্রায়ালের প্রথম বলটি করি ৮৮ মাইল স্পিডে। এরপর কোচ ভাবলেন মেশিনে হয়তো কোনো সমস্যা আছে, নইলে এত গতি কিভাবে? এরপর তিনি আবার আমাকে বল করতে বললে আমি পরের বলটি করি ৯০ মাইল গতিতে। এরপর কোচ আরেকটি বল করতে বলেন। আমার সেই বলের গতি ছিল ঘণ্টায় ৯২ মাইল।
ইএসপিএন ক্রিকইনফোর সেই প্রামাণ্যচিত্রে এ প্রসঙ্গে আকিব জাভেদ বলেন, ট্রায়ালে যখন দেখলাম একজন বোলার ৯২ মাইল গতিতে বল করছে তখন মনে হয়েছে ট্রায়ালের উদ্দেশ্য সফল।
আকিভ জাভেদের ট্রায়ালে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বদলে যায় হারিস রউফের জীবন। হারিস ২০১৮ সালে আবুধাবি টি-টোয়েন্টি ট্রফির জন্য লাহোর কালান্দার্স দলে ডাক পান। ঘরোয়া লিগে ভালো পারফরম্যান্স তাকে ২০২০ সালে জায়গা করে দেয় জাতীয় দলে। হারিসের অভিষেক হয় বাংলাদেশের বিপক্ষে।
প্রামাণ্যচিত্রে হারিস বলেন, এসএসসি পরীক্ষা শেষে লেখাপড়ার খরচ বহন করতে প্রতি রোববার আমি বাজারে নাস্তা বিক্রি করতাম। সপ্তাহের অন্যদিনে স্কুল এবং একাডেমিতে সময় দিতাম। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর আমার পড়ালেখা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। সেই খরচ জোগাতে আমি টেপ টেনিস ক্রিকেট খেলতাম। এতে ভালোই চলছিল, প্রতিমাসে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা পেতাম। সেই টাকা বাবা মাকে দিতাম। তবে এসব টাকা কোথা হতে আসে তার বিস্তারিত বাবা-মাকে জানাইনি।
হারিস আরও বলেন, আমার বাবার আরো তিন ভাই ছিল এবং সবাই একত্রে বসবাস করতেন। একটি বড় ঘরে সবাই থাকতাম। চাচারা বিয়ে করলে বাবা তাদের ঘর ছেড়ে দেয়। থাকার জায়গার সংকটে রান্না ঘরেই ঘুমাতাম আমরা। মায়ের একটি স্বপ্ন ছিল আমাদের ঘর হবে।
২০২০ সালে অভিষেকের পর পাকিস্তান পেস ইউনিটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হারিস। লাইন, লেন্থ, গতি সব দিক থেকেই হারিস অন্যতম। ১৪০+ গতিতে অনায়াসেই বল ছুড়তে দক্ষ তিনি। ২৯ বছর বয়সী এই পেসার ৩০ ওয়ানডেতে তুলে নিয়েছেন ৫৮ উইকেট। ৫.৬৮ ইকোনোমিতে বোলিং এভারেজ ২৪.০৭। ৬২টি টি-টুয়েন্টি ম্যাচে নিয়েছেন ৮৩ উইকেট। ৮.০৪ ইকোনোমিতে বোলিং এভারেজ ২১.০৭।