এদের সঙ্গেই গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মাহবুবা হক ছিলেন কক্সবাজারে। সঙ্গে ছিল আরও ২০ জন নারী। লেডি ট্রাভেলারস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মারজীয়া মেহজাবীনের সঙ্গে মূলত মুঠোফোনে আলাপের সময় পাশে থাকা মাহবুবার সঙ্গেও কথা হয়। শুধু মাহবুবা হক নন, তাঁর মতো অনেক নারীই ফেসবুকভিত্তিক এই পর্যটন সংস্থার সঙ্গে দেশে-বিদেশে ঘোরার সুযোগ পেয়েছেন। তাঁরা ঘুরছেন বলেই ২০১৭ সালে চালু হওয়া এলটিবি ৪ বছরে ১৬৮টি ট্যুর পরিচালনা করেছে। করোনাকালে চার মাস বন্ধ থাকার পর আবারও পুরোদমে শুরু করেছে কার্যক্রম।
মারজীয়া মেহজাবীন বলেন, ভ্রমণ মানুষের মনের প্রশান্তির জন্য ওষুধের মতো কাজ করে। আমাদের দেশের নারীদের ওপর যে ধকল যায়, তাতে তাদের বেরিয়ে পড়া আগে দরকার। স্বামীর ব্যস্ততার কারণে আমি নিজেও বেরিয়ে পড়তাম ঘুরতে। তখন মনে হলো অন্যদেরও উৎসাহিত করি, একসঙ্গে ঘুরি, সেই চিন্তা থেকেই ফেসবুকে গ্রুপটা খোলা।

২০১৭ সালের ৯ মে লেডি ট্রাভেলারস বাংলাদেশ (এলটিবি) গ্রুপ খোলা হয়। শুরুতে দল বেঁধে ঘুরতে যেতেন। মাস কয়েক পর মারজীয়া গ্রুপটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন। বাণিজ্যিকভাবে ভ্রমণসেবা দিতে শুরু করেন। তবে বাণিজ্যের চেয়ে ভ্রমণকারীরা বেশি পেয়েছে বন্ধুত্ব, সহযাত্রীসুলভ আচরণ। দিন দিন তাই গ্রুপে সদস্যসংখ্যা বাড়তে থাকল, বাড়তে থাকল ইভেন্ট সংখ্যাও। এলটিবি এখন ৮১ হাজারের বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারীর পরিবার। এই সদস্যরা নিজেরা ভ্রমণ নিয়ে কথা বলেন, ভ্রমণের ছবি পোস্ট করেন, পোস্ট করেন নিজেদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। রাজধানীর মিরপুরে এলটিবি কার্যালয় হয়েছে, কাজ করেন ছয়জন কর্মী। দেশের ভেতর সিলেট, কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন, সুন্দরবন, বান্দরবানসহ নানা পর্যটনকেন্দ্রে ভ্রমণ পরিচালনা করেছে এলটিবি, নারীদের দল বেঁধে নিয়ে গেছেন থাইল্যান্ড, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশেও।
মারজীয়া মেহজাবীন বলেন, ‘আমরা অনেকেই সংসার আর পেশাজীবনের চক্করে পুরোনো বন্ধুদের হারিয়ে ফেলি। ছেলেরা কর্মক্ষেত্রে নতুন বন্ধু পেলেও নারীদের গণ্ডিটা সংকুচিত হয়ে যায়। ভ্রমণ তখন যেন স্বামীর দয়া অথবা পরিবারের অবসরের ওপর নির্ভর হয়ে ওঠে। লেডি ট্রাভেলারস বাংলাদেশ এই নারীদের ভ্রমণের সুযোগ করে দিতে পেরেছে।’
এলটিবি নিয়ে যেমন মারজীয়ার রয়েছে নানা পরিকল্পনা, তেমনি নারী ভ্রমণপিপাসুদের নিরাপদ ভ্রমণের সুযোগ তৈরিতে নিরন্তর চেষ্টাও। মারজীয়ার সেই আন্তরিক চেষ্টার জন্যই তো মাহবুবা হকেরা এলটিবিকে মনে করেন ‘আরেকটি পরিবার’।