নায়াগ্রা নদীটি প্রায় ১২০০ বছর পুরনো হলেও আরো অনেক আগে প্রায় ১৮০০ বছর পূর্বে ওন্টারিওর দক্ষিণে প্রায় ২ থেকে ৩ কিলোমিটার বরফে ঢাকা ছিলো। সমস্ত এলাক জুড়ে বরফ এমন ভাবে ছিলো যেনো দেখলে মনে হতো শুভ্র সাদা কোন কাগজ হয়তো ভাঁজ করে রাখা হয়েছে।
গ্রীষ্পমন্ডলীয় পরিবর্তনের ফলে গলতে শুরু করে বরফ আর ফ্রেট লেকস বেসিনে প্রচুর পানি জমতে শুরু করে আর লেক ঈরি, নায়াগ্রা নদী আর লেক ওন্টারিও থেকে আসা পানি মিলে এক বিশাল জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। যা, বর্তমানে আমরা নায়াগ্রা’র জলপ্রপাত বলে থাকি।
নায়াগ্রা জলপ্রপাত এর ইংরেজী নাম Niagra Falls । এটি নায়াগ্রা নামক নদীর উপর অবস্থিত বলে এর নাম “নায়াগ্রা” হয় বলে স্থানীয়দের ধারনা। কানাডা এবং আমেরিকা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত এই নায়াগ্রা জলপ্রপাত। মূলত তিনটি পাশাপাশি অবস্থিত ভিন্ন জলপ্রপাত নিয়ে নায়াগ্রা জলপ্রপাত গঠিত। এই তিনটি জলপ্রপাতের নাম: হর্স্শু ফল্স বা কানাডা ফল্স, আমেরিকান ফল্স এবং ব্রাইডাল ভিল ফল্স। প্রতিদিন প্রতিমিনিটে নায়াগ্রা জলপ্রপাত ৬০ লক্ষ ঘনফুট মাত্রাধিক জল প্রবাহিত করে। যার গড় পরিমান হলো ৪০ লক্ষ ঘনফুট।
একবার ১৯৪৮ সালের দিকে বরফ জমে প্রায় ৪০ থেকে ৪২ ঘন্টার জন্য বন্ধ হয়ে যায় পানির স্রোত। তারপর বিপাকে পড়ে যায় দেশের সামগ্রিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। কারন, নায়াগ্রার জলবিদ্যুৎ এর উপর অনেকটাই নির্ভরশীল দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। এই অবস্থা মোকাবেলার জন্য পরবর্তিতে ১৯৫০ সালে নায়াগ্রা চুক্তি’র মাধ্যমে জলপ্রপাতের জল নিয়ন্ত্রন করা শুরু করা হয়।
১৮২৯ সালের অক্টোবরের দিকে স্যাম পেচ নামক এর দুঃসাহসী অভিযাত্রী ঝাঁপ দিয়েছিলেন নায়াগ্রায়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, স্যাম পেচ সেই যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিলো। স্যামের এই কান্ড দেখে আরো অনেকে এই দুঃসাহসী কাজ করার সাহস পায় এবং তারা স্যামের দেখানো পথ অবলম্বন করে। অনেকে সফল হয়েছিলো, কিন্তু অনেককে এর মাশুল গুনতে হয়েছিলো নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে।
কেও দড়ির উপর দিয়ে হেঁটে, কেও আবার নিজেকে ব্যারেলে (ড্রাম জাতীয় কিছু) ভরে নিয়ে ভেসে গিয়েছেন উত্তাল এই জলপ্রপাত এর মধ্যে। কেওবা ব্যারেল শুদ্ধ আছড়ে পরেছে নায়াগ্রা’র ১৭৩ ফুট উচ্চতা থেকে। যারা এইসব করতো, তাদের নাম দেয়া হয়েছিলো “ফানামবুলিস্ট”।
যারা দড়ির উপর দিয়ে নায়াগ্রা পার হয়েছেন তাদের মধ্যে সবথেকে সেরা ছিলো দ্যা গ্রেট ব্লঁদ্যা। এই সাহসী অভিযাত্রী ১৮৫৯ থেকে ১৮৬০ সালের মধ্যে মোট ২৩ বার নায়াগ্রা পার করেছেন। তবে ২০১২ সালের ১৫ জুন, নিক ওয়ালান্ডা নামক এক মার্কিন যুবক দুই ইঞ্চি তারের উপর দিয়ে হেঁটে নায়াগ্রা পার করে আলোচনার তুঙ্গে ছিলেন। তাছাড়া সিগনর ফেরিনি, হেনরি বেলেনি, জেমস হার্ডিয়া এবং একমাত্র নারী মিসেস টেইলর ছাড়াও আরো অনেক দুঃসাহসী অভিযাত্রী এই নায়াগ্রা জলপ্রপাত অতিক্রম করে ইতিহাসে নিজেদের নাম লিখিয়েছেন।
বাংলাদেশের বান্দরবন এর থানচি উপজেলা থেকে প্রায় দুই থেকে তিন ঘন্টার দূরত্বে আছে “নাফাখুম জলপ্রপাত” যাকে “বাংলার নায়াগ্রা” বলা হয়। ভ্রমন পিপাসুরা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতন করেই যারা নায়াগ্রার অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পারেন না তারা নিশ্চিন্তে ঘুরে আসতে পারেন আমাদের বাংলার নায়াগ্রা খ্যাঁত নাফাখুম থেকে।
তবে, নায়াগ্রা জলপ্রপাত প্রকৃতির এক অপার সৃষ্টি। যার সৌন্দর্য আসলেই বর্ননার মতন না। অনেক কিছুই প্রকৃতি তৈরি করেছে, তার চারপাশে রহস্য সৃষ্টির জন্য। নায়াগ্রা তার একটি। সময় আর সুযোগ হলে ঘুরেই আসুন না, প্রকৃতির এই অপরূপ সৃষ্টি থেকে।