মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৬:৩০ অপরাহ্ন

নান্দনিক দ্বীপ ‘মায়া বে’ ভ্রমণ

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৪ মার্চ, ২০২৫

ছেলেবেলায় দেয়ালে টানানো ক্যালেন্ডারে আইল্যান্ডগুলোর ছবি দেখে মুগ্ধ হতাম। একটু বড় হতেই ভাবতাম বাস্তবে এমন আইল্যান্ডের অস্তিত্ব নেই। এসব হয়তো কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা কিংবা কম্পিউটার গ্রাফিক্সে করা ছবি। বড় হয়ে জানলাম নান্দনিক বিস্ময়জাগানিয়া সৌন্দর্য নিয়ে এসব দ্বীপ ঠিকই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে।  ভারতের সিকিম ও পেলিংয়ে ঘোরার পর এবার আমার গন্তব্য ছিল থাইল্যান্ড। দেশটি মূলত সাগরতীরবর্তী একটি দেশ। তবে মধ্যভাগে সমভূমি, পশ্চিম, উত্তর ও পূর্ব দিক ঘিরে রেখেছে পাহাড় ও মালভূমি। পশ্চিমের পর্বতশ্রেণি দক্ষিণ দিকে মালয় উপদ্বীপে প্রসারিত হয়েছে। সারাবিশ্বের পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় একটি দেশ এটি। নান্দনিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ বিভিন্ন সমুদ্রসৈকত, পাহাড়, সমতল আর সমুদ্রের অপরূপ সৌন্দর্যের কারণেই দেশটি হাত প্রসারিত করে টানে পর্যটকদের। থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, পাতায়া, ফুকেট ও ক্রাবি নিয়ে অন্য আরেক দিন লেখা যাবে। আজ কেবল ফুকেট থেকে ২ ঘণ্টার দূরত্বের নান্দনিক এক দ্বীপ ‘মায়া বে’ নিয়ে লিখব।
ব্যাংকক নেমে বাসে করে ফুকেট : থাইল্যান্ডের অন্যতম আনন্দ আর উল্লাসের শহর ফুকেট। শহরটিকে থাইল্যান্ডের রূপের রানীও বলা হয়। ঢাকা থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ব্যাংককের সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টে নামার পরই ফুকেটের বাস ধরতে ৪০০ বাথ (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১২০০ টাকা) ভাড়া দিয়ে যেতে হয় বাস স্টপেজে। ৪০ কিলোমিটারের দূরত্ব। ব্যাংকক থেকে সরাসরি প্লেনে করেও ফুকেট যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রায় ৮১০ থাই বাথ কিংবা বাংলাদেশি টাকায় ১৫ হাজার টাকা ভাড়া পড়বে এতে। খরচ বাঁচাতেই তাই বাসের পথ বেছে নেওয়া। প্রায় ১০ ঘণ্টার জার্নির পর আমরা ফুকেট বাসস্টপে পৌঁছাই। সেখান থেকে ফের ৪০০ বাথ দিয়ে ট্যাক্সি ভাড়া করে যেতে হয় ফুকেটের মূল শহরে। যাত্রাটা দীর্ঘ সময়ের হলেও ফুকেট শহরে গিয়ে যাত্রার ক্লান্তি, গ্লানি সবই যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। এত সুন্দর শহর! এত এত ভ্রমণপিপাসু, এত গাড়ি কিন্তু কোনো শব্দ নেই। বলে রাখি, ফুকেটে আসার আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য এখানকার নাইটলাইফ নয়, এখান থেকে  আইল্যান্ডগুলো ঘুরে দেখা। কারণ, এ ফুকেট থেকেই থাইল্যান্ডের সব দ্বীপে যাওয়া যায়, যে দ্বীপের একেকটা একেক বিষয়ের জন্য বিখ্যাত– যেমন জেমস বন্ড আইল্যান্ড তাঁর বিশাল বিশাল রকের জন্য। খাই, নো খাই দ্বীপগুলো স্কুবা ডাইভিংয়ের স্বর্গরাজ্য। মানকি বিচ আবার আরও দক্ষিণের কোরাল দ্বীপগুলো সাজানো-গোছানো রঙিন সব পাথরের আয়োজনে। আর  ‘ফিফি আইল্যান্ড’ তো সবকিছুর সমষ্টিগত এক রূপ।

ফুকেট থেকে আইল্যান্ড দেখার প্রস্তুতি: ফুকেট শহরের অলিগলিতে বিভিন্ন পর্যটক সেন্টার রয়েছে। তাতে এক দিনে কয়েকটি আইল্যান্ড ঘুরিয়ে আনার ভ্রমণ প্যাকেজ নিয়ে বেশ কিছু প্যাকেজের সমাহার নিয়ে বসে থাকে সেন্টারগুলো। তার এক সেন্টার থেকেই আমরা একটি প্যাকেজ ক্রয় করি। জনপ্রতি ৮৫০ থাই বাথ। যদিও প্যাকেজের গায়ে ১ হাজার বাথ মূল্য লেখা। বেশ কয়েকটি সেন্টার ঘুরে ঘুরে আমরা সেটিকে দরদাম করে ৮৫০ থাই বাথে ঠিকঠাক করি। এই প্যাকেজের অধীনে আমরা দেখব– মায়া বে, ফিফি আইল্যান্ড, মানকি বিচ, খাই এবং নো খাই দ্বীপে স্কুবা ডাইভিং। সঙ্গে ফিফিতে দিয়ে দুপুরে বুফে খাবারের ব্যবস্থাও রয়েছে প্যাকেজে। পরদিন সকাল ৯টায় হোটেলের গেট থেকে এজেন্সির মাইক্রোবাসে আমাদের নিয়ে যাবে। দুই ঘণ্টার জার্নির পর আমরা স্পিডবোটে করে রওনা দেব আইল্যান্ডগুলো দেখার উদ্দেশ্যে।

সঙ্গে তাদের দেওয়া একজন গার্ডও থাকবে। পরের দিন যথাযথ সময়ে এজেন্সির মাইক্রোবাস আমাদের পৌঁছে দেয় স্পিডবোটের কাছে। মনের ভেতরে উৎকণ্ঠা, ভয় ও শঙ্কা বারবার উঁকি দিচ্ছে। যেখানে যাচ্ছি মন ভরবে তো! নাহ নিরাশ হইনি। বলে রাখি, আমরা স্পিডবোটে করে গেলেও এর বাইরে বিশাল এক রিভার ক্রুজে করেও যাওয়া যায়। এতে সময় একটু বেশি লাগে। অনেকেই ক্রুজে করে গিয়ে মায়া বে বা ফিফি আইল্যান্ডে অবস্থান করেন। এটা করলে আরও উপভোগ্য সময় কাটানো যায়। ভাড়া পড়বে সর্বনিম্ন ১ হাজার বাথ। যদিও ১ হাজার বাথে চারদিকে নীল জলের সমুদ্র, মাঝখানে সুন্দরের পসরা সাজানো আইল্যান্ডে রাতযাপন করতে পারলে দারুণ উপভোগ্য সময় কাটবে এটি নিশ্চিত করেই বলা যায়। তবে এখানে থাকার উদ্দেশ্যে যেতে হলে রিসোর্টগুলোয় আগেই বুক করে যেতে হবে। না হলে রুম পাওয়া দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

অবশেষে মায়া বে …
আকাশে থোকা থোকা মেঘ, নিচে নীল জলের অথই সমুদ্র। সেই সমুদ্রের মধ্যে বিলি কেটে যাওয়ার মতো করে ছুটছে আমাদের স্পিডবোট। মায়া বে বা ফিফিতে যেতে হয় আন্দামান সাগর পাড়ি দিয়ে। সাগড় পাড়ি দিয়েই ছুটছি। যে সাগরের পানি অদ্ভুত নীল, চারপাশজুড়ে শুধুই মুগ্ধতা আর মুগ্ধতা। মাঝে মধ্যে ডলফিন ছুটে চলছে, মাথা উঁচু করে জানান দিচ্ছে নীল জলে তার অবস্থান। ডলফিনের  ডোবা-ভাসা দেখতে দেখতেই ছুটছিল বোট। আমাদের বোটে ১৫ জন যাত্রী। সবারই চোখেমুখে উচ্ছ্বাস, আতঙ্ক, শিহরণজাগানিয়া অনুভূতি। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দূরে টুকরো টুকরো পাথুরে দ্বীপ দেখলে অন্যরকম এক উন্মাদনা জাগাবে হৃদয়ে। প্রায় খণ্টাখানেক যাত্রার পর মায়া বে-তে পৌঁছে আমাদের বোট। সেখানে গিয়ে তো চক্ষু চড়কগাছ! এত দেয়ালে টানানো সেই ক্যালেন্ডারের বাস্তব অস্তিত্ব; যা এতকাল কেবল ছবিতে আর কল্পনাতেই দেখে এসেছি।

সেই দ্বীপ আমরা স্বচক্ষে দেখছি! গাইড জানালেন, আমরা এখানে ঘণ্টাখানেক অবস্থান করার সুযোগ পাব। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। এত সুন্দর জায়গায় মাত্র এক ঘণ্টা! বুঝলাম ভুল করে ফেলেছি। এখানে এক দিনের জন্য হলেও থাকার প্রস্তুতি নিয়ে আসা দরকার ছিল! বোট থেকে হুড়মুড় করে নেমেই সবাই দ্রুত ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। হাতে সময় কম। মায়া বের মূল গেট পেরিয়ে ৫ মিনিট হেঁটে ভেতরে প্রবেশ করতেই মাথা ঘুরে গেল। ধবধবে সাদা বালুর নয়নজুড়ানো এক সৈকত, স্বচ্ছ অ্যাকুয়ারিয়ামের মতো জল। এর সৌন্দর্য বর্ণনা করার জন্য কল্পনা আর লেখনী শক্তি আমার নেই। শুধু বলব, চোখে না দেখলে এটা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।

বলে রাখি, এটা  সংরক্ষিত অঞ্চল। এখানে জলে নামতে বা ঘুরতে হলে বাড়তি পয়সা গুনতে হয়। আমরা জলে নামিনি, বাড়তি পয়সাও গুনিনি। তবে নেমেছিলাম নো খাই দ্বীপের নীল জলে। সেটা আরেক লেখায় বলব …।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com