দুই দিন ধরে চলবে এই গণভোট৷ ভোট শুরু হচ্ছে রোববার৷ তবে, গণভোট সফল হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ভোটার ভোট কেন্দ্রে আসবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে৷
শ্রমিক ইউনিয়ন সিজিআইএল জানিয়েছে, গণভোট আয়োজনের জন্য ৪৫ লাখ ইটালীয় নাগরিকের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে সংস্থাটি৷ যা গণভোট আয়োজনের প্রয়োজনীয় সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি৷ গণভোটের ব্যালট পেপারে পাঁচটি বিষয়ে প্রশ্ন থাকবে৷ চারটি থাকবে শ্রমবাজার নিয়ে এবং একটি থাকবে নাগরিকত্ব নিয়ে৷
ইটালির আইন অনুযায়ী, গণভোট তখনই সফল হবে, যদি দেশটির ৫০ ভাগের বেশি ভোটার ভোটে অংশ নেয়৷ জনমত জরিপ করা সংস্থাগুলো বলছে, এত বেশি সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে আসবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে৷
ইতিমধ্যে, মেলোনি এবং তার সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীরা এই ভোটে অংশ নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন৷ কারণ, তার সরকারই নাগরিকত্ব আইন এবং বিদেশি কর্মী নিয়োগের শর্ত কঠোর করেছে৷
গণভোট সফল করতে শ্রমিক ইউনিয়ন সিজিআইএল এর প্রধান মাউরিৎসিও লান্দিনির সঙ্গে প্রচারে অংশ নিচ্ছেন প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডি) নেত্রী এলি শ্লাইন৷ তিনি বলেছেন, ‘‘মেলোনি ভোটে অংশ নিতে ভয় পাচ্ছেন৷ কারণ, তিনি বুঝতে পেরেছেন অনেক ইটালীয়, এমনকি যারা তাকে ভোট দিয়েছেন, তারাও ভোট দিতে আসবেন৷’’
গত মাসে ডেমোপলিস ইনস্টিটিউটের এক জরিপে বলা হয়েছে, ইটালির প্রায় পাঁচ কোটি ভোটারের মধ্যে ভোটের হার ৩১ থেকে ৩৯ শতাংশের মধ্যে থাকতে পারে৷ যা প্রয়োজনীয় সীমার অনেক নিচে৷
জরিপ সংস্থা ইউট্রেন্ড পোলস্টার-এর লরেঞ্জো প্রেগলিয়াস্কো বলেন, ‘‘কোরাম নিশ্চিত করা কঠিন হবে৷ বিরোধী দলের লক্ষ্য হলো গণভোটে নিজেদের শক্তি তুলে ধরা৷ তাই তারা ২০২২ সালে মধ্য-ডানপন্থিদের সমর্থন দেয়া এক কোটি ২৩ লাখের বেশি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে আনার চেষ্টা করছে৷’’
২০২২ সালের শেষের দিকে অভিবাসনবিরোধী মনোভাবকে উসকে দিয়ে ক্ষমতায় আসে জর্জা মেলোনি৷ ফলে নাগরিকত্ব সংস্কারের বিষয়টি ইটালির জনগণ কীভাবে দেখছেন, তা নিয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্তে আসা কঠিন৷
ব্যালট পেপারে প্রশ্ন করা হবে, ইটালির নাগরিকত্ব অর্জনে দেশটিতে বসবাসের মেয়াদ ১০ বছর থেকে কমিয়ে পাঁচ বছর করার পক্ষে আছেন কিনা৷ আয়োজকেরা বলছেন, নাগরিকত্ব অর্জনে বসবাসের মেয়াদ সরকার ১০ বছরে উন্নীত করার কারণে অন্তত ২৫ লাখ বিদেশি নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন৷
ইটালির জন্মহার তীব্রভাবে কমেছে৷ অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশটির অর্থনীতির গতিও কমেছে৷ এই ভঙ্গুর অর্থনীতিকে সচল করতে হলে আরো বেশিসংখ্যক বিদেশি নাগরিকদের দেশটির প্রতি আকৃষ্ট করতে হবে৷ বিদেশি কর্মীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে, যাতে তারা বিশ্বাস করেন, ইটালিতে তাদের নানা সুযোগ সুবিধা রয়েছে৷
রোমের একটি ভবন নির্মাণ কোম্পানিতে কর্মরত ২৭ বছর বয়সি মোহাম্মদ কামারা বলেন, ‘‘আপনি যদি শুধু সময়সীমার দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন ১০ বছরের তুলনায় পাঁচ বছরের বিধান আমাদের অভিবাসীদের জন্য অনেক সুবিধাজনক৷’’
রাজনৈতিক ঝুঁকি পর্যবেক্ষণ সংস্থা পলিসি সোনার-এর ফ্রান্সেস্কো গালিয়েত্তি বলেন, সরকার অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসাবে এসব নিয়ম কঠোর করছে৷ কিন্তু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারকে চাপ দিচ্ছে, যাতে বিদেশি কর্মীদের জন্য ইটালিকে সহজ করা হয়৷ কারণ, বার্ধক্যজনিত কারণে দেশটির শ্রমবাজারে শূন্যতা তৈরি হয়েছে৷
তিনি আরো বলেন, সরকার যখন ‘‘সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং পেনশন ব্যবস্থাপনার সম্ভাব্য সমস্যার কথা বলছে, তখন উৎপাদনমুখী অর্থনীতি সচল রাখার জন্য অভিবাসী কর্মী ছাড়া কোনো বিকল্প নেই৷’’
গণভোটে শ্রমবাজার সম্পর্কিত বিষয়গুলোর মধ্যে থাকবে বরখাস্ত হওয়া কর্মী এবং ছোট প্রতিষ্ঠান থেকে ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়ানো৷ এছাড়া, গণভোটের মধ্য দিয়ে এক দশক আগের একটি আইন বাতিল করার কথাও ভাবা হচ্ছে৷
ইটালির বর্তমান জোট সরকারের শরিক দল ফোরজা ইটালিয়ার নেতা আন্তোনিও তাজানি এবং লিগ দলের নেতা মাত্তেও সালভিনি বলেছেন, তারা রোববার ভোট দেবেন না৷ অন্যদিকে ব্রাদার্স অব ইটালির প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী মেলোনি ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হবেন, কিন্তু ভোট দেবেন না৷
ইউট্রেন্ড পোলস্টার-এর প্রেগলিয়াস্কো বলেছেন, ‘‘এর ফলে তিনি তার প্রাতিষ্ঠানিক কর্তব্যকে সম্মান করবেন, কিন্তু কোরাম পূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখতে চান না৷’’