শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৪ অপরাহ্ন

ধর্ষণের ভিডিও করে ফাঁদ, স্কুলছাত্রীর আত্মহনন

  • আপডেট সময় শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

প্রাথমিকভাবে পরিবারের সঙ্গে অভিমান করে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রচার করা হলেও মোংলা শহরের চাঞ্চল্যকর ৮ম শ্রেণির ছাত্রীর আত্মহনন ঘটনা ভিন্ন মোড় নিতে শুরু করেছে। এখন জানা যাচ্ছে, ওই ছাত্রীর সঙ্গে বিশেষ সখ্য তৈরি করে সুন্দরবনের করমজল পর্যটন স্পষ্টে নিয়ে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে ধর্ষণসহ তা ভিডিও করে রাখা হয়। পরে ভিডিওর ভয় দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করে হুমকি দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়। এতে কিশোরীটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে লোকলজ্জা ও বখাটেদের হাত থেকে রক্ষা পেতে একপর্যায়ে আত্মহননে বাধ্য হয়।

এ ঘটনার প্রায় ৪ মাস পর ওই ছাত্রীর বাবা এক নারীসহ ৩ জনকে অভিযুক্ত করে বাগেরহাট আদালতে ৭ এপ্রিল ধর্ষণ ও আত্মহননে প্ররোচনার দায়ে এজাহার দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে ২১ এপ্রিল মোংলা থানা পুলিশ এজাহারটিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধর্ষণসহ আত্মহত্যার প্ররোচনা সংক্রান্ত ধারায় এফআইআর (মামলা) রেকর্ড করেন।

এদিকে পুলিশ এ মামলার প্রধান আসামি মো. আসহাবুল ইয়ামিনকে কলনী এলাকা থেকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করে। তার বাবা মো. সোহেল রানা মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি নৌযানে মাস্টার পদে কর্মরত রয়েছেন।

মোংলা শহরের বাসিন্দা ওই ছাত্রী পড়ালেখার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলায় বেশ পারদর্শী ছিল। অত্যন্ত চটপটে ওই ছাত্রীর ক্রিকেট খেলার সুবাদে মোংলার বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত ছিল। বিভিন্ন জায়গায় খেলার সূত্র ধরে মো. আসহাবুল ইয়ামিন ও তার কয়েক সহযোগীর সঙ্গে পরিচয়ের একপর্যায়ে বিশেষ সখ্য গড়ে ওঠে। আর এ সখ্যই কাল হলো ওই ছাত্রীর জীবনে।

সখ্য গড়ে ওঠার কিছুদিন পর আসহাবুল ও তার সহযোগীরা ওই ছাত্রীকে ফুসলিয়ে ট্রলারে করে সুন্দরবনের করমজল পিকনিক স্পষ্টে বেড়াতে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে আসহাবুল ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে সে দৃশ্য এবং ওই ছাত্রীর নগ্ন ছবি ভিডিও করে রাখা হয়। এরপরই শুরু হয় ওই ছাত্রীর ওপর আসহাবুল ও তার সহযোগীদের নানা মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচার।

ধর্ষণের ভিডিও ফেসবুক ও অভিভাবকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে। এভাবে আসহাবুল তার সহযোগীদের সহযোগিতায় ওই ছাত্রীকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ধর্ষণসহ নানা অত্যাচার করে। এভাবে দিনকে দিন অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যেতে থাকে।

একপর্যায়ে ১৪ ডিসেম্বর আসহাবুল ছাত্রীকে কাইনমারী এলাকায় একটি কপিশপে ডেকে নেয়। সেখানে কথাবার্তার একপর্যায়ে ওই ছাত্রী বিয়ের প্রস্তাব দিলে আসহাবুল তাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে ওই ছাত্রী মানসিকভাবে ভেযে পড়ে পরের দিন রাতে ঘরের আড়ার সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।

এদিকে এ ঘটনায় প্রথমে মোংলা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করা হয়। পরে বাগেরহাট আদালতে ৭ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণসহ আত্মহত্যার প্ররোচনা সংক্রান্ত ধারায় এজাহার দাখিল করা হয়। পরে আদালত এজাহারটিকে মোংলা থানার ওসিকে এফআইআর হিসাবে রেকর্ড করার জন্য আদেশ দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মোংলা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মানিক চন্দ্র গাইন বলেন, ইতোমধ্যে মামলার তদন্তকাজ শুরু হয়েছে। ঘটনার অন্যতম হোতা আসহাবুল ইয়ামীনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আসহাবুল ঘটনার সত্যতা ও তার নিজের সম্পৃক্তার কথা স্বীকার করেছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশি তৎপরতা চলছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com