প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পর্যটক যাচ্ছেন থাইল্যান্ডে। রয়েল থাই এম্বাসি বাংলাদেশ থেকে ৫ প্রকার ভিসা সার্ভিস দিচ্ছে। এগুল হলঃ
এই আর্টিকেলের মধ্যে থাইল্যান্ডের টুরিস্ট ভিসা করার পুরো প্রক্রিয়াটি আলোচনা করার চেষ্টা করব। আপনি যদি এই প্রক্রিয়া পুরোপুরি ফলো করেন তাহলে আপনার ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে সর্বোচ্চ। কারন রয়েল থাই এম্বাসি থাইল্যান্ডের টুরিস্ট ভিসার জন্য যে সব কাগজপত্র এবং নিয়ম কানুন মেনে এপ্লিকেশন ফাইল তৈরি করতে বলে আমরা এম্বাসির সেই সকল নিয়ম কানুন ফলো করে এই প্রক্রিয়াটি সাজিয়েছি।
আপনি চাইলে ৩ টি ধাপে খুব সহজেই এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারেন
ধাপগুলো হলঃ
১। এপ্লিকেশন ফর্ম পুরন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করা
২। ভিসা ফি জমা দিয়ে রিসিপ্ট সংগ্রহ করা
৩। অনলাইনে পাসপোর্ট স্ট্যাটাস দেখে পাসপোর্ট সংগ্রহ করা।
এই ধাপগুলো ফলো করলে আপনি নিজে নিজেই খুব সহজে থাইল্যান্ডের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এখন তাহলে শুরু করা যাক থাইল্যান্ড টুরিস্ট ভিসা করার জন্য বিস্তারিত আলোচনা। থাইল্যান্ড টুরিস্ট ভিসা টাইপ কে TR Type ভিসা বলে থেকে। থাইল্যান্ড এর জন্য আপনি সিঙ্গেল এন্ট্রি (মেয়াদ ৩ মাস) অথবা মাল্টিপল এন্ট্রি (মেয়াদ ৬ মাস) ভিসার জন্য আবেদন করাতে পারেন। তবে যে ভিসাই নেন না কেন আপনি থাইল্যান্ডে একটানা সর্বচ্চ ৬০ দিনের বেশি থাকতে পারবেন না। থাইল্যান্ড ভিসা আপনি ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেটে থাই এম্বাসি থেকে করাতে পারেন। ঢাকায় জমা দিলে ভিসা পেতে সময় লাগবে সরবনিন্ম ৪ কর্মদিবস, চট্টগ্রামে ৬ কর্মদিবস এবং সিলেটে সরবনিন্ম ৭ কর্মদিবস লাগতে পারে। পাসপোর্ট জমা দেয়ার পর আপনি কবে পাসপোর্ট পাবেন এটা আপনি অনলাইনে চেক করে তবেই আনতে যাবেন, চেক না করে অযথা হরানি হবেন না। পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করতে এখানে দেখুন । আপনি চাইলে লিঙ্কটি সেভ করে রাখতে পারেন।
আপনাকে নির্ভুল তথ্য দিয়ে ভিসা এপ্লিকেশন ফর্মটি পুরন করতে হবে এবং ফর্মে নির্ধারিত স্থানে পাসপোর্ট অনুযায়ী সাক্ষর করতে হবে।
এখান থেকে থাইল্যান্ড ভিসা এপ্লিকেশন ফর্মটি ডাউনলোড করুন এবং ফর্মটি পূরণ করার জন্য পিডিএফ ফাইল ইডিটরের সাহায্য নিতে এই লিঙ্কটি দেখুন।
নূন্যতম ৬ মাস মেয়েদ সম্পন্ন একটি পাসপোর্ট থাকতে হবে।
অনেক সময় দেখা যায় আপনি যেদিন ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন ঠিক সেদিন থেকে পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস থাকে ফলে ভিসা পেতে পেতে আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস থেকে কমে যায়, এমন হলে অনেক সময় এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন সমস্যা করে। সে ক্ষেত্রে আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস থেকে কিছুদিন বেশি থাকলে খুবই ভালো হয় যেন ভিসা পাওয়ার পরও পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস থাকে।
পাসপোর্টে অবশ্যই অন্তত দুটি পাতা ফাঁকা থাকতে হবে যাতে করে ভিসা স্টিকার এবং ইমিগ্রেশন ষ্ট্যাম্প ওই পাতাতে দেয়া যায়। সেই সাথে সকল পুরাতন পাসপোর্টও জমা দিতে হবে। ছবি
২ কপি ল্যাব প্রিন্ট ছবি (সাইজ হবে ৫.০ সে.মি X ৪.৫ সে.মি) জমা দিতে হবে ।
ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড হবে সাদা। অন্য ব্যাকগ্রাউন্ড, ছবির সঠিক মাপ এবং ৩ মাসের আগে তোলা ছবি গ্রহনযোগ্য হবে না। আর সতর্কতা অবলম্বনের জন্য ছবির পিছনে আপনার সাক্ষর করে দিতে পারেন।
প্রুফ অফ প্রফেশন (পেশার প্রমান পত্র)
থাইল্যান্ড টুরিস্ট ভিসা পেতে হলে আপনার প্রফেশনের একটি প্রমানপত্র দিতে হবে। সেক্ষেত্রে
আপনি যদি চাকরিজীবী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার এন ও সি (নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট), বিগত ৩ (তিন) মাসের সেলারি স্লিপ ও ভিজিটিং কার্ড দিতে হবে।
সেলারি স্লিপ এবং এন ও সি (নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট) অবশ্যই অফিসের প্যাডে অফিস কর্তৃপক্ষের সত্যায়িত করা থাকতে হবে এবং আপনার নাম ও পাসপোর্ট নাম্বার এন ও সি তে উল্লেখ করা থাকতে হবে। নো অব্জেকশন সার্টিফিকেটের স্যাম্পল কপি এখান থেকে দেখে নিতে পারবেন।
আপনি যদি ব্যবসায়িক হয়ে থাকেন তাহলে আপনার নাম স্পষ্ট অক্ষরে আছে এমন ট্রেড লাইসেন্সের কপি এবং ভিজিটিং কার্ড দিতে হবে।
প্রপ্রাইটরশিপ বিজনেস হলে ট্রেড লাইসেন্স, লিমিটেড কম্পানি হলে ট্রেড লাইসেন্সের সাথে মেমরেন্ডাম কপি জমা দিতে হবে যেখানে আপনার নাম স্পষ্ট করে লেখা আছে।
আপনি যদি ডাক্তার হয়ে থাকেন তাহলে বি এম ডি সি (বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) সার্টিফিকেট অথবা আপনার হাসপাতালের প্যাডে নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট এবং ভিজিটিং কার্ড দিতে হবে।
আপনি যদি আইনজীবী হয়ে থাকেন তাহলে বার কাউন্সিল সার্টিফিকেট অথবা আপনার চেম্বারের প্যাডে নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট (আপনার নাম ও পাসপোর্ট নাম্বার সহ) এবং ভিজিটিং কার্ড দিতে হবে।
আপনি যদি স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন তাহলে আপনার স্কুল / কলেজ / ইউনিভার্সিটির প্যাডে নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট (আপনার নাম ও পাসপোর্ট নাম্বার সহ) অথবা বৈধ আই ডি কার্ডের কপি দিতে হবে।
বি দ্রঃ উপরের কোন ডকুমেন্ট বাংলায় দেয়া যাবে না যদি বাংলায় থাকে তাহলে ইংরেজিতে অনুবাদ করে নোটারি করে জমা দিতে হবে।
ভ্রমণের সক্ষমতা প্রমানের জন্য আপনাকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ব্যাংক সল্ভেন্সি সার্টিফিকেটের মূল কপি জমা দিতে হবে।
ব্যাংক স্টেটমেন্টটি হতে হবে বিগত ৬ মাসের লেনদেনের উপর ভিত্তি করে। এক্ষেত্রে আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট পারসনাল অথবা স্যালারি একাউন্ট ও হতে পারে।
আপনি একা ট্রাভেল করলে আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্টে অবশ্যই ন্যূনতম ২০,০০০ (বিশ হাজার) টাকা অবশিষ্ট থাকতে হবে। আর যদি আপনি ফেমিলি নিয়ে ট্রাভেল করেন তাহলে প্রতিজনের জন্য ২০,০০০ (বিশ হাজার) টাকা করে স্টেটমেন্টে অবশিষ্ট থাকতে হবে।
থাইল্যান্ডে আপনি কোথায় কোন হোটেলে থাকবেন তার একটি বুকিং কপি আপনার ভিসা আবেদনের সাথে দিতে হবে। শুধু বুকিং কপি হলেই হবে কনফার্ম করার প্রয়োজন নেই। যদি আপনার ভিসা হয়ে যায় কেবল তখনি আপনি বুকিং কনফার্ম করতে পারেন। হোটেল বুকিং এর জন্য ট্র্যাভেল এজেন্টের সহযোগিতাও নিতে পারেন।
ঢাকা থাইল্যান্ড ঢাকা রিটার্ন এয়ার টিকেটের বুকিং কপি আপনার ভিসা আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে। ভিসা হয়ে যাবার পর টিকিটটি কনফার্ম করে ফেলতে পারেন। এক্ষেত্রেও আপনি ট্র্যাভেল এজেন্টের সহযোগিতা নিতে পারেন।
আপনার মূল ন্যাশনাল আই ডি কার্ডের ফটোকপি আবেদনপত্রের সাথে জমা দিতে হবে। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে আপনার পাসপোর্টে দেয়া তথ্যের সাথে আই ডি কার্ডে দেয়া তথ্যের হুবুহু মিল থাকে।
এই ছিল থাইল্যান্ডে টুরিস্ট হিসেবে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের লিস্ট, এখন আপনি যদি ফ্যামিলি নিয়ে যেতে চান তাহলে যে সব কাগজপত্র আপনার ফ্যামিলি মেম্বারদের জন্য লাগবে তা হলঃ
১. সবার পাসপোর্ট এবং ২ কপি ছবি (সাইজ ৩.৫ সে.মি ৪.৫ সে.মি)
৩. স্ত্রীর জন্য মেরিজ সার্টিফিকেট (যদি পাসপোর্টে আপনার নাম উল্লেখ না থাকে)
৪. সন্তানের জন্য জন্মসনদ অথবা এন এই ডি কার্ডের ফটোকপি।
বি দ্রঃ কোন ডকুমেন্ট বাংলায় থাকলে অবশ্যই ইংরেজিতে ট্রান্সলেট করে নোটারি করে জমা দিতে হবে।
ভিসা ফি | ভিসার মেয়াদ | কতদিন থাকা যাবে |
৩০০০ টাকা সিঙ্গেল এন্ট্রি | ৩ মাস | ৬০ দিন |
১৫০০০ টাকা মাল্টিপল এন্ট্রি | ৬ মাস | ৬০ দিন |
বি দ্রঃ ভিসা প্রসেসের জন্য প্রদত্ত যেকোনো ডকুমেন্টস ভূয়া অথবা জাল প্রমাণিত হলে, আপনার ভিসার আবেদনটি নিশ্চিতভাবে প্রত্যাখ্যান হবে, এমনকি আপনি উক্ত এম্বাসির কালো তালিকাভুক্ত হতে পারেন। এবং ইহা আইনতঃ দন্ডনীয় অপরাধ। সুতরাং, এধরনের অভিপ্রায় থেকে বিরত থাকুন।
উপরের সকল কাগজপত্র সংগ্রহ করার সাথে সাথে আপনি ১ম ধাপ সম্পন্ন করে ফেললেন।
১ম ধাপ সম্পন্ন করা হলে এখন আপনি পূরণকৃত ভিসা ফর্ম এবং কাগজপত্র সব সঙ্গে নিয়ে সরাসরি চলে যাবেন ভি এফ এস গ্লোবাল সেন্টারে সেখানে টাকা এবং কাগজপত্র জমা দিয়ে রিসিপ্ট রিসিপ্ট সংগ্রহ করবেন।
এখানে বলে রাখা ভালো যে, যখন আপনি ভিসা ফাইল জমা দিতে যাবেন সাথে ফাইল এবং মোবাইল ছাড়া সঙ্গে আর কিছু নিয়ে যাবেন না। ভি এফ এস সতর্কতা নির্দেশনাটি এখানে দেখে নিতে পারেন
থাইল্যান্ড এম্বাসি আপনার দেয়া কাগজপত্র যাচাই বাছাই করবে এবং আপনার ফোন নাম্বার যাচাইয়ের জন্য আপনাকে ফোন দিবে। এই সময়ে সতর্ক থাকুন যেন ফোন ধরতে মিস না হয়ে যায়। আপনাকে দেয়া রিসিপ্টে আপনার পাসপোর্ট সংগ্রহের তারিখ দেয়া থাকবে। নির্ধারিত তারিখে অনলাইনে আপনার পাসপোর্ট স্ট্যাটাস যাচাই করে পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন।
কোন কারনে ভিসা না হলে ভিসা ফি ফেরতযোগ্য নয়। এজন্য ট্র্যাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা আবেদন করতে চাইলে দেখে শুনে বুঝে আপনার ট্রাভেল এজেন্সি পছন্দ করবেন।
ভিসা এপ্লিকেশন কোথায় জমা দিবেন এটি দেখে নিন।