উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্ম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দাবদাহে ঘেমে একাকার ইউরোপের মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত উষ্ণ হতে থাকা এই মহাদেশের তাপমাত্রা ক্রমেই রেকর্ড ছাড়িয়ে ‘লাল সংকেতে’ পৌঁছচ্ছে।
ইতালির রাজধানী রোমে তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এতে হাজার হাজার পর্যটক ও ক্যাথলিক তীর্থযাত্রীদের একটু স্বস্তির খোঁজে নগরীর আড়াই হাজারের বেশি উন্মুক্ত পানির ঝর্ণার কাছে ভিড় জমাতে দেখা গেছে।
ফ্রান্সের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মার্সেইতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁই ছুঁই করায় কর্তৃপক্ষ নগরবাসীদের জন্য পাবলিক সুইমিং পুল বিনা মূল্যে খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
এ ছাড়া পর্তুগালের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকাজুড়ে রবিবার চরম দাবদাহ ও বনাঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কায় উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাজধানী লিসবনে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে।
এদিকে ধনকুবের জেফ বেজোসের শুক্রবারের ভেনিসে অনুষ্ঠিত বিয়েতে অংশগ্রহণকারী অতিথি ও বিক্ষোভকারীরাও একইভাবে প্রচণ্ড রোদের তাপে নাজেহাল হয়েছে।
ভেনিসে ইতালির এক শিক্ষার্থী স্রিয়ানে মিনা বলেন, ‘গরম নিয়ে আমি বেশি ভাবি না। তবে প্রচুর পানি পান করি এবং কখনো রোদে স্থির হয়ে দাঁড়াই না। কারণ এতে সানস্ট্রোক হয়।’
স্পেনে কয়েক বছর ধরে প্রাণঘাতী দাবানলে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সেখানে রোববার থেকে অধিকাংশ এলাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে পৌঁছতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহার বিশ্বব্যাপী উষ্ণতা বাড়াচ্ছে, যার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর। এর সরাসরি ফল ইউরোপে দিন দিন বেড়ে চলা প্রচণ্ড গ্রীষ্মকালীন দাবদাহ।
নাপলস ও সিসিলির পালের্মোতে তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিসিলি ও ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় লিগুরিয়া অঞ্চলে দিনের সবচেয়ে গরম সময়ে বাইরে কাজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
দেশটির বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন এই নিষেধাজ্ঞা সমগ্র দেশজুড়ে কার্যকরের দাবিতে প্রচার চালাচ্ছে।
ইউরোপে দিন দিন উষ্ণতা রেকর্ড পরিমাণে বাড়ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপারনিকাস জলবায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানায়, ২০২৫ সালের মার্চ ছিল ইউরোপের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘূর্ণিঝড়, খরা, বন্যা, দাবদাহসহ নানা চরম আবহাওয়া পরিস্থিতি আরো তীব্র হয়ে উঠছে বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন। কারো কারো মতে, ২০২৪ সাল ছিল ইউরোপের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বছর। এর প্রভাবে বৈশ্বিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।