তাজমহলকে বলা হয় ‘ভালবাসা ও অনুরাগ’ এর প্রতীক। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজের প্রতি অকৃত্তিম ভালবাসার নিদর্শন স্বরূপ নির্মাণ করেন তাজমহল। ২০,০০০ দক্ষ কারিগর ১৬৩১ খ্রিঃ হতে ১৬৪৮ খ্রিঃ পর্যন্ত ১৭ বছরের দীর্ঘ পরিশ্রমের পর নির্মাণ করেন তাজমহল। পুরো তাজমহলকে সাজানো হয়েছে দুষ্প্রাপ্য এবং উজ্জ্বল পাথর ও রত্ন দিয়ে। এসব পাথরের বেশীর ভাগই সংগৃহীত হয়েছিলো ভারত, মধ্য আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং দূরপ্রাচ্য থেকে। যমুনা নদীর পাড়ে নীল আকাশের পটভূমিতে তাজমহল এক অকৃত্তিম প্রেমের নিদর্শণ।
ধারণা করা হয়েছিলো ৭ জুলাইয়ের নির্বাচিতব্য সপ্তমাশ্চার্যগুলোর মধ্যে হয়তো তাজমহল স্থান পাবেনা, কিন্তু সারাবিশ্বের মানুষের ভালবাসার এই প্রতীক সকল বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত হয় দ্বিতীয় বারের মত। তাজমহল বেঁচে থাকুক আমাদের ভালবাসায় এবং ঐতিহ্যে।
তাজ মহল হচ্ছে সম্রাট শাহজাহান কতৃক স্ত্রীর নামে নির্মিত একটি স্মৃতিসৌধ। সম্রাট জাহাঙ্গীর এর তৃতীয় পূত্র সম্রাট শাহজাহান। পিতামহ আকবর এবং সম্রাট জাহাঙ্গীর এর নয়নের মনি ছিলেন সম্রাট শাহজাহান। যুদ্ধবিদ্যাসহ অনেক বিষয়ে ছিল তার অদম্য আগ্রহ যেমন স্থাপত্য ও কারু শিল্প। মাত্র ২০ বছর বয়সে তার বিয়ে হয় আর্জুমান বানুর সাথে। বিয়ের পর তার নাম হয় মমতাজ মহল।
দুজনের বন্ধন এত গভীর ছিল যে, শাহজাহান যেখানে যেতেন মমতাজও তার সঙ্গী হতেন। সন্তান প্রসবের সময় আকশ্মিক তার মৃতু হয়। তার মৃতুতে সম্রাট এতটাই ভেঙ্গে পড়ে ছিলেন যে, দীর্ঘদিন রাজ কাজে তিনি মন দিতে পারেননি।
মমতাজ এর স্মৃতি রক্ষার্থে সম্রাট শাহাজাহান আগ্রাতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মানের সিদ্ধান্ত নেন। তাজমহল নির্মিত হয় যমুনা নদীর তীরে। সম্রাট শাহাজাহান এর পরিকল্পনা এবং নির্দেশনায় স্থাপত্যটি নির্মিত হয়। তাজমহল এর স্থপতি ছিলেন ওস্তাদ আহমেদ লাহোরী। তাজমহল এর অলংকরন দেখলে সত্যিই অবাক হতে হয়। এত সূক্ষ কারুকাজ পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায়নি। তাইতো সারা বিশ্বে সপ্তম আশ্চার্যের মধ্যে তাজমহল অন্যতম স্থান দখল করেছে।
নানা রকম মূল্যবান মনি মুক্তা সজ্জিত ছিল এই তাজমহল কিন্তু ব্রিটিশ শাসনামলে তাজমহল এর অনেক মনিমুক্তা চুরি হয়ে যায়। সারা বিশ্ব থেকে এই অমূল্য মনিমুক্তা সংগ্রহ করা হয়েছিল। সম্রাট শাহজাহান ও মমতাজ এর প্রেম কাহিনী সারা বিশ্বের প্রেম কাহিনীর মধ্যে অন্যতম। তার প্রমান মমতাজ এর স্মৃতি ধরে রাখতে শাহাজাহান এই বিশাল স্মৃতি সৌধটি নির্মান করেছিলেন। দীর্ঘ ১৯ বছরের বিবাহিত জীবনে মমতাজ এর মোট ১৪ টি সন্তান হয়। ৩৯ বছর বয়সে ১৪ তম সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় তিনি মারা যান। স্ত্রীর ভালবাসার স্মৃতি হিসাবে তিনি তাজমহল তৈরি করেন।