জানবো ডেনমার্ক নামের একটি ছোট দেশের কথা। ছোট বললাম এই কারনে যে কেবলমাত্র ডেনমার্কের মোট আয়তন 42 হাজার 931 বর্গকিলোমিটার এবং এর সাথে গ্রীনল্যান্ড এবং ফেরো আইল্যান্ড যুক্ত করলে তখন ডেনমার্কের মোট আয়তন হয় 22 লক্ষ 10 হাজার 579 বর্গকিলোমিটার। আর দেশের বেশিরভাগটাই সমতলভূমি দিয়ে ভরা। যেখানে দেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে মোলেহোজের উচ্চতা মাত্র 170.86 মিটার। ডেনমার্কের বেশিরভাগ অঞ্চল চাষাবাদের ব্যবহারের উপযোগী। এই দেশের মোট জনসংখ্যা 2018 অনুযায়ী 57 লক্ষ 85 হাজার 864 জন। তো চলুন ডেনমার্ক সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য।
ডেনমার্ক কে আধিকারিক ভাবে বলা হয় কিংডম অফ ডেনমার্ক বলা হয়। ডেনমার্কের রাজধানীর নাম কোপেনহেগান। যা ডেনমার্কের সবথেকে জনবহুল শহর। ডেনমার্কের জাতীয় পতাকার নাম ডান্নেব্রগ যা পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন এবং একাধারে ব্যবহার করা পতাকা গুলির মধ্যে থাকায় বিশ্বরেকর্ড গড়েছে।
ডেনমার্কের আধিকারিক ভাষা ডেনিস এবং কিছু আঞ্চলিক ভাষা ফেরোইস, গ্রীন ল্যান্ডিক এবং জার্মান ভাষারও প্রচলন আছে এবং দেশের অধিকাংশ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী। তবে ডেনমার্কে খ্রিস্টান ধর্মের পর সব থেকে বেশি সংখ্যক মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস।
ডেনমার্কে ডিভোর্সের পরিমাণটা অনেক বেশি এবং বহু মহিলা ও পুরুষ বিয়ে না করেই একসাথে থাকে। আর এই ধরনের ব্যবস্থা কে “Peparless Marriage” বলে।
ডেনমার্কের জাতীয় মুদ্রার নাম ডেনিস ক্রোন। আর 1 ডেনিস ক্রোন ভারতীয় 10.5 টাকার সমান। সামাজিক মেলামেশা অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বেশি এবং আয়ের দিক দিয়ে একে অপরের মধ্যে পারস্পরিক ব্যবধান কম থাকায় ডেনমার্কের করাপশনের মাত্রা খুবই কম।
মানব উন্নয়ন সূচক হিসেবে পঞ্চম স্থানে থাকা ডেনমার্ক এখন একটি সর্বোচ্চ মানের জীবনধারণের জন্য পরিচিত দেশগুলির মধ্যে একটি এবং সর্বোচ্চ প্রতি ব্যক্তি আয় অনুযায়ী যেসব দেশ গুলির তালিকা তৈরি হয় তাদের মধ্যে প্রথম দিকে ডেনমার্কের নামটা থাকে। তাই ডেনমার্ক একটি উন্নত দেশ। যারা আয়ের মূল উৎস আয়রন, স্টিল, ফুড প্রসেসিং জাহাজ নির্মাণ শিল্প এবং কনস্ট্রাকশন। তবে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাতে একটা অত্যাধুনিক দেশ হওয়ায় ডেনমার্কের শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে বায়ুকে কাজে লাগানো হয়। তাই পৃথিবীর সবথেকে বড় উইন্ড টারবাইন গুলি এই ডেনমার্কে আছে।
এই উইন্ড টারবাইন গুলি ঘোরানোর ফলে উৎপন্ন শক্তি বর্তমানে অন্যান্য দেশেও রপ্তানি করা হয়। ডেনমার্কে হাওয়ার গতিবেগ বেশি থাকায় এই বায়ু শক্তি উৎপাদন বেশি হয়। ইউরোপীয় দেশ গুলির মধ্যে ডেনমার্কে বিপুল পরিমাণে প্রাকৃতিক গ্যাসের ভান্ডার পাওয়া গেছে। বিশেষত দক্ষিণ সাগরের যে অঞ্চল টি ডেনমার্কের অংশ সেখানেই গ্যাস এবং তেলের পরিমাণ টা বেশি।
এই বিপুল খনিজ ভান্ডার থাকায় ডেনমার্ক ক্রুড ওয়েল অর্থাৎ অপরিসিত তেল রপ্তানিতে 32 তম স্থান অধিকার করে। ডেনমার্ক একটি ইউনিটারি স্টেট যা গঠিত হয়েছে ডেনমার্ক এবং তার সাথে দুটি স্ব-শাসিত জায়গা গ্রীনল্যান্ড এবং ফেরো আইল্যান্ড নিয়ে। এই গ্রিন ল্যান্ড ফেরো আইল্যান্ড ডেনমার্কের অন্তর্ভুক্ত হলো এই দুই জায়গায় তাদের নিজস্ব সরকার এবং পার্লামেন্ট রয়েছে। এই দুই দ্বীপ গুলির মধ্যে গ্রীনল্যান্ড কে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দ্বীপ হিসেবে মনে করা হয়। তবে অনেকের মতে অস্ট্রেলিয়া এবং আন্টার্টিকার কথাটা মনে আসতে পারে। কিন্তু এটুকু জেনে রাখা দরকার এই অস্ট্রেলিয়া এবং আন্টার্টিকার দুটি আলাদা মহাদেশ।
ডেনমার্কে শিক্ষিতের হার 99% এবং বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় এবং মহা বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গেলে কোনোরকম টিউশন ফি দিতে হয় না। এমনকি শিক্ষাক্ষেত্রে অনুদান পাওয়ার জন্য জমা দেওয়ার আবেদন পত্র গৃহীত হলে 18 বছর বা তার উপরে ছাত্রছাত্রীরা আর্থিক সাহায্য পর্যন্ত পেয়ে থাকে। এই ইউনিভার্সিটি গুলোতে বিদেশী ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশোনার ব্যবস্থা আছে।
আধুনিক যুগের একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার ব্লুটুথ এর নামকরণ করা হয় ডেনমার্কের ই এক রাজা হ্যারাল্ড ব্লুটুথ এর নাম অনুসারে।
এই দেশে কফির চাহিদা বেশি হওয়ায় ডেনমার্ক কফি পান করায় বিশ্ব বিখ্যাত। যেখানে দেশের এক বিরাট অংশের মানুষ কফি পান করতে পছন্দ করে।
ডেনমার্কের সাধারন মানুষদের সম্ভাব্য আয়ুকাল 80 বছরের মতো এবং দেশে প্রায় অধিকাংশ চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিনামূল্যে পাওয়া যায়। ডেনমার্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎসব জুল যা আবার ডেনিস ক্রিসমাস নামেও পরিচিত। আর এই জুল সারা ডিসেম্বর মাস ধরেই পালন করা হয়।
এই সহজলভ্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসার ঘটায় ডেনমার্কের বেশ কিছুসংখ্যক সাহিত্যিক ও চিকিৎসক নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তাই জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতি ব্যক্তির মাথাপিছু অনুযায়ী যদি তুলনা করি তাহলে ডেনমার্কের বিশিষ্টজনেরা বিশ্বের সবথেকে বেশি সংখ্যক নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। বিশ্বে একটি সুখী দেশ হিসেবে পরিচিত ডেনমার্কে কিন্তু ব্যক্তিগত ইনকাম ট্যাক্স অর্থাৎ পার্সোনাল ইনকাম ট্যাক্স সবচেয়ে বেশি থাকা দেশ গুলির মধ্যে আছে। যেখানে 60 শতাংশেরও বেশি ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয়।
ডেনমার্কে প্রতি দুই-তিন দিন অন্তর অন্তর বৃষ্টি হয় কারণ এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি। ফলে বছরে প্রায় 179 দেশে বৃষ্টি হয়।
অবাক ভাবে ডেনমার্কের মূল ভূখণ্ডের যেকোনো স্থান থেকে সমুদ্রের উপকূল কাছাকাছি। মানে দেশে কোন একটা স্থান থেকে যাত্রা শুরু করে 52 কিলোমিটারের মতো গেলেই জল দেখা যাবে। তাই জলের ভাগ কাছাকাছি থাকায় ডেনমার্কের সাধারন মানুষ ভালো সাঁতার কাটতে পারে।
তবে ডেনমার্কে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে সাইকেলের ব্যবহার বেশি হয়। বিশেষ করে দেশের রাজধানী কোপেনহেগেনের সাইকেলের ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু জানেন কি প্রাইভেটকার কেনাটা ডেনমার্কে ব্যয় সাপেক্ষ। কারণ নতুন ব্যক্তিগত গাড়ি কিনলে তার জন্য 150% রেজিস্ট্রেশন ট্যাক্স দিতে হয়। তাই সাধারন মানুষ পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বেশি ব্যবহার করে এবং এর পেছনে সরকারের উদ্দেশ্য ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকানা কমানো। ইউরোপের পুরনো এয়ারপোর্ট গুলির মধ্যে থাকা কোপেনহেগেন এয়ারপোর্ট ডেনমার্কের সবচেয়ে বড় এবং ব্যস্ততম বিমানবন্দর। এই কোপেনহেগেন এয়ারপোর্ট ডেনমার্কের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ডেনমার্কের রাজবংশ বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো রাজবংশের মধ্যে পড়ে। যারা প্রায় এক হাজার বছরের পুরনো এবং এই রাজবংশ একসময় দেশের পূর্ণ শাসনের অধিকার থাকলেও বর্তমানে তাদের ক্ষমতা যথেষ্ট কমে গেছে।
ডেনমার্কের জাতীয় খেলা ফুটবল।যা ডেনমার্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা।
ডেনমার্কে প্রায় 1600 টি ফুটবল ক্লাবে 3 লক্ষেরও বেশি ফুটবল খেলোয়ার রয়েছে।ডেনমার্কে আরও এক ধরনের খেলা হ্যান্ডবলের জনপ্রিয়তাও বেশি।
Like this:
Like Loading...