শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩১ অপরাহ্ন

ডাইভারসিটি প্লাজায় বৈশাখী মেলায় মানুষের ঢল দেখে মুগ্ধ মেয়র

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৩

১৪ এপ্রিল টাইমস স্কয়ারে প্রথমবারের মতো বাংলা নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠান ছিলো বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য গর্বের একটি বিষয়। কিন্তু অনুষ্ঠানটির জন্য বরাদ্দকৃত সময় ছিল মাত্র দুই ঘন্টা। উৎসবপ্রিয় বাঙালির জন্য দুই ঘন্টা সময় যথেষ্ট ছিল না। মধুর সময় দ্রæত শেষ হয়ে যায়।

‘হইয়াও হইলো না শেষের’ মতো অতৃপ্তি নিয়ে যারা ঘরে ফেরেন, তাদের সমস্ত অতৃপ্তি ঘুচিয়ে দিয়েছে দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান। ১৫ এপ্রিল, শনিবার, জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামে।

এমনিতে জ্যাকসন হাইটস মিনি বাংলাদেশ, তার ওপর বৈশাখী মেলার কল্যাণে পুরো এলাকায় উৎসবের আবহ তৈরি হয়। উৎসব মানেই আনন্দ। আর সে আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিলো নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক এডামসের অংশগ্রহণ।

সকালে অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বেই মেয়রের কার্যালয়ের ডেপুটি কমিশনার দিলিপ চৌহান ডাইভারসিটি প্লাজা প্রাঙ্গনে এসে উপস্থিত হন। তিনি সকলের সঙ্গে নেচে গেয়ে আনন্দ করেন।

তিনি বলেন, সিটি মেয়র এরিক এডামসের কাছে বাংলাদেশী কমিউনিটি শুধু গুরুত্বপূর্ণই না, তিনি এই কমিউনিটিকে হৃদয়ে ধারণ করেন।

যে কারণে প্রথমবারের মতো এই সিটির কোন মেয়র তাঁর বাসভবনে বাংলাদেশী হেরিটেজ মাস পালন উদযাপন করেছেন।

বিকাল ৫টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন মেয়র এরিক এডামস।

এ সময় মেলায় আগত দর্শকরা হাততালি দিয়ে মেয়রকে অভিনন্দিত করেন।তাঁকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন এবং উত্তরীয় পরিয়ে দেন আয়োজক সংগঠন এনআরবি ওয়ার্ল্ডওয়াইডের সভাপতি বিশ্বজিত সাহা। সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল লিটন মেলার জন্য ডিজাইন করা পাঞ্জাবি উপহার দেন। মেলা উপলক্ষে প্রকাশিত স্যুভেনির উপহার দেন নূরুল বাতেন। নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম তার বক্তব্যে বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির বিবরণ তুলে ধরেন।

মেয়র এরিক এডামস ফিতা কেটে মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধনকালে হাজারো মানুষের বর্ণাঢ্য উপস্থিতি দেখে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করে বলেন, আমি অভিভূত! তিনি বলেন, বাংলাদেশী কমিউনিটি নির্বাচনের পূর্ব থেকেই আমার সঙ্গে আছে।  এজন্য আমি সব সময় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। এই সিটির মানুষের জীবন মান উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্য আগামীতে একসাথে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি। নিউজার্সিও প্লেইন্সবরো টাউনশিপের কাউন্সিলম্যান, একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবী, মূলধারার রাজনীতিক ডেমোক্র্যাট মোর্শেদ আলম, মহীতোষ তালুকদার তাপস, নূরুল আমিন বাবু, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন এবং ডেইজি সারোয়ার এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। মেয়রের পর্বটি উপস্থাপনা করেন সেমন্তী ওয়াহেদ।

অনুষ্ঠান শুরু হয় উন্মুক্ত মঞ্চে।  সকালের অনুষ্ঠানের উপস্থাপক লেখক ও সাংবাদিক শামীম আল আমিনের আহবানে উৎসবের আহবায়ক লায়লা হাসান মঞ্চে আসেন। মঞ্চের পেছনে ডিজিটাল স্ক্রিনে শোভা পায় রমনা বটমূলের ছবি। নিউইয়র্কের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘প্রকৃতি’র শিল্পীরা পরিবেশন করে সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘প্রভাত অম্বরও মাঝে’।

এরপর একে একে মঞ্চে আসে শিল্পকলা একাডেমি, বহ্নিশিখা, ব্যান্ড সঙ্গীত দল ‘পাপী মনা’।  মহীতোষ তালুকদার তাপসের নেতৃত্বে এনআরবি ওয়ার্ল্ডওয়াইডের শিল্পীদের গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন উৎসবের আহবায়ক, একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যসারথি লায়লা হাসান।

হল্যান্ড, জার্মানী ও নরওয়ের শিল্পীরা শ্রী চিন্ময় সেন্টারের পক্ষ থেকে বাংলা গান পরিবেশন করে সকলকে মুগ্ধ করে।  কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রক্ত করবী’ নাটকের আংশিক পরিবেশন করেন ঢাকা ড্রামা’র শিরিন বকুল ও রানা আহমেদ।

কবিগুরুর বন্দনামূলক সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে ‘বহ্নিশিখা’ পরিবেশন করে তাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ‘রঙে ভরা বৈশাখ’। দর্পণ কবীরের লেখা এবং নাজমুন মুনিরা ন্যান্সির গাওয়া একুশের থিম সংয়ের ওপর মনোমুগ্ধকর কোরিওগ্রাফি প্রদর্শন করেন ‘নৃত্যাঞ্জলি’ নিউইয়র্কের শিল্পীরা।

‘ঝরে রংয়ের ঝর্ণা’ শিরোনামে গীতিনৃত্য পরিবেশন করে সকলকে মুগ্ধ করেন অনুপ দাস ড্যান্স একাডেমির ( আড্ডা) শিল্পীরা।

সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে বৈশাখী মেলা ও ঈদ বাজারের কলরব। ঈদ বাজারে শাড়ি-পাঞ্জাবি- টুপি, গ্রামীণ বাংলাদেশের বাঁশ-বেতের সামগ্রী, রঙিন হাতপাখা, মাটির কলসী, নকশিকাঁথা, রঙ-বেরঙের কাচের চুরি, ফিতা, মেহেদি সহ বাংলার ঐতিহ্যবাহী সামগ্রী বিক্রি হয়েছে। বিক্রি হয়েছে ঢাক, একতারা, বাঁশের বাঁশি, হাওয়াই মিঠাই, মুড়ি-মুড়কি, জিলাপি, বাতাসা, পান-সুপারি। ‘এমন সুন্দর দিনে,পান্তা ইলিশ কিনে। নিজের হাতে ভাজবো আমরা সবাই পাবে ভাগ’- এমন শ্লোগান সম্বলিত ব্যানার টানিয়ে মেলা প্রাঙ্গনে নিজেদের হাতে ইলিশ ভেজে ইফতারের সময় সময় ফ্রি পান্তা-ইলিশ, আলুভর্তা, বেগুনভাজা পরিবেশন করেন ‘বাংলাদেশ ক্লাব যুক্তরাষ্ট্র’র সদস্যরা। ফ্রি রসমলাই পরিবেশন করে গাইবান্ধা সমিতি।

সন্ধ্যার পর শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।  এতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বরেণ্য রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, তাজুল ইমাম, কলকাতা থেকে আগত শিল্পী কমলিনী মুখোপাধ্যায় এবং নিউইয়র্কের জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী শাহ মাহবুব। সঙ্গীতসুধায় তৃপ্ত দর্শক ঘরে ফেরার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ঝরঝরিয়ে বৃষ্টি নামে। জনৈক দর্শক মজা করে বলেন, বৈশাখের অনুষ্ঠান আর বৃষ্টি হবে না- তা কি করে হয়? এ বৃষ্টি স্বস্তির। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে মানুষের হৃদয়ে আনন্দের যে ঝর্ণাধারা বইছে, বৃষ্টি হচ্ছে মানুষের সে উচ্ছ¡াসের সঙ্গে প্রকৃতির উচ্ছ¡াসের সন্ধি স্থাপনের প্রচেষ্টা মাত্র। বৃষ্টি যেমন প্রকৃতির ময়লা আবর্জনা ধুয়ে মুছে সাফ করে, তেমনি পহেলা বৈশাখের অসাম্প্রদায়িক উৎসব আমাদের ভেতরের ঘৃণা-দ্বেষ দূর করে পৃথিবীর বুকে শান্তির বাণী ছড়িয়ে দিক। কবিগুরুর ভাষায়, ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বাণী’।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com