সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৬:২৪ অপরাহ্ন

ঠিকাদারি কাজে শেখ সেলিমের হাজার কোটির কমিশন বাণিজ্য

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে হাজার হাজার কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্য পরিচালনা করতেন এক সময়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সবশেষ কয়েকটি সরকারে মন্ত্রিত্ব না থাকলেও শেখ পরিবারের প্রভাব কাজে লাগিয়ে গত ১৫ বছরে উন্নয়ন কাজে নিয়মিত কমিশন বাণিজ্য করে গেছেন তিনি।

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানের ১৩০০ কোটি টাকার কাজে পছন্দের ঠিকাদারের কাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে কমিশন গ্রহণ করার সুনির্দিষ্ট একটি অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ সেলিমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (১৬ মার্চ) এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিম।

এরপর টানা চারটি সংসদে ছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। শেখ মুজিবের ভাগনে হওয়ার সুবাদে মন্ত্রিত্ব না থাকলেও স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, সড়ক পরিবহনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঠিকাদারি কাজের বড় অংশ ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। বিশেষ করে বৃহত্তর ফরিদপুর, খুলনা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের সব উন্নয়নকাজ ভাগবাটোয়ারা করতেন তিনি। বিনিময়ে মিলত ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমিশন।

দুদক সূত্রে জানা যায়, সরকারি কাজের নিয়ম অনুযায়ী কোনো কাজের দরপ্রস্তাবের তথ্য গোপন থাকে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বাইরে অন্য কারো এটি জানার কথা নয়। কিন্তু শেখ সেলিম প্রতিটি উন্নয়নকাজের জন্য দরপ্রস্তাব জমা দেওয়া ঠিকাদারদের আর্থিক প্রস্তাবের তথ্য পেয়ে যেতেন এবং এরপরই কাজ দেওয়া ও কমিশন নেওয়ার সিন্ডিকেট তৈরি করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বনানীতে শেখ সেলিমের বাসায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজের হিসাব মিলেছে। বনানীর বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া ওই নথিতে গোপালগঞ্জের ১১টি, চুয়াডাঙ্গার একটি, হবিগঞ্জের একটি, টাঙ্গাইলের একটি, ময়মনসিংহের একটি, ফরিদপুরের একটি, নাটোরের একটি, খুলনার তিনটি এবং রাজশাহীর দুটি প্যাকেজের দরপত্রের বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ রয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। নথির পাতায় পাতায় বিভিন্ন সংকেতের মাধ্যমে নির্বাচিত ঠিকাদার, কাজ শেষ করার সময় ও কমিশনের হার উল্লেখ রয়েছে। ওই নথির অনুলিপিসহ একটি অভিযোগ দুদকে জমা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, গোপালগঞ্জেরই ১১টি উন্নয়নকাজ ১১ প্যাকেজে ভাগ করে ঠিকাদার নির্ধারণ হতো। এসব প্যাকেজে বাউন্ডারি ওয়াল, বিদ্যুতের সাব স্টেশন, গ্যালারি শেড, স্টেডিয়াম সংস্কার ও উন্নয়ন, হোস্টেল কাম অফিস ভবন, উইমেন স্পোর্টস কমপ্লেক্সে জিমনেসিয়াম, স্টেডিয়াম ও স্পোর্টস কমপ্লেক্সে গ্যালারি চেয়ার স্থাপনসহ নানা নির্মাণকাজের তথ্য রয়েছে। যার মধ্যে বিএফএল/এইচএলসি-জে/ভি নামে ১২ কোটি ২৩ লাখ ৯৯ হাজার; কিউ এইচ মাসুদ অ্যান্ড কোং নামে ১১ কোটি ৬০ লাখ ৩৯ হাজার; মেসার্স আনাম ট্রেডার্সের নামে ১০ কোটি ২২ লাখ ৫৬ হাজার; এ, এস-এ এটকো- জে/ভি নামে ৯ কোটি ৩৪ লাখ ৫৯ হাজার টাকার কাজ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া মার্কেন্টাইল কর্পোরেশনের নামে ১১ কোটি ৬৭ লাখ ৬৩ হাজার, বিএফএল-এএলসিএল জে/ভি নামে ১৩ কোটি ৮৯ লাখ ২০ হাজার, কিউ এইচ মাসুদ অ্যান্ড কোং নামে ১৩ কোটি ৪৬ লাখ ৭৮ হাজার, মেসার্স আনাম ট্রেডার্সের নামে ১১ কোটি ৭০ লাখ ৪২ হাজার টাকার কাজ দেওয়া হয়েছে।

গোপালগঞ্জের বাইরে চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, হবিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও নাটোরের বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজ ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ রয়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com