শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৬ অপরাহ্ন

ঠাকুরবাড়ির বাগানবাড়িতে পালন হচ্ছে না রবীন্দ্র জয়ন্তী

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০২৩

বারান্দায় জমেছে ধুলো। এমন উৎসবের দিনেও অন্দরমহলে নেই কোনও আয়োজন। অনাদরে পড়ে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত চুঁচুড়া দত্তভিলা। আজ কবিগুরুর জন্মদিনে উৎসব পালন তো অনেক দূর। খাঁ খাঁ করছে গোটা বাড়ি। অথচ এই বাড়ির গঙ্গামুখী বারান্দায় বসেই একদিন গান লিখে, গান গেয়ে বাবার কাজ থেকে পেয়েছিলেন উপহার। চুঁচুড়ার দত্তভিলার বারান্দায় বসে গান গেয়েছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। এই বাড়িতে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছিলেন কবি, আজ সেই বাড়িতে পালন হয় না রবীন্দ্র জয়ন্তীর অনুষ্ঠানটুকুও, আক্ষেপ চুঁচুড়াবাসীর।

আজ ২৫ বৈশাখ সারা দেশ জুড়ে পালিত হয় বিশ্বকবির জন্মজয়ন্তী উৎসব।কবির স্মৃতি বিজরিত বিভিন্ন স্থানে পালিত হচ্ছে জন্মদিন।ঠিক তখনই ব্যতিক্রমী ছবি দেখা গেল রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত চুঁচুড়া দত্তভিলায়। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত চুঁচুড়ার গঙ্গাপারের এই বাড়ি। ১৮৭৯ থেকে ১৮৮৭ সাল পর্যন্ত এই বাড়িতেই বসবাস করেছেন ঠাকুরবাড়ির পরিবারের সদস্যরা। একসময় এই বাড়ি চুঁচুড়া শহরের জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি বাগানবাড়ি হিসেবে পরিচিতি পায়। কিন্তু, আজ সেখানে নেই কোন আনন্দ উৎসবের ছোঁয়া। কোন সরকারি বা বেসরকারি তরফে রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎসব পালন করতে কোনও উদ্যোগও নেওয়া হয়নি বলে আক্ষেপ শোনা গেল স্থানীয়দের মুখে ।

একসময় এই দত্ত ভিলাতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গান গেয়ে পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। বাড়ির বারান্দায় বসে রবীন্দ্রনাথ নিজে গান গেয়ে শুনিয়েছিলেন মহর্ষিকে।আজ সেই ঝুল বারান্দায় ধুলো জমেছে। তখন গঙ্গাবক্ষ দিয়ে স্টিমারে করে এসে কবি সোজা উঠতেন দত্তভিলার দাওয়ায়।সেই জায়গায় আজ আগাছায় ভর্তি। বিভিন্ন পত্র পত্রিকা লেখা থেকে জানা যায় এই বাড়ির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যোগ কতটা নিবিড়। আজ সেই বাড়ির এমন অনাম্বর সাজে বিস্মিত সকলে।

যদিও চুঁচুড়ার বেশ কিছু রবীন্দ্র অনুরাগী এগিয়ে এসেছেন রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করতে।দত্ত ভিলায় না হলেও পাশেই গঙ্গার পাড়ে অপর একটি বাড়ির ছাদে রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎসব পালন করেন। রবীন্দ্র অনুরাগী সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,” পঁচিশে বৈশাখ দিনটি বাংলার মানুষের কাছে অন্য মাত্রা পায়।রবীন্দ্র স্মৃতিবাহিত জায়গা গুলিতে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালিত হয়।কিন্তু, দুঃখের বিষয় দীর্ঘদিন চুঁচুড়া শহরের দত্ত ভিলায় রবীন্দ্রনাথ ও তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ বাড়ির একাধিক পরিবারের সদস্যরা এখানে থাকতেন। কোনও সরকারি বা বেসরকারি ভাবে এখানে কোনও অনুষ্ঠান হয় না।এটা চুঁচুড়াবাসী হিসেবে খারাপ লাগে। রবীন্দ্রনাথ বা দেবেন্দ্রনাথের স্মৃতিতে এই বাড়ির কথা উল্লেখ রয়েছে। সেখানে রবীন্দ্রনাথ দুটি কবিতা লিখে তার জীবন স্মৃতিতে ব্যক্ত করেছেন তিনি। কবি লিখছেন, পিতার কাছে ছোটো বেলায় হাসির পাত্র হয়েছিলাম। যুবা বয়সে আমি তার প্রতিশোধ নিতে পেরেছিলাম ।”

জানা যায়, ১৮৮৬ সালে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে মাগো উৎসব পালন করছেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর পিতা তখন চুঁচুড়ার দত্ত ভিলায়। কিভাবে পালিত হয়েছে সেই উৎসব সেটা জানতেই রবীন্দ্রনাথকে ডেকে পাঠান তার বাবা। তখন স্টিমার ধরে গঙ্গা হয়ে দত্তভিলায় আসেন কবি। সেখানে দেবেন্দ্রনাথ শ্রোতা এবং রবীন্দ্রনাথ তাকে একের পর এক গান শোনাচ্ছেন। আর তাঁকে হারমোনিয়ামে সঙ্গ দিচ্ছেন তাঁর দাদা। তাঁর মধ্যে একটি গান, “নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছো নয়নে নয়নে”। এই গান সমাপ্ত হলে দেবেন্দ্রনাথ বলেছিলেন, দেশের রাজা যদি ভাষা জানিত, সাহিত্যের কদর বুঝিত তাহলে যথাযোগ্য সম্মান দিত। এই বলে তিনি পাঁচশত টাকা উপহারস্বরূপ রবীন্দ্রনাথকে দিয়েছিলেন। যা বাঙালির মনের মণি কোঠায় নোবেল পাওয়ার থেকেও বড় পাওনা।এমনই বহু ঘটনার সাক্ষী হয়ে রয়েছে চুঁচুড়ার দত্ত ভিলা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com