শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২১ অপরাহ্ন

টাইমস স্কয়ারে শতকণ্ঠে বর্ষবরণ

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৩

বহুজাতিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ টাইমস স্কয়ারের ঐতিহ্যের ডানায় শুক্রবার যুক্ত হলো আরেকটি নতুন পালক। টাইমস স্কয়ারে প্রথমবারের মতো উদযাপিত হলো বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ বরণ। আয়োজক সংগঠন এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড। ভোর ৬টা ৩০ মিনিটে দুইদিন ব্যাপী এই আয়োজনে প্রীতি সম্ভাষণ জানান বর্ষবরণ ১৪৩০এর আহবায়ক, একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য নৃত্যশিল্পী, বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়লা হাসান।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজনের মূল রূপকার এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের সভাপতি বিশ্বজিত সাহা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল লিটনের সঞ্চালনায় ঐতিহাসিক এই আয়োজনে এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা, একুশে পদকপ্রাপ্ত সঙ্গীতশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, অনুষ্ঠানের প্রাণপুরুষ গণসঙ্গীত শিল্পী মহীতোষ তালুকদার তাপস।

সকালের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব বাঙালির পদচারণায় মুখরিত হয় ঐতিহাসিক টাইমস স্কয়ার।মঙ্গল শোভাযাত্রায় সাদা শাড়ি লাল পাড়, খোঁপায় লালগোলাপ; পুরুষদের গায়ে ঐতিহ্যবাহী পাঞ্জাবি, গলায় গামছা, হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা; কণ্ঠে হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত হয় বৈশাখের সেই চিরায়ত সঙ্গীত ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’। বাংলার ঢোল আর একতারার সুরে মুখরিত টাইমস স্কয়ারের এমন অভাবনীয় দৃশ্যে মুগ্ধ হয় নিউইয়র্কাররা, আর বাঙালি হয়ে উঠে আবেগাপ্লুত। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক তোফাজ্জল লিটন যখন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, তখন জয় বাংলা শ্লোগানে মুখরিত হয় টাইমস স্কয়ার।

অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিলো মহীতোষ তালুকদার তাপসের পরিচালনায় শতকণ্ঠে বর্ষবরণ।মাতৃভূমির প্রতি প্রাগাঢ় ভালোবাসার টানে শতকণ্ঠের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পরিণত হয়েছিল হাজারো কণ্ঠের মিলনমেলায়।

‘এমন যদি হতো আমি পাখির মতো, উড়ে উড়ে ঘুরে সারাক্ষণ’- বৈশাখী আয়োজনের শিল্পীদের এমন পরিবেশনায় উপস্থিত দর্শকরা নেচে গেয়ে আনন্দ করেছে, অন্যদিকে-

‘নোঙ্গর তোল তোল

সময় যে হল হল

নোঙ্গর তোল তোল’

মহান মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণাদায়ক সেই গানে অসাম্প্রদায়িক, কুসংস্কারমুক্ত আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিয়ে ঘরে ফিরেছে।

আগামীকাল দ্বিতীয় দিনের আয়োজন বৈশাখী মেলা ও আনন্দ শোভাযাত্রা। উপস্থিত থাকবেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক এডামস, রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং কোলকাতা থেকে আগত শিল্পী কমলিনী মুখোপাধ্যায়সহ স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ।

বাঙালি জাতির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে বাংলা নতুন বছরকে ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে বরণ করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী ইমিগ্রান্টরা। বাঙালি সংস্কৃতিপ্রেমী শতশত মানুষ জড়ো হয়ে ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে গানের মাধ্যমে বরণ করে নেয় বাংলা নতুন বছরকে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেট থেকে এ আয়োজনে যুক্ত হয়েছেন বাঙালিরা। নিজেকে ইতিহাসের অংশ করতে প্রত্যেকের ছিল স্বতঃস্ফূর্ত প্রয়াস।

নিউইয়র্কে শতকণ্ঠে ১৪৩০ বাংলা বর্ষবরণের আহবায়ক লায়লা হাসান একক নৃত্য পরিবেশন করেন।  তিনি বলেন, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালিদের সবচেয়ে বড় প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে শত শত প্রবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আবার তা প্রমাণিত হয়েছে।

এই আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বাঙালিদের আয়োজনে প্রথমবারের মতো টাইমস স্কয়ারে হয়েছে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এটি উদ্বোধন করেন।  তিনি বলেন, টাইমস স্কয়ারের শতকণ্ঠে বর্ষবরণ আয়োজনটি অনবদ্য। প্রবাস জীবনের এত প্রতিকূলতার পরেও বৈশাখের প্রথম দিনে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রবাসীদের বিপুল অংশগ্রহণ ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। আমার চাওয়া প্রতিবছর এভাবেই বৈশাখ উদযাপিত হোক নিউইয়র্ক সহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে।

এবছর পহেলা বৈশাখ উদযাপন ব্যাহত করতে সাম্প্রদায়িক মানুষ আদালতে মামলা করেছিলেন। মামলায় তাদের পরাজয় হয়। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এই আয়োজন শুভর জয় হিসেবে দেখছেন আয়োজক সংগঠন এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের সভাপতি বিশ্বজিত সাহা। তিনি বলেন, বাঙালি জাতি কখনো ধর্মান্ধতার কাছে পরাজিত হয়নি।  ১৩ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এই আয়োজন স্থগিত করার মামলা খারিজ করে দেয়। বর্ণাঢ্য এই আয়োজন রমনার বটমূলের আদলে ১৫ এপ্রিল জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় সকাল সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত চলবে। থাকবে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা ও ঈদ বাজার। এটি উদ্বোধন করবেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস।

আয়োজক সংগঠন এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের সাধারণ সম্পাদক এই প্রতিবেদক তোফাজ্জল লিটন বলেন, প্রতিবছর বৈশাখের প্রথম দিন বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হবে নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে।

শত শত বাঙালি স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে অভিভূত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায়।  তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী বাঙালি সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে ইতিহাস সৃষ্টিকারী এবারের পহেলা বৈশাখ উদযাপন যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। সবার অংশগ্রহণে সর্বজনীনভাবে এমন বর্ণাঢ্য আয়োজন আমাদের আগামী প্রজন্মকে বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com