জার্মানি ইউরোপের অন্যতম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিশালী দেশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্বমানের শিক্ষা, সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ ও কয়েক হাজার কোর্স থেকে পছন্দের কোর্সে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থাকার কারণে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের কাক্সিক্ষত দেশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দ জার্মানি। জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ ও সম্ভাবনা নিয়ে লিখেছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার
খাদিজা লিজা পড়াশোনা করছেন আনহাল্ট ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্সে মলিকুলার বায়োটেকনোলজি বিষয়ে। ২০২১ সালে তিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। শুরুতে ইচ্ছে ছিল কানাডায় উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করবেন। তারপর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন। পনের দিনের মধ্যেই আনহাল্ট ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্স থেকে অফার লেটার পেয়ে যান।
জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার যোগ্যতা : জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে যোগ্যতা একেক ভার্সিটির জন্য একেক রকম। এটা নির্ভর করে চাহিদার ওপর। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ওঊখঞঝ স্কোর ৭ চায়। আবার কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ৬ চায়। আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় গঙও দিয়েও অফার লেটার দেয়। তবে অ্যাম্বাসিতে মিনিমাম ৫.৫ চায়।
কাজের সুযোগ : পার্টটাইম জব প্রচুর আছে। তবে আপনাকে অবশ্যই পরিশ্রমী হতে হবে। জব বেশিরভাগ সময় শহর ভিন্নতায় ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে এখন যেমন হালেতে জীবনযাপন ব্যয় সবচেয়ে কম। আপনি চাইলে একদিনের চাকরিও করতে পারেন। এমন প্রতিষ্ঠানও আছে। ফলে একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়তি আয়ও করতে পারবেন জার্মানিতে।
পড়াশোনার ভাষা : জার্মানিতে উচ্চশিক্ষায় অধিকাংশ কোর্সই ইংরেজিতে পড়ানো হয়। তাই বেছে বেছে ইন্টারন্যাশনাল কোর্সগুলোতে অ্যাপ্লাই করতে হবে। ব্যাচেলর ম্যাক্সিমাম কোর্স জার্মান ল্যাঙ্গুয়েজ। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কিছু কিছু ব্যাচেলর কোর্স ইংরেজি বা পারশিয়ালি ইংরেজিতে পড়ানো হয়।
আবেদন প্রক্রিয়া : আবেদন প্রক্রিয়া নিয়ে লিজা জানান, আনহাল্ট-সহ কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনি অ্যাসিস্টের মাধ্যমে অ্যাপ্লাই করতে হয়। যার জন্য প্রথম যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করবেন তার জন্য ৭৫ ইউরো পে করতে হয়। এরপর ওই একই সেমিস্টারে আপনি যতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপ্লাই করেন প্রতি অ্যাপ্লিকেশনে ৩০ ইউরো লাগে। আবার সেমিস্টার চেঞ্জ হলে আগের নিয়মে প্রথম অ্যাপ্লিকেশনে ৭৫ ইউরো, পরের সবগুলোর জন্য প্রতি অ্যাপ্লিকেশন ৩০ ইউরো। আবার অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্রিতে আবেদন করা যায়। যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফ্রিতে অ্যাপ্লাই করা যায় তারা ভিপিডি চায়। ভিপিডি হলো জার্মান গ্রেডিং স্কেলে আপনার রেজাল্ট কনভার্সন। শিক্ষার্থীর অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ইউনি অ্যাসিস্টকে দিলে তারাই ভিপিডি দেয়। তার জন্য আগের নিয়মে পে করতে হয় অবশ্য। জার্মানিতে অ্যাপ্লাই করতে কোনো এজেন্সির প্রয়োজন হয় না। সব কিছু নিজেই করা যায়। জার্মানির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, যেহেতু অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো টিউশন ফি অ্যাড হয়নি, তাই স্কলারশিপের প্রয়োজন পড়ে না।
তবে সামনে যারা আসবেন তাদের টিউশন ফি দিয়ে পড়তে হবে। তাদের জন্য স্কলারশিপ পাওয়াটা খুবই প্রয়োজন। ম্যাক্সিমাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ আছে। কিন্তু টিউশন ফি না থাকার কারণে অনেকেই এর খোঁজখবর রাখেন না। প্রবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা কিছু স্কলারশিপ আছে। সবচেয়ে প্রসিদ্ধ এবং পরিচিত স্কলারশিপ হলো উঅঅউ স্কলারশিপ। প্রথম সেমিস্টারে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। দ্বিতীয় সেমিস্টারে আবেদন করতে হয়। প্রথম সেমিস্টারের ফলাফল দিয়ে দ্বিতীয় সেমিস্টারের এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে হয়। জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনটি স্কলারশিপ উল্লেখযোগ্য, অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য ¨ Bundesausbildungsförderungsgesetz, BAföG, ভালো ফলাফল ও স্বেচ্ছাসেবার জন্য Deutschlandstipendium (Germany Scholarship) I DAAD scholarship|
নতুনদের জন্য পরামর্শ : জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহীদের প্রতি খাদিজা লিজার পরামর্শ, সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড হলে উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানিকে বেছে নেওয়ার। কারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে তারাই শীর্ষস্থানে রয়েছে। যারা এখন বুঝতে পারছেন না কীভাবে আবেদন করবেন তাদের প্রতি তার পরামর্শ বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্স আগে ঠিক করে নেওয়ার। তারপর সেই বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্সের তথ্য ওয়েবসাইট থেকে জেনে নিতে হবে। তাছাড়া ২০২৪ থেকে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন ফি যোগ করছে। তাই আবেদনের আগে সামর্থ্য, স্কলারশিপ পাওয়া এবং পার্টটাইম কাজ করে আয় করার সুযোগ ইত্যাদি বিষয় হিসাবনিকাশ করে তারপরে আবেদন করতে হবে।