জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্স সম্পন্ন করতে লাগে চার সেমিস্টার (দুই বছর), যার মধ্যে তিন সেমিস্টারে বিভিন্ন বিষয়ের থিওরি ও ব্যবহারিক পাঠদান করা হয়। বাকি একটি সেমিস্টারে থাকে থিসিস। এ ক্ষেত্রে পছন্দের নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রফেসর নির্বাচন করে তাঁর অধীনে ছয় মাসের থিসিস করে যেকোনো একটি বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান লাভ করা হয়। ভবিষ্যতে চাকরি বা ডক্টরেট ডিগ্রির জন্য ওই বিষয়ই বেছে নিতে হয়।
এখন কথা হচ্ছে এত দেশ রেখে কেন জার্মানিতে পড়তে যাবেন? জার্মানিকে বলা হয় ল্যান্ড অব আইডিয়াস। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পৃথিবীতে যত জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা হয়েছে, সেসবের অন্যতম তীর্থস্থান হচ্ছে জার্মানি। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় নামীদামি বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে পৃথিবী বিখ্যাত মনীষীদের অনেকেরই জন্মভূমি ও কর্মস্থল জার্মানি। এ ছাড়া বর্তমান বিশ্বে যত রকমের টেকনোলজি আছে, তার অনেকগুলোর গবেষণা ও উন্নয়ন হচ্ছে জার্মানিতে। এ ছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ জার্মানি। এর বিশেষ কারণ হচ্ছে, জার্মানিতে পড়াশোনার জন্য কোনো খরচ নেই বললেই চলে। ধরতে গেলে সম্পূর্ণ বিনা খরচে এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদান করা হয়। এমনকি পরীক্ষার ফিসের জন্যও শিক্ষার্থীদের কোনো অর্থ দিতে হয় না। শিক্ষার্থীকে শুধুই তাঁর বাসস্থানের ও দৈনন্দিন খরচ জোগাতে হয়, যা কিনা স্টুডেন্ট জব করেই পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।
উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিকে ধরা হয় সবচেয়ে কম খরচে উচ্চশিক্ষার জন্য অন্যতম পছন্দের দেশ। আমাদের মতো দেশ থেকে যেসব শিক্ষার্থী জার্মানিতে পড়তে যান, তাঁদের জন্য উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যে ধাপগুলো থাকে, তার মধ্যে মাস্টার্স থেকে শুরু করাই এ ক্ষেত্রে আদর্শ বলে অন্তত আমি মনে করি।
জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্স সম্পন্ন করতে লাগে চার সেমিস্টার (দুই বছর), যার মধ্যে তিন সেমিস্টারে বিভিন্ন বিষয়ের থিওরি ও ব্যবহারিক পাঠদান করা হয়। বাকি একটি সেমিস্টারে থাকে থিসিস। এ ক্ষেত্রে পছন্দের নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রফেসর নির্বাচন করে তাঁর অধীনে ছয় মাসের থিসিস করে যেকোনো একটি বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান লাভ করা হয়। ভবিষ্যতে চাকরি বা ডক্টরেট ডিগ্রির জন্য ওই বিষয়ই বেছে নিতে হয়।
এখানে উল্লেখ্য, থিসিস চলাকালে অনেক প্রফেসর তাঁর শিক্ষার্থীকে পারিশ্রমিকও দিয়ে থাকেন, যার পরিমাণ শহর ও ফান্ড সিস্টেমভেদে ২০০ থেকে ৯০০ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে। মাস্টার্স শেষ করে আপনি ফুলটাইম জব করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে জার্মান ভাষার দক্ষতা মোটামুটি জবভেদে ভালো হতে হবে। এ ছাড়া ইংরেজি মাধ্যমে ফুল পেইড বা হাফ পেইডে বৈজ্ঞানিক গবেষক পদে পিএইচডিও করতে পারবেন।
বাংলাদেশে যেকোনো নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চার বছরের ব্যাচেলর শেষ করেই মাস্টার্সের জন্য আবেদন করা যায়। আবেদন করার আগে প্রথম কাজ হচ্ছে নিজেকে যাচাই করা। এ ক্ষেত্রে অতি আবেগকে দমিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বিচার করবেন যে আন্তর্জাতিক মানের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য নিজে কতটুকু যোগ্য এবং সেখানে ভাষা ও সংস্কৃতিগত দিক দিয়ে কতটুকু মানিয়ে নিতে পারবেন। বিষয়টা প্রথমেই বিচার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার কিছু বেসিক মাপকাঠি উল্লেখ করে দিচ্ছি। ব্যাচেলরের রেজাল্ট যদি ক্লাস সিস্টেম হয়, এ ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণি (ফার্স্ট ক্লাস) থাকা আবশ্যক। সে ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৬৫ শতাংশ নম্বর হলে সুযোগ পাওয়া সহজ হয়। যদি গ্রেডিং সিস্টেমের রেজাল্ট হয়, তাহলে ন্যূনতম সিজিপিএ-৩.০ (৪.০) হলে চান্স পাওয়া সহজ হয়। ব্যাচেলরের পাঠদানের মাধ্যম ইংরেজি হলে এ ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার ওপর দক্ষতা অর্জনসহ অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। তারপরও নিজে চর্চা ও IELTS স্কোর ভালো হলে এই সমস্যা কাটিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়।