১। এই জার্মানির পূর্বজদের আগ্রাসনের কারনেই বিশ্বে দুই দুইবার বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত হয়। তবে ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তি জার্মানিকে পরাজিত করে। মিত্র দেশগুলো জার্মানিকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করে—ব্রিটিশ, ফরাসি, মার্কিন ও সোভিয়েত সেনারা একেকটি অঞ্চলের দায়িত্বে ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর মধ্যকার মিত্রতা ১৯৪০-এর দশকের শেষে ভেঙে গেলে সোভিয়েত অঞ্চলটি জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র তথা পূর্ব জার্মানিতে পরিণত হয়। পশ্চিম নিয়ন্ত্রিত বাকি তিন অঞ্চল নিয়ে পশ্চিম জার্মানি গঠিত হয়। মাঝখানে তৈরি করা হয় বার্লিন প্রাচীর।
পরে ১৯৮৯ সালে পূর্ব ও পশ্চিম বার্লিনের বাসিন্দারা বার্লিন প্রাচীর ভেঙে ফেলে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জার্মানি। ১৯৯৯ সালে ইউরো জোন প্রতিষ্ঠার সময়ও তাদের অংশগ্রহণ ছিল।
২। ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি। আয়তনের বিচারে জার্মানি ইউরোপের মধ্যে সপ্তম এবং বিশ্বের মধ্যে ৬৩তম বৃহত্তম দেশ। আর জনসংখ্যার দিক দিয়ে জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে জনবহুল দেশ।
৩। জার্মানির সরকারী ভাষা জার্মান। দেশটির বেশিরভাগ মানুষ জার্মান ভাষাতেই কথা বলে থাকেন।
৪। দেশটির প্রায় ৫৭ শতাংশ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী। এবং দেশটির প্রায় ৩৬ শতাংশ মানুষ কোন ধর্মেই বিশ্বাস করেনা।
৫। বার্লিন জার্মানির রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর। এটি ইউরোপ মহাদেশের একটি অন্যতম ঐতিহাসিক শহর। বার্লিন শহরে ৩৪ লক্ষেরও বেশি লোক বাস করেন। শহরটি একাধারে একটি শহর এবং জার্মানির একটি রাজ্য। বার্লিনের আয়তন ৩৪৩ বর্গমাইল; এর আয়তন প্যারিস শহরের প্রায় ৯ গুণ।
১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত বার্লিন পূর্ব বার্লিন ও পশ্চিম বার্লিন-এই দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। ১৯৬১ সালে পূর্ব জার্মান সরকার সেখানকার নাগরিকদের পশ্চিম বার্লিনে পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে দুই বার্লিনের মাঝে একটি দেয়াল তুলে দেয়। দেয়ালটি ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল। ১৯৮৯ সালে পূর্ব ও পশ্চিম বার্লিনের বাসিন্দারা বার্লিন প্রাচীর ভেঙে ফেলে।
৬। জার্মানি পরিবেশ সচেতন জাতি হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত। বেশির ভাগ জার্মানরাই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ব্যাপারে সচেতন। এই রাষ্ট্রটি কিয়োটো প্রোটোকল চরমভাবে মেনে চলে তাছাড়াও ক্ষতিকর গ্যাসের অল্প নির্গমন নিশ্চিত করে, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে। জার্মান সরকার বিপুল হারে দূষন রোধের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং দেশটির সামগ্রিক দূষন দিন দিন কমছে। যদিও কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস নিঃসরনের হার ইউরোপের অন্য সকল দেশের চেয়ে বেশি কিন্তু অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সৌদি আরব এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক কম। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বন্যা ও ঝড়ো বাতাস প্রায় সকল অঞ্চলে দেখা যায়।
৭। জার্মানি মোট ৪ বার ফুটবল বিশ্বকাপ জিতেছে। তবে ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ ছিল সংযুক্ত জার্মানির প্রথম বিশ্বকাপ। এর আগের ৩ বার বিশ্বকাপ জিতেছিল পশ্চিম জার্মানি।
৮। এই দেশে, জেল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এমন বন্দীর জন্য কোন শাস্তি নেই, কারন জার্মানিতে মানা হয় যে, স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাওয়া প্রত্যেক মানুশের অধিকার।
৯। ১ম বিশ্বযুদ্ধের সময়, ইংল্যান্ডের রাজা, রাশিয়ার জার এবং জার্মানির সম্রাট ছিলেন সবাই চাচাত ভাই।
১০। এই দেশের শতকরা প্রায় ৮৮ ভাগ মানুষ নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে সন্তুষ্ট৷ শারীরিক তো বটেই, মানসিকভাবেও তাঁরা নিজেদের বেশ সুস্থই মনে করেন৷
১১। জার্মানিতে ১৬ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৪ কোটি মানুষই চোখে চশমা পরেন৷ অর্থাৎ জার্মানির জনসংখ্যার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ মানুষের চোখেই থাকে চশমা৷
১২। বিশ্বের সর্বপ্রথম ম্যাগাজিনটি জার্মানিতে ১৬৬৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়েছিল।
১৩। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে পুরুষ মানুষের সংখ্যা এতো কমে গিয়েছিল যে সেখানে প্রতি ৩ জন নারীর বিপরীতে মাত্র ১ জন পুরুষ ছিলেন।
১৪। পুরো ২য় বিশ্বযুদ্ধ জুড়ে যে পরিমান জার্মান খুন হয় স্টালিংগ্রাদের যুদ্ধে রাসিয়ানরা তার চাইতে অনেক বেশি জার্মান হত্যা করে।
১৫। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার বাহিনী নাযিরা এক প্রকার বিশেষ স্যালুট এর প্রচলন করেছিলো। যা বর্তমানে জার্মানিতে অপরাধ হিসাবে গণ্য হয়। এবং এই স্যালুট করলে সর্বোচ্চ ৩ বছর পর্যন্ত সাজা হয়।
১৬। বর্তমানে জার্মান সৈনিকদের এমন ক্ষমতা দেওয়া আছে যে, যদি তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাদের এমন কোনো আদেশ দেয় যেটা মানবতার বিরুদ্ধে তাহলে তারা এই আদেশ অমান্য করতে পারে।
১৭। জার্মানি এবং জাপানে শিশু জন্মহার বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন।
১৮। জার্মানি, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড এবং অন্যান্য দেশগুলিতে শিশুর নামকরণ সরকারী নিয়মে করতে হয়।
১৯। জার্মানিতে, যেকোনো মহাসড়কের মাঝে মোটরবাইকের জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়া অবৈধ। এমনটি হলে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮০০০ টাকা জরিমানা গুনতে হয়।
২০। ১৯৮৯ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রয়োজনীয় বাচ্চার অভাবে জার্মানিতে প্রায় ২ হাজার স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
২১। ২০১৪ সাল থেকে জার্মানিতে পড়ালেখা একদম ফ্রী এমনকি আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যও।
২২। এই দেশে ইউটিউব এর ৬০ শতাংশ সর্বাধিক জনপ্রিয় ভিডিওগুলি দেখা যায় না।
২৩। জার্মান আইন অনুযায়ী আপনি রবিবারে জার্মানি তে ঘাস কাটতে অথবা কার ওয়াশ করতে পারবেন না। এই কারনেই শনিবার সকালে পেট্রোল স্টেশন গুলোতে কিছুটা লাইন থাকে।
২৪। বিশ্বের সবচায়তে বড় কার কোম্পানিগুলো জার্মানিতে অবস্থিত। যেমন জার্মান কোম্পানি অডি, মারসিডিস, বি এম ডাবলু সারা বিশ্বে প্রসিদ্ধ কার কোম্পানি হিসাবে পরিচিত।
২৫। জার্মানি তে ইউরোপ এর মধ্যে বেকারত্তের হার সবচাইতে কম।
২৬। জার্মান জনগন ১৭৭ টি দেশে বিনা ভিসাতে ভ্রমন করতে পারে।
২৭। যোগ্যতাসম্পন্ন শ্রমিক, উন্নত অবকাঠামো, মূলধনের বৃহৎ মজুদ, দুর্নীতির নিম্নহার ও উচ্চ উদ্ভাবনীক্ষমতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সোশ্যাল মার্কেট ইকোনমি জার্মানিতে বিদ্যমান।
২৮। জার্মানির সরকারী মুদ্রা ইউরো।
২৯। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।
৩০। জার্মানির ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৪৯।