এ যেন উলটপুরাণ ! জাপানে দ্রুত গতিতে কমছে জাপানির সংখ্যা। অন্যদিকে, বিদেশি নাগরিকদের বসবাসের সংখ্যা বাড়ছে উত্তরোত্তর হারে। এই মুহূর্ত জাপানে প্রায় ৩০ লক্ষ বিদেশি বসবাস করেন বলে সেদেশের সরকারি সূত্রের খবর।
সরকারি তথ্য বলছে, জাপানে জনসংখ্যার ঘাটতি মেটাতে জাপানিদের থেকে বড় ভূমিকা পালন করছেন বিদেশিরা। গত ১৪ বছর ধরে জাপানে জনসংখ্যা নাগাড়ে কমছে। এই হ্রাসের হার প্রায় ৮ লক্ষ। অথচ কয়েক বছর আগেও ১২ কোটি ২০ লক্ষর বেশি জনসংখ্যা ছিল এই দেশে। এই ক’বছরে এই হারে জনসংখ্যা হ্রাসে স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত সেদেশের সরকার। এবছর পয়লা জানুয়ারি পর্যন্ত এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। জাপানের আভ্যন্তরীণ বিষয়ক ও যোগযোগ মন্ত্রণানলয় সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
২০০৮ সালে জাপানের জনসংখ্যা প্রচুর বৃদ্ধি পেয়েছিল। তারপর থেকে অবশ্য এই হার কমতে থাকে। কারণ, জন্মহার কমতে শুরু করে। যা গত বছর রেকর্ড হারে কমে যায়। তবে, এই ঘাটতি দ্রুত পূরণ করছে সেদেশে বসবাসরত বিদেশিরা। জানুয়ারির ১ তারিখ পর্যন্ত জাপানে বিদেশির সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০ লক্ষর কাছাকাছি। গত বছরের থেকে যা প্রায় ১০.৭ শতাংশ বেশি। বছরের পর বছর এই সংখ্যাটা বেড়ে যাচ্ছে। এক দশক আগে থেকেই জাপানে অ-জাপানিদের সংখ্যার হিসাব রাখছে আভ্যন্তরীণ মন্ত্রক।
এই পরিস্থিতিতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী (Japan PM) ফুমিও কিশিদা দেশের ক্রমহ্রাসমান জন্মহারের গ্রাফকে ঊর্ধ্বমুখী করতে বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেখছেন। তাঁর সরকার সবরকমের ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে- উচ্চ হারে ঋণ থাকা সত্ত্বেও, শিশুদের পরিচর্যা এবং বাবা-মাকে সাহায্য করতে বছরে ৩.৫ ট্রিলিয়ন ইয়েন খরচ করার পরিকল্পনা কিশিদা-সরকার ৷
চলতি বছরের মার্চ মাসে এনিয়ে কথা বলতে গিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন ফুমিও কিশিদার (Fumio Kishida) উপদেষ্টা মাসাকা মোরি। তিনি বলেছিলেন, “এভাবে চললে” একদিন দেশটাই ‘অদৃশ্য’ হয়ে যাবে।
শুধু জাপান-ই নয়, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া ও আমেরিকার মত দেশগুলিতেও শিশু জন্মের হার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। কিন্তু, উন্নত দেশগুলিতে এই পরিস্থিতির কারণ কী ?
একটি দেশে বার্ষিক জনসংখ্যার (Japan Population) পরিবর্তন গণনা করা হয়, কতজন জন্মাল এবং যারা দেশান্তরিত হয়েছে, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সময়ে কতজন মারা গেছেন এবং বহিঃপ্রবাসের সংখ্যা বিয়োগ করে। অর্থাৎ, জন্ম, মৃত্যু এবং অভিবাসনই জনসংখ্যা পরিবর্তনের হার নির্ণয় করার মূল বিষয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, স্বাধীনতার পর বিশাল সংখ্যায় জন্ম ও মৃত্যু দেখেছে ভারত। বিভিন্ন ধরনের রোগ এবং রাস্তা, হাসপাতালের মতো পরিকাঠামোর অভাবে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি দেখা গেছে। যখন পর্যাপ্ত ন্যূনতম পরিষেবা পায় অধিকাংশ মানুষ, তখন মৃত্যুর হার কমতে থাকে। শিশু জন্মের হার বৃদ্ধি পাওয়ায়, সার্বিক জনসংখ্যাও বাড়ে।