বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১১ পূর্বাহ্ন

জরুরী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ও হেলিকপ্টার সেবা

  • আপডেট সময় শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪

বাংলাদেশে রোগী স্থানান্তর ও জরুরী কাজে গত ২০ বছর ধরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স (Air ambulance) ও বাণিজ্যিক হেলিকপ্টার পরিষেবা। যদিও খরচ একটু বেশি তার পরেও বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে জরুরী অবস্থায় রোগী পরিবহন অথবা করপোরেট ব্যবহারের জন্য ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে এই পরিষেবাটি।

বিশ্বের প্রথম এয়ার অ্যাম্বুলেন্স (Air ambulance) ব্যবহার হয়েছিলো ১৯১৭ সালে বৃটেনে। পরে এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে সজ্জিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবাহার করে ১৯২০ সালে আফ্রিকান এবং মধ্য প্রাচ্যের উপনিবেশিক যুদ্ধের সময়। এর পরে সময়ের পরিক্রমায় দেশে দেশে এই সেবাটি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়েছে।

বাণিজ্যিক হেলিকপ্টার সেবা

বর্তমানে বাংলাদেশে হেলিকপ্টার অপারেটর আছে ১১টি এবং তাদের তত্বাবধানে হেলিকপ্টার আছে মোট ৩১ টি। এছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানের নিজেদের ব্যবহারের জন্য হেলিকপ্টার রয়েছে, তবে যখন তাদের প্রয়োজন হয় না, তখন সেটা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য দিয়ে দেয়৷

হেলিকপ্টার, R&R Aviation.

মোটামুটি একটি হেলিকপ্টার ভাড়া করতে হলে আপনাকে খরচ করতে হবে ঘণ্টায় ৬০ হাজার টাকা। তবে আসন ক্যাপাসিটি, হেলিকপ্টারের ধরন ভেদে ভাড়া কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে। এছাড়া রয়েছে গ্রাউন্ডে অপেক্ষামান সময়ের জন্য আলাদা চার্জ।

বাণিজ্যিক ভাবে হেলিকপ্টার ভাড়া নেওয়ার শর্তসমুহ

ব্যক্তিগত অথবা করপোরেট যে কোন জরুরী প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া নিতে পারবেন যে কোন সময়, তবে পালন করতে হবে কিছু আনুষ্ঠানিকতা। হেলিকপ্টার অপারেটরদের কাছে থেকে বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া নিতে যে শর্তগুলো পালন করতে হয় তা নিন্মরুপঃ

  • যাত্রা শুরু এবং গন্তব্য স্থান উল্লেখ করতে হবে বুকিংয়ের সময়।
  • হেলিকপ্টারে ভ্রমণকারীদের পরিচয় উল্লেখ করতে হবে বুকিংয়ের সময়।
  • হেলিকপ্টার বুকিংয়ের সময় ভাড়া অগ্রিম পরিশোধ করতে হয়।
  • বিদেশী যাত্রীর ক্ষেত্রে তার পাসপোর্টের কপি জমা দিতে হবে।
  • হেলিকপ্টার অবতরনের জন্য অনুমতি ও যাবতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা যিনি ভাড়া নেবেন তাকেই করতে হবে
  • উড্ডয়নের ২৪ ঘণ্টা আগে যাত্রীর তথ্য সহ সিভিল এভিয়েশনের কাছে অপারেটররা আবেদন করবে।

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স (Air ambulance) সেবা

আধুনিক চিকৎসা সরজ্ঞাম ও প্রশিক্ষন প্রাপ্ত মেডিকেল টিম দ্বারা সুসজ্জিত বিমান অথবা হেলিকপ্টার যা জরুরী অবস্থায় স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য অথবা রোগী স্থানান্তরের জন্য ব্যবহৃত হয় তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বলে।

বাংলাদেশে থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন জরুরীভিত্তিতে বিদেশে রোগী স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় তখন এয়ার অ্যাম্বুলেন্স হিসাবে মেডিকেল এয়ারক্রাফ্ট বা বিমান ব্যবহার করা হয়।

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স
এয়ার অ্যাম্বুলেন্স , R&R Aviation.

আর দেশে অভ্যন্তরে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রোগী পরিবহন করতে এবং দুর্ঘটনাস্থান থেকে দ্রুত চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য আহতদের হাসপাতালে আনতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স হিসাবে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়।

আসুন এয়ার এম্বুলেন্সের যাবতীয় বিষয়গুলো আমরা সংক্ষিপ্ত আকারে আলাচনার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করি।

ইমারজেন্সি মেডিকেল সার্ভিস (এয়ার)

বৃদ্ধ, অসুস্থ এবং আহত রোগীদের হেলিকপ্টার ও এয়ারক্রাফ্ট ব্যবহার করে দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিকভাবে জরুরী চিকিৎসা পরিষেবা সরবরাহ করার ব্যবস্থা রয়েছে। সম্ভাব্য সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করার জন্য এখানে রয়েছে ডাক্তার এবং নার্স যারা জরুরী স্বাস্থ সেবা প্রদান করার জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত এবং এয়ার এম্বুলেন্সে সেবা দেওয়ার জন্য অত্যন্ত অভিজ্ঞ।

ইমারজেন্সি এয়ার মেডিকেল সার্ভিসে হাসপাতালে ভর্তি করা থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট সহ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শের ব্যবস্থাও রয়েছে। পুরোপুরি চলাচল করতে সক্ষম ব্যক্তি থেকে শুরু করে যারা নিজের যত্ন নিতে অক্ষম তাদের সকলের জন্য এয়ার এম্বুলেন্স ব্যবহার কে সহজ করতে রয়েছে সব ধরনের প্রচেষ্টা।

এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের (Air ambulance) জরুরী সরঞ্জাম

জরুরী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সাথে অবস্থানকারী টিমের কাছে গুরুতর আহত বা অসুস্থ রোগীকে জরুরী লাইফ সাপোর্ট প্রদান করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়। যেগুলোর মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে রোগীকে সংশ্লিষ্ঠ হাসপাতালে পৌছানো সম্ভব।

যে সকল সরঞ্জাম এয়ার অ্যাম্বুলেন্স থাকে তার মধ্যে ভেন্টিলেটর ইউনিট, ওষুধ, ইসিজি ডিভাইস, মনিটরিং ইউনিট, সিপিআর সরঞ্জাম এবং স্ট্রেচার উল্লেখযোগ্য।

ইমারজেন্সি এয়ার মেডিকেল সার্ভিসের অন্তর্ভুক্ত সেবা

  • ভেন্টিলেশন
  • আন্তর্জাতিক মানের স্ট্রেচার সেবা
  • প্যারালাইজড রোগীদের উত্তলন ও স্থানান্তর সেবা
  • জটিল পরিস্থিতিতে বহুজাতিক মেডিকেল দল গঠন স্থানান্তর
  • মেডিকেল ক্লিয়ারেন্সের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়
  • বেডসাইড থেকে বেডসাইড সেবা

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স (Air ambulance) ব্যবহারে খরচ ও শর্ত

আর্ন্তজাতিক এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন রুটে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু রয়েছে। আর্ন্তজাতিক রুটের জন্য এয়ারক্রাফ্ট এবং অভ্যন্তরীন রুটের জন্য হেলিকপ্টার দ্বারা জরুরী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সেবা পরিচালনা করা হয়। নিচে পর্যায়ক্রমে আনুমানিক খরচের তারিকা দেওয়া হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ রুটে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স (হেলিকপ্টার) সেবার খরচঃ

অভ্যন্তরীণ রুট খরচ (আনুমনিক)
বরিশাল থেকে ঢাকা এয়ারপোর্ট ১,৫৫,০০০/=
বগুড়া থেকে ঢাকা এয়ারপোর্ট ১,৬৫,০০০/=
চট্রগ্রাম থেকে ঢাকা এয়ারপোর্ট ২,২০,০০০/=
ফরিদপুর থেকে ঢাকা এয়ারপোর্ট ১,২৫,০০০/=
যশোর থেকে ঢাকা এয়ারপোর্ট ১,৬৫,০০০/=
খুলনা থেকে ঢাকা এয়ারপোর্ট ১,৬৫,০০০/=
কুষ্টিয়া থেকে ঢাকা এয়ারপোর্ট ১,৬৫,০০০/=
ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা এয়ারপোর্ট ১,২৫,০০০/=
পিরোজপুর থেকে ঢাকা এয়ারপোর্ট ১,৭৫,০০০/=
দিনাজপুর থেকে ঢাকা এয়ারপোর্ট ২,৯৫,০০০/=

অভ্যন্তরীণ রুটে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স (হেলিকপ্টার) ব্যবহারে শর্তসমুহঃ

  • এয়ারপোর্ট থেকে হাসপাতালে পৌছাতে আইসিইউ সাপোর্ট সম্বলিত অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা হবে।
  • রোগীর সাথে সর্বোচ্চ দুজন এটেনডেন্ট এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ভ্রমণ করতে পারবেন।
  • আবহাওয়া ও দুরত্বের উপর নির্ভর করে ভাড়া কম বা বেশি হতে পারে।
  • এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রোগী সহ অথবা রোগী ছাড়া অবশ্যই সুর্যাস্তের আগে গন্তব্যে পৌছুতে হবে।
  • রোগী গ্রহণ করার সময় হেলিকপ্টারের ইঞ্জিন বন্ধ হবে না।
  • রোগীর পক্ষ থেকে হেলিকপ্টারের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অবতরনের অনুমতি নিশ্চিত করতে হবে।

আর্ন্তজাতিক রুটে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স (এয়ারক্রাফ্ট) সেবার খরচঃ

আর্ন্তজাতিক রুট খরচ (আনুমনিক)
ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুর ৩৪,০০,০০০/=
চট্রগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর ৩৪,০০,০০০/=
ঢাকা থেকে দিল্লি, ইন্ডিয়া ২৫,৬৫,০০০/=
ঢাকা থেকে চেন্নাই, ইন্ডিয়া ২৯,৭৫,০০০/=
ঢাকা থেকে কোলকাতা, ইন্ডিয়া ২১,০০,০০০/=
ঢাকা থেকে ব্যাংকক, থাইল্যান্ড ২৫,৫০,০০০/=

আর্ন্তজাতিক রুটে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স (এয়ারক্রাফ্ট) ব্যবহারে শর্তসমুহঃ

  • এয়ারপোর্ট থেকে হাসপাতালে পৌছাতে আইসিইউ সাপোর্ট সম্বলিত অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা হবে।
  • বৈধ পাসপোর্ট (অবশ্যই ৬ মাসের উপরে মেয়াদ থাকতে হবে)।
  • ভিসা কপি।
  • ডাক্তার কর্তৃক প্রদান করা রোগীর কেইস হিস্ট্রি
  • যে হাসপাতালে এডমিট হবেন সেখানকার বুকিং কনফারমেশন।
  • স্থানীয় যে ডাক্তারের তত্বাবধানে ছিলেন তার কনটাক্ট নাম্বার।
  • পারমিশনের জন্য নুন্যতম ৮ ঘন্টা সময়।
  • অ্যাম্বুলেন্স অথবা কারের নাম্বার
  • ড্রাইভারের নাম ও মোবাইল নাম্বার
  • এটেনডেন্টের নাম, পাসপোর্ট ও মোবাইল নাম্বার।

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স (Air ambulance) ও হেলিকপ্টার সেবা পাবেন যেখানে

বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা বানিজ্যিক ভাবে হেলিকপ্টার ভাড়া দেওয়া সহ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করে চলেছেন। আপনার জরুরী মুহুর্তে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সেবা পেতে অথবা বানিজ্যিকভাবে হেলিকপ্টার ভাড়া নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুন নিচে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে।

R&R aviation
Sikder Aviation Hangar
Hazrat Shahjalal International Airport
Kurmitola, Dhaka 1206 Banagladesh
Phone : +88-2-8901725
Hot line : 13604, +88-017-740-86600
Email : [email protected], [email protected]

Meghna Aviation Limited
Fresh Villa
House # 15, Road # 34, Gulshan-1
Dhaka-1212, Bangladesh
Phone : +880-9666777055
Email: [email protected]

Square Air Ltd
Square Air Hangar (General Aviation Area)
Hazrat Shahjalal International Airport
Kurmitola Dhaka-1229, Bangladesh.
Phone: 88-02-8901374, 01713185352
E-mail: [email protected]

Impress Aviation Limited
40 Shahid Tajuddin Ahmed Sarani
Tejgaon I/A, Dhaka-1208, Bangladesh
Tel: 01729254995, 01729254996, 01729254997

South Asian Airlines Limited (SAAL)
Hangar Complex, General Aviation Area,
Hazrat Shahjalal International Airport, Kurmitola,
Dhaka-1229, Bangladesh.
Phone: +88-02-8872150
E-mail: [email protected]

Partex Aviation
General Aviation Area
Hazrat Shahjalal International Airport
Kurmitola, Dhaka 1229, Bangladesh.
Email : [email protected]
Call: +88-017-666-64400, +88-017-300-61703

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com