বিশ্বের সবচেয়ে বড় শহরের হিসাব দুইভাবে হতে পারে। আয়তনের দিক থেকে ও জনসংখ্যার দিক থেকে। আমরা আজ জনসংখ্যার দিক থেকে বড় শহর নিয়ে আলোচনা করব।
বর্তমানে পৃথিবীতে ৮০০ কোটির বেশি মানুষ বাস করে। এর মধ্যে শহরে বাস করে ৫৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে ২০২৩ সালের মধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষ শহরবাসী হবে। তাই চলো জানা যাক, বিশ্বের কোন ১০ শহরে সবচেয়ে বেশি মানুষ বাস করে।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষ বাস করে জাপানের টোকিও শহরে। এখানে আছে প্রায় ৩ কোটি ৭২ লাখ মানুষ। জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকেও টোকিও শহর সব শহরের ওপরে। তবে এই শহরের জনসংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে। ২০১৮-১৯ সালের মধ্যে জনসংখ্যা কমেছে ০ দশমিক ০৯ শতাংশ এবং ২০২১-২২ সালের মধ্যে কমেছে ০ দশমিক ১৮ শতাংশ।
দিল্লি শহরে ৩ কোটি ২৯ লাখ মানুষ বাস করে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এই শহরের জনসংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। ২০২৮ সালের মধ্যে দিল্লিতে বসবাস করতে পারে ৫ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শহরের জনসংখ্যা ২ কোটি ৯২ লাখ। কিন্তু এই শহরের জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২০১৮ সাল থেকে এই শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ হয়েছে। আগামী ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে সাইংহাই বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহরে পরিণত হতে পারে। কারণ সাংহাই চীনের বাণিজ্যিক পাওয়ার হাউস হিসেবে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রবন্দরগুলোর মধ্যে একটা যে এই শহরে অবস্থিত।
বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যস্ত শহর ঢাকা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম শহর। এখানে ২ কোটি ৩২ লাখ মানুষ বাস করে। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা অন্যতম। রাজধানীতে মানুষের বসবাসের সংখ্যাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। ২০১৮ সালেও ঢাকা ছিল এই তালিকার ৭ নম্বরে। ৬ বছরের ব্যবধানে এখন ৪ নম্বরে চলে এসেছে। ঢাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৩ শতাংশেরও বেশি। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানষ ঢাকামুখী হয়েছে।
২ কোটি ২৬ লাখ মানুষ নিয়ে ব্রাজিলের বুকে দাঁড়িয়ে আছে সাও পাওলো। ব্রাজিলের সবচেয়ে জনবহুল শহর এটি। শহরটির অবস্থান ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্বে। বাণিজ্যিক শিল্প কেন্দ্র হিসেবে এ শহরের সুনাম রয়েছে।
১৯৫০ সালের পর থেকে মেক্সিকো সিটির জনসংখ্যা বেড়েছে ৫৪০ শতাংশের বেশি। এখানে প্রায় ২ কোটি ২৩ লাখ মানুষ বাস করে। তবে দুঃজনক হলেও সত্যি, এত এত মানুষের শহরটি হয়তো একসময় ডুবে যাবে। ১৯ শতকে এই শহরটি আনুমানিক ২৯ থেকে ৩৬ ফুট পানির নিচে ডুবে গিয়েছিল। এখনো শহরের কিছু অংশ প্রায় ১৯ ইঞ্চি পানির নিচে ঢুবে রয়েছে।
বিশ্বের প্রাচীনতম রাজধানীর মধ্যে কায়রো অন্যতম। এই প্রাচীন শহরে এখনো ২ কোটি ২২ লাখ মানুষ বাস করে। তবে মিসর শহরের জনসংখ্যাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে কায়রো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে দারুণ সাফল্য লাভ করবে। এই শহরে মরুভূমি থাকা সত্ত্বেও উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের ব্যবসা–বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এই শহরেই রয়েছে পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি—গিজার পিরামিড। প্রতিবছর বহু মানুষ এ শহরে আসে এই পিরামিড দেখতে।
কিছুদিন আগেও বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ছিল চীন। প্রায় ১৪০ কোটি মানুষ দেশটিতে বাস করে। আর চীনের রাজধানী হলো বেইজিং। এখানে প্রায় ২ কোটি ১৮ লাখ মানুষ বাস করে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সাল থেকে বেইজিংয়ের জনসংখ্যা বাড়ছে। তাদের মতে, ২০৩৫ সাল পর্যন্ত এ শহরের জনসংখ্যা বাড়তে থাকবে।
বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ ভারত। চীনকে ছাড়িয়ে ভারত এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশে পরিণত হয়েছে। সেই ভারতের শহর মুম্বাই রয়েছে এই তালিকার নবম স্থানে। ২ কোটি ১৩ লাখ মানুষের বাস এখানে। ভবিষ্যতে এই জনসংখ্যা আরও বাড়বে। ভারতীয় চলচ্চিত্র বলিউডের প্রাণকেন্দ্রে এই মুম্বাই। প্রতিবছর এক হাজারের বেশি মুভি তৈরি হয় বলিউডে। ফলে এমন শহরে মানুষের বসবাস বেড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক।
১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ নিয়ে বিশ্বের দশম বৃহত্তম জনবহুল শহর জাপানের ওসাকা। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০৩৫ সালের মধ্যে এই শহরের জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে। কারণ, বহিরাগতরা শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে। জাপানি সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এই ওসাকা শহর। তা ছাড়া জাপানের সবচেয়ে প্রাচীনতম জায়গাগুলোর মধ্যে ওসাকা দুর্গ একটি। এটিও রয়েছে এই শহরে।
সূত্র: হাউ স্টাফ ওয়ার্কস